৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে দেশে ফেরত পাঠাবে ভারত

আকাশ বশিষ্ঠ
2017.08.14
নয়াদিল্লি
ভারতের জম্মু সীমান্তের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহ করছেন জাতিসংঘের এক ত্রাণকর্মী। ভারতের জম্মু সীমান্তের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহ করছেন জাতিসংঘের এক ত্রাণকর্মী। জুন ২০, ২০১৭।
AFP

ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রায় চল্লিশ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত।

“বিষয়টি নিয়ে এক্সটার্নাল এফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ে (এমইএ) কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে রাজ্যগুলোতে একটি নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে,” সোমবার বেনারকে বলেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেএস ধাতওয়ালিয়া।

গত সপ্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সবগুলো রাজ্য সরকারকে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করতে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়, “এই অবৈধ অভিবাসীরা শুধু ভারতীয়দের নাগরিক অধিকারেই ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে না বরং, এদের কারো কারো জন্য দেশের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ছে। জঙ্গি সংগঠনগুলোতে সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ভারতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুধু দেশের সীমিত সম্পদের ওপর বাড়তি চাপই নয়, বরং তা দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপরও চাপ তৈরি করে চলেছে।”

“এমতাবস্থায় সকল রাজ্য ও প্রশাসনিক অঞ্চলকে অনতিবিলম্বে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূকে নিয়োজিত করে সকল অবৈধ নাগরিককে চিহ্নিত ও ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে,” জানানো হয় ওই নির্দেশনায়।

এদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা

গত অক্টোবরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের প্রেক্ষিতে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সেনাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেবার অভিযোগ করলেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বরাবর এই অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে।

বিশ্বের সব চেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর অন্যতম রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার সরকার সে দেশের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। বরং দেশটির কর্মকর্তারা প্রায় সময়ই রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ অভিহিত করে থাকেন।

আশ্রয়ের নিশ্চয়তা নেই

অন্যান্য দেশে সংঘাতের প্রেক্ষিতে ভারতে আশ্রয় নেওয়া দুই লক্ষের বেশি বিদেশির মধ্যে রোহিঙ্গারা অন্যতম। তবে এসব আশ্রয়প্রার্থীদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেবার জন্য ভারতে কোনো আইনগত সমর্থন নেই।

“সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক সভায় পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।,” বেনারকে বলেন এমইএ এর মুখপাত্র আবু মাথেন জর্জ।

তবে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে ভারতের সাথে কোনো ধরনের আলোচনার বিষয় অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক।

“আমরা বাংলাদেশ থেকে সব রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো বিষয়ে মিয়ানমারের কাছ থেকে একটি প্রস্তাবনা পেয়েছি। তবে আমি নিশ্চিত না যে এতে ভারত যুক্ত কি না। আমরা এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ভারতের কাছ থেকে কোনো প্রস্তাব পাইনি,” বেনারকে জানান শহিদুল হক।

শরণার্থী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির এর মতে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক আলোচনাই হলো এ বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানের একমাত্র উপায়।

“বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। সুতরাং বাংলাদেশ ও ভারতের উচিত একসাথে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা,” বেনারকে বলেন আসিফ মুনির।

তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে অবশ্যই একটি ত্রিপাক্ষিক আলোচনা প্রয়োজন। একমাত্র এ ধরনের আলোচানই সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে বের করতে পারে।”

জাতিসংঘে নিবন্ধিত ১৬,৫০০

ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৬,৫০০ জনের মতো জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর তালিকাভুক্ত।

জানতে চাইলে ইউএনএইচসিআর এর দিল্লি অফিস থেকে বেনারকে ইমেইল বার্তায় জানানো হয়, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ইউএনএইচসিআর এর সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।”

এই বার্তায় বলা হয়, “সাধারণ নীতিমালা হলো, শরণার্থীদের এমন কোনো স্থানে না পাঠানো যেখানে তাঁদের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। এটি প্রথাগত আর্ন্তজাতিক আইনের অংশ হিসেবে গণ্য, ফলে তা আন্তর্জাতিক শরণার্থী সনদে স্বাক্ষর করা না করা সকল দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।”

তবে অবৈধ অভিবাসীদের ইউএনএইচসিআর এর রেজিস্ট্রেশন অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু।

“তারা কাজটি করছে; আমরা তাদেরকে রেজিস্ট্রেশন করতে বাধা দিতে পারি না। কিন্তু আমরা শরণার্থী বিষয়ক সনদে স্বাক্ষরকারী নই। আমাদের বিবেচনার বিষয় হলো, তারা অবৈধ অভিবাসী। এখানে বসবাস করার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি তাদের নেই। সব ধরনের অবৈধ অভিবাসীকেই আমরা ফেরত পাঠাব,” বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন রিজিজু।

এদিকে ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা ফেরত পাঠানোর আশঙ্কায় আছেন বলে জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে দিল্লি কেন্দ্রিক রোহিঙ্গা শরণার্থী এসোসিয়েশনের মোহাম্মদ সালিম বেনারকে বলেন, “এমন এক মুর্হূতে আমরা ফেরত পাঠানোর ভয়ে আছি, যখন মিয়ানমারের পরিস্থিতি আমাদের জন্য খুবই ভয়াবহ।”

“বাংলাদেশেও তাই, আমাদের জন্য সেখানে বড়ো সমস্যা হলো ১৯৮০ সাল থেকে চল্লিশ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সেখানে বসবাস করছে। তার ওপর ওটি একটি ছোট দেশ, প্রায় সময়ই সেখানে স্থানীয়দের সাথে রোহিঙ্গাদের সংঘাতও ঘটে,” বেনারকে বলেন রাখাইন রাজ্য থেকে ২০১২ সালে ভারতে পাড়ি দেওয়া সালিম।

ভারত সরকারের সিন্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাতে এ সপ্তায় রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ভারতে জাতিসংঘ মিশনের প্রধানের সাথে আলোচনায় বসার চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “আমাদের যদি ফেরত পাঠানো হয়, তবে আমরা ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ করব যেন, সেখানে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।”

তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।