বিতর্কিত জাকির নায়েকের সন্ধানে ইন্টারপোলের সহায়তা নেবে ভারত

প্রভাত শরণ
2017.10.27
মুম্বাই
মুম্বাইতে ভারতীয় সাংবাদিকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছেন বিতর্কিত ইসলাম ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েক। মুম্বাইতে ভারতীয় সাংবাদিকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছেন বিতর্কিত ইসলাম ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েক। ১৫ জুলাই ২০১৬।
AP

বিতর্কিত ইসলাম প্রচারক জাকির নায়েকের সন্ধান পেতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। তার উসকানিমূলক বক্তব্য গত বছর বাংলাদেশের একটি রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের উদ্বুদ্ধ করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

দেশটির শীর্ষ কাউন্টার টেররিজম সংস্থা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনার একদিন পর একজন কর্মকর্তা ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের একটি আদালতে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। সেখানে বলা হয়, সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রশংসা করে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ও ঘৃণা ছড়ানোর অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে টিভি ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েক জড়িত ছিলেন।

৬১ পৃষ্ঠার ওই অভিযোগপত্রটি বেনার নিউজের কাছে রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নায়েক তার সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মুম্বাই-ভিত্তিক এনজিও ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) এবং তার প্রতিষ্ঠান হারমনি মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডকে ব্যবহার করতেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনআইএ এর একজন কর্মকর্তা বেনারনিউজকে বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে জাকির নায়েককে ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত করছি।” তিনি বলেন, গত জুন মাসে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া জাকির নায়েক সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার মধ্যবর্তী কোথাও আছেন বলে তাঁরা মনে করছেন।

গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে রক্তক্ষয়ী হামলায় ২০ জনকে জিম্মি করে হত্যা করা হয়। হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দুজন ৫১ বছর বয়সী জাকির নায়েকের ধর্মোপদেশ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন বলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপরই ভারতীয় সরকারের নজরে আসেন জাকির নায়েক।

এপ্রিলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

নিজের এনজিওতে আসা বিদেশি তহবিলের অপব্যবহারের অভিযোগের উত্তর দিতে ভারত সরকারের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের সমন বারবার উপেক্ষা করছিলেন জাকির নায়েক। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিল মাসে মুম্বাই আদালতে নায়েকের বিরুদ্ধে একটি তথাকথিত অ-জামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (এনবিডব্লিউ) জারি করে।

ফরেন কনট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট (এফসিআরএ) এবং বেআইনি ক্রিয়াকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে গত বছরের নভেম্বরে ভারত সরকার আইআরএফের ওপর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

সরকারি কৌসুলি হিতেন ভেনগাঁওকার বেনার নিউজকে বলেন, “এনআইএ–এর তদন্তের পর জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে মানি-লন্ডারিং মামলা হয়। এরপর সংস্থাটির চার্জশিট দাখিলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল।” তিনি বলেন, এনআইএর চার্জশিটটি সংস্থাটিকে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দেবে। তারপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাকিরকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।

এনআইএ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে পিস টিভিতে দেওয়া তার বক্তব্যে নিহত আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের প্রশংসা করা, আত্মঘাতী হামলাকে সমর্থন করা, আত্মসমর্পণকারী হামলার সমর্থন করা এবং হিন্দু দেবতাদের নিন্দা করার অভিযোগ এনেছে। আইআরএফ এর আংশিক অর্থায়নে চলা পিস টিভির প্রচার এরই মধ্যে ভারত, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সিডি, ডিভিডি এবং ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষকে বিপথগামী করার মতো বক্তব্য প্রচার করার কথা এনআইএ শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

আইআরএফ এর ট্রাস্টি বোর্ডের সভার নথি থেকে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটি জাকির নায়েকের বক্তৃতা আয়োজন, সংগঠন এবং প্রচারে কাজ করত। এসব বক্তব্যে উসকানিমূলক কথাবার্তা থাকত। যেসব ডিভিডি এবং বই জব্দ করা হয়েছে সেগুলোতেও আইআরএফ প্রকাশক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংস্থাটি বলেছে যে, প্রতিষ্ঠানটি জাকির নায়েকের উসকানিমূলক বক্তব্য ঘষামাজা করার জন্য এইচএমপিএল এর ভূমিকা পালন করে তার বক্তব্য পিস টিভিতে প্রচার করার জন্য গ্লোবাল ব্রডকাস্ট করপোরেশন দুবাইয়ে পাঠাত।

অভিযোগপত্রে এনআইএ বলেছে, “অপমানজনক এবং বিদ্বেষমূলক মন্তব্যগুলি কেবল হিন্দু বা খ্রিস্টানদের আস্থা ও বিশ্বাসকে আঘাত করত এমন না, এসব বক্তব্য অ-ওয়াহাবি মুসলমানদের বিশেষত শিয়া, সুফিদেরও আঘাত করত।”

জাকির নায়েকের বক্তব্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এমন বেশ কিছু তরুণের উদাহরণ অভিযোগপত্রে দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, জাকির নায়েক তার বক্তব্যে যেসব দিকে আলোকপাত করতেন সেসব বিষয়ে কখনই অন্যান্য মুসলিম পণ্ডিতদের ব্যাখ্যা তুলে ধরতেন না। এমনকি তিনি নিজের বক্তব্যের সপক্ষেও পর্যাপ্ত প্রসঙ্গ টানতেন না।

দেশে প্রত্যাবর্তনের দাবি চ্যালেঞ্জ করবেন আইনজীবী

অভিযোগপত্রের একটি অনুলিপি পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন উল্লেখ করে জাকির নায়েকের আইনজীবী এস হরিহরান বেনারকে বলেন, “আমি এখনো চার্জশিট পাইনি। যদিও প্রোটোকল অনুযায়ী অভিযুক্তের কাছে চার্জশিট দেওয়া হয়। কিন্তু এই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি দেশে উপস্থিত নয়।”

তবে হরিহরান বেনারের কাছে জাকির নায়েক কোথায় অবস্থান করছেন সে বিষয়টি প্রকাশ করেনি। তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগপত্র পাওয়ার পর অবশ্যই অভিযোগ থেকে মুক্তির আবেদন করব এবং তাঁর প্রত্যাবর্তনের যেসব দাবি তুলে ধরা হয়েছে তা চ্যালেঞ্জ করব।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।