বিরোধী নির্বাচনী জোট গঠনের সভায় পুলিশের বাধা

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.07.14
ঢাকা
 উত্তরায় জেএসডি নেতা আ স ম আব্দুর রবের বাসায় বৈঠক শেষে বের হয়ে আসছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতা। উত্তরায় জেএসডি নেতা আ স ম আব্দুর রবের বাসায় বৈঠক শেষে বের হয়ে আসছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতা। জুলাই ১৩, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

আগামী একাদশ সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার-বিরোধী একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আয়োজিত একটি ঘরোয়া সভায় পুলিশ বাধা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ছয়টি ছোট রাজনৈতিক দল ও একটি সুশীল সমাজের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী জোট গঠনের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) সভাপতি আ স ম রবের ঢাকার উত্তরার বাসায় মিলিত হন।

সভা করার পূর্বানুমতি নেই বলে পুলিশ রবের বাসার ড্রয়িং রুমে ঢুকে পড়ে এবং সভায় উপস্থিত কয়েকজন নেতৃবৃন্দকে চলে যেতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, বিরোধী নেতারা ‘চক্রান্ত’ করতে বসেছিলেন; তাই পুলিশি বাধা ঠিকই আছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধী দলের ঘরোয়া সভা পণ্ড করে সরকার গণতান্ত্রিক আচরণ করেনি।

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ নিয়ে ছোট–বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দৌড়ঝাঁপ চলছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব), সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (খালেক), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক নেতৃবৃন্দ রবের বাসায় একত্রিত হন বলে বেনারকে জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের দিকে তিনিসহ সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার প্রধান ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্না ও অন্যান্য দলের নেৃতৃবৃন্দ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) সভাপতি আ স ম রবের উত্তরার বাসায় একটি ঘরোয়া রাজনৈতিক আলোচনা ও নৈশভোজে অংশ নেওয়ার জন্য একত্রিত হন।

“আমরা উপস্থিত হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে এসআই পদমর্যাদার একজন পুলিশ এসে বাসার ড্রয়িং রুমে ঢুকে পড়ে এবং বলে আমাদের রাজনৈতিক মিটিং করার অনুমতি আছে কি না। আমরা বললাম, আমরা ড্রয়িং রুমে বসে আলোচনা করব, খাওয়া-দাওয়া করব—এজন্য পুলিশের পারমিশন লাগবে? এ কথা বলার পর সে চলে গেল,” বলেন সাইফুল হক।

“কিছুক্ষণ পর সে আবার আসল; এবার সে অ্যাগ্রেসিভ ভাবে কথা বলা শুরু করল। বলল, আমরা এখানে বসতে পারব না; পুলিশের অনুমতি নাই। আমরা প্রতিবাদ করলাম, কিন্তু সে অনড়। প্রতিবাদে কাদের সিদ্দিকী, বদিউল আলম মজুমদার ও অনেকে চলে যান,” তিনি বলেন।

সাইফুল হক আরো বলেন, “আমরা কয়েকজন সেখানে যতক্ষণ ছিলাম ততক্ষণ বাসার সামনে পুলিশ ছিল। সাদা পোশাকের বেশ কিছু পুলিশও বাসার আশেপাশে অবস্থান নেয়। আমরা সেখানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম।

মাহমুদুর রহমান মান্না শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, আ স ম রবের বাসায় তারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি বিকল্প রাজনৈতিক জোট করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন।

“পুলিশ পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো সরকার চায় যেন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো বিরোধী দল বা জোট একত্রিত হতে না পারে। আমাদের ঘরে ঢুকে বাধা দিয়ে সরকার অন্যদের এই মেসেজ দিলো যে ২০১৯ সালে নির্বাচনের আগে আর কেউ যেন রাজনৈতিকভাবে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা না করে,” সাইফুল হক বলেন।

তিনি বলেন, সরকার আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রচণ্ড নার্ভাস এবং তারা এখন গাছের পাতা পড়ার শব্দেও ভয় পায়।

গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত চৌধুরী ও আ ও ম শফিউল্লাহ, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ও বজলুর রশীদ ফিরোজ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীর পাশাপাশি নাগরিক সংগঠন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারও ওই বাসায় ছিলেন বলে তিনি জানান।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “তারা ওখানে বসেছিলেন আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে। চারদিকে সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। ফরহাদ মজহার নিজে নিজে বাসা থেকে বের হয়ে অপহরণের দোষ চাপাচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। তাই পুলিশ সেখানে গিয়ে ঠিক কাজ করেছে।”

পুলিশের নজর রাখতে হবে কোথায় কী হচ্ছে, বলেন খালিদ।

পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “দেখুন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মিটিং, মিছিল, সভা-সমিতি করা জনগণের মৌলিক অধিকার। রাজনীতিকেরা যদি রাজনৈতিক আলোচনা করেন তাতে অসুবিধা কোথায়?"

“পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে ঠিক কাজ করেনি; পুলিশ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়,” তিনি বলেন।

তবে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তার জন্য টহল পুলিশ ওই বাসার সামনে গিয়েছিল। বাড়ির ভেতরে রাজনৈতিক নেতারা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। বৈঠকের খবর পেয়ে পুলিশ ছাড়াও সাংবাদিক ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বাড়ির সামনে উপস্থিত হন। তিনি দাবি করেন, পুলিশ সেখানে কোনো বাড়াবাড়ি করেনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।