আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি ও বর্নাঢ্য আয়োজন
2016.10.21
ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুদিনব্যাপি ২০তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন শুরু হবে শনিবার, যা নিয়ে দেশের লাখ লাখ নেতা–কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এবারের সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসার বিষয়টি জোরেসোরে আলোচনা হচ্ছে।
সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সভাপতি হিসেবে তিনি যে আবার দায়িত্ব নিচ্ছেন তা নিয়ে দলের কোনো পর্যায়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই।
এবারের সম্মেলন উপলক্ষে বিশেষভাবে আলোচনা হচ্ছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম, যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রীর পূত্র। তিনি দলের কোন পদে আসছেন, তা নিয়ে জল্পনা–কল্পনা চলছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদেও রদবদল আসবে, যা পেতে শেষ মুহুর্তে দৌড়ঝাঁপ চলছে নেতাদের মধ্যে।
দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পরিবর্তে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে পক্ষে–বিপক্ষে মত আছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শুক্রবার রাতে এক অনুষ্ঠানে অবশ্য বলেছেন, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কাউন্সিলরেরা নেতৃত্ব ঠিক করবেন। তার আগে যেসব জল্পনা–কল্পনা চলছে তা ভুয়া প্রমাণ হবে।
এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’।
আগের সম্মেলনগুলোর চেয়ে এবারের সম্মেলন অনেক বেশি জাঁকজমকপূর্ণ করা হচ্ছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি–জামায়াত জোটকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ, আলোচনা–সমালোচনার মধ্য দিয়ে দলটি সেই পথ চলা অব্যহত রেখেছে।
সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকা শহর যেন ঝলমল করছে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, প্রবেশ পথ এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা সেজেছে নানা রঙের বাতি আর পোস্টার-ব্যানারে। বর্ণিল এই আয়োজনে সারাদেশ থেকে ৬ হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর অংশ নেবেন।
যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১১টি দেশের অর্ধশতাধিক অতিথি যোগ দিচ্ছেন এই সম্মেলনে। গতকাল শুক্রবার বিদেশি অতিথিদের অনেকেই ঢাকায় পৌঁছেছেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাদের বসার জন্য স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন নৌকা আকৃতির বিরাট মঞ্চ। ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬৫ ফুট প্রস্থের এই মঞ্চে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল প্রদর্শনী।
“ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্মেলনস্থলে উপস্থাপন করা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ এবং সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের চিত্র,” বেনারকে জানান সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক উপকমিটির সদস্যসচিব বাহাউদ্দিন নাছিম।
মঞ্চের দু’পাশে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুসহ প্রয়াত জাতীয় নেতাদের প্রতিকৃতি। বিভিন্ন প্রবেশপথ থেকে সম্মেলনস্থল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিভিন্ন অর্জনের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা লন্ডনে অবস্থান করায় তিনি সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না।
নির্মাণকাজে যুক্ত কর্মীরা বলেন, মূল মঞ্চ হয়েছে পাঁচ স্তরের। একেবারে সামনের অংশটির উচ্চতা হবে আড়াই ফুট। যেখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হবে।
সাত ফুট উচ্চতার স্থানটিতে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বসবেন। আর পেছনের বিভিন্ন উচ্চতার তিন সারিতে কেন্দ্রীয় নেতারাসহ ৫৮ জনের বসার স্থান করা হয়েছে। মঞ্চের সামনে বিশাল প্যান্ডেলের ভেতর রাখা হয়েছে ২০ হাজার চেয়ার।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শতাধিক কারিগর মঞ্চ তৈরির কাজ করেছেন। চারুকলার প্রায় দেড় ডজন ছাত্র সুদৃশ্য এই মঞ্চ নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন হবে দ্বিতীয় দিন রোববার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। ওই অধিবেশনে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচন করা হবে।
সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের ফটক। নিউজরুম ফটো।
বিদেশি যেসব অতিথি যোগ দিচ্ছেন
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি থাকছেন ২৫ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সহসভাপতি সাংসদ বিনয় প্রভাকর ও সাংসদ অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলি, জাতীয় কংগ্রেসের নেতা ও রাজ্যসভায় বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম নবী আজাদ, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, মৌসুম নূর ও অভিজিৎ মুখার্জি, কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য বিমান বসু, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি, ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত বিশ্বাস, ত্রিপুরা বিজেপির সভাপতি বিপ্লব কর দেব, আসাম ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সর্বভারতীয় ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর তপাদার, আসাম গণপরিষদের নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত, মণিপুর পিপলস পার্টির সভাপতি নংমেইকাপম শোভা কিরণ সিং, মেঘালয়ের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির সাংসদ মজিদ মেমন, মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জরামথাংগা।
চীন থেকে এসেছেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার ঝেং জিয়াওসং, ডিরেক্টর জেনারেল ইয়ান ঝিবিন, ডেপুটি ডিরেক্টর জিয়া পেং ডি, কাও ঝিগাং এবং গাও মিন। কানাডা থেকে এসেছেন রক্ষণশীল দলের নেতা দীপক ওভরাই।
যুক্তরাজ্যের অতিথিরা হলেন ওয়েলসের জেনি রাথবোন এবং কার্ডিফের দিলওয়ার আলী, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়ালেসের হিউ ম্যাকডারমট ও লেবার পার্টির মানিনদেরজিৎ সিং। ইতালির ডেমোক্রেটিক পার্টির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য ইউগো পাপি এবং সাংসদ খালিদ চাওকি। ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী দীনা নাথ এবং দ্রুক সোগপা। অস্ট্রিয়ার মিসেস ফুকস্, ইউনাইটেড রাশিয়ার সের্গেই ঝেলেজনিয়াক, ভ্যালেরিয়া গোরোখোভা, রিপাবলিকান পার্টি অব রাশিয়ার আলেক্সান্ডার পোটাপভ।
অতিথিদের মধ্যে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা, শ্রীলঙ্কার ধর্মমন্ত্রী এ এইচ মোহাম্মদ হাশিম, আইটিএকের নেতা শান্তি শ্রীকানদারসা ও শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টির নেতা জগৎ পুস্পকুমারাসহ কয়েকজন নেতা রয়েছেন।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা
গতকাল বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিদর্শনে এসে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন এবং ঢাকা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। সম্মেলনস্থলে লাগানো হয়েছে প্রায় ১৪০টি সিসি ক্যামেরা। উদ্যানের চারপাশের রাস্তা, নগরের সব কটি প্রবেশপথ এবং অন্যান্য স্থানেও নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা।
যোগ দেবে বিএনপি
একমাত্র জামায়াতে ইসলামী বাদে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ সব দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ইতিমধ্যে সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বেনারকে বলেন, “বিএনপির সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানালেও আওয়ামী লীগ নেতারা আসেননি। কিন্তু বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক দল। এ জন্য দলের কয়েকজন নেতা সম্মেলনে যোগ দেবেন।