নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধানমন্ত্রী,রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়া

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.10.24
161024-Awami-League1000a.jpg দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান দলের নেতৃবৃন্দ। অক্টোবর ২৪, ২০১৬।
নিউজরুম ফটো

ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে চমক ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজ দলের তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন, যা বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য দলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

গত রবিবার টানা অষ্টমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। অনেক গুঞ্জন, আলোচনা ও নাটকীয়তার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রদবদল এসেছে।

সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বিদায় নিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেন রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি থাকা রাজনীতিক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। অন্যদিকে তৃণমূলে জনপ্রিয় ও মাঠঘাট ছুটে বেড়ানো নেতা ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব পেলেন।

সভাপতি নির্বাচিত হয়েই শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই মানুষের ঘরে ঘরে যেতে হবে।

“২০১৯ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন থেকে শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশের ফলে মাঠের রাজনীতি চাঙা হবে, জনমত গঠনে নেতা–কর্মীরা কাজ শুরু করবেন,” বেনারকে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, যিনি নতুন কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে বহাল আছেন।

নাসিম আরও বলেন, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতিতে যে পর্যায়ে গেছে তাতে জনগণ আগামী দিনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকেই ভোট দেবে।”

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

এদিকে দলকে আরেকবার ক্ষমতায় আনতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেয়া দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যকে গণতন্ত্রের জন্য ‘বিপজ্জনক’ মনে করছে বিএনপি।

গতকাল সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “গতকাল (আওয়ামী লীগ) সভানেত্রী যে কথাগুলো বলেছেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক কথা। এ থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে তাদের লক্ষ্য কী এবং তারা কী করতে চান?”

উল্লেখ্য, গত রোববার দলের কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা দলকে তৃতীয় দফা নির্বাচনে জয়ী হতে হবে মন্তব্য করে নেতা-কর্মীদের সে জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দেন।

কাউন্সিলের আকর্ষণ নেতা নির্বাচন

গত শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয় দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য জাতীয় সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে কাউন্সিলর ৬ হাজার ৫৭০ জন অংশ নেন।

গত রোববার ছিল নেতৃত্ব নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা। ১৪ জন সভাপতিমণ্ডলী, ৪ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়।

কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক বর্তমান (ডানে) সাধারণ সম্পাদক ছবিঃ ফোকাস বাংলা

সব মিলিয়ে ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ২১টি পদে নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।

সভাপতি নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “৩৫ বছর ধরে একটা দলের সভাপতি আমি। আপনারা আবারও আমাকে সেই কঠিন দায়িত্বই অর্পণ করেছেন এবং আমি সেটা গ্রহণও করেছি।”

২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি কখনোই চাইব না, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠুক। আমি চাই, আমাদের দল নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবারও জনগণকে সেবা করার সুযোগ লাভ করুক।”

সভাপতিমণ্ডলীতে যে ১৪ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে সাতজন আগের কমিটিতে ছিলেন। তাঁরা হলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্ল্যাহ, সাহারা খাতুন ও মোশাররফ হোসেন।

নতুন যুক্ত হয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, রমেশ চন্দ্র সেন, আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, আবদুল মান্নান খান ও পীযূষ ভট্টাচার্য।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও গবেষক ড. রওনক জাহান বেনারকে বলেন, “বর্তমান কমিটিই আগামী নির্বাচন পরিচালনা করবে। সে ক্ষেত্রে দলের এমন একজনকে বেছে নেওয়া উচিত, যাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও কর্মীদের পাশে থাকার মানসিকতা আছে।”

নতুন কমিটিকে অভিনন্দন

বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়েছে।  বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানালেও আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের কেউ যাননি।

“বিএনপি আশা করে, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কাজ করবেন,” প্রতিক্রিয়ায় জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এক অভিনন্দন বার্তায় বলেন, “শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী ও গতিশীল হবে। তাঁরা দুজন দেশে গণতান্ত্রিক ধারা বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করবেন।”

প্রস্তুতি নেওয়ার মোক্ষম সময়

১৪ দলের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “২০১৯ সালের আগে নির্বাচন হবে না, তবে মেয়াদের অর্ধেক সময় ইতিমধ্যে পার হয়েছে। তাই নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার মোক্ষম সময় এখনই।”

তাঁর মতে, প্রবীণ ও নবীন সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে কমিটি হয়েছে, তাঁদের দায়িত্ব সরকারের বিপুল সফলতা তুলে ধরা এবং সরকারের পক্ষে সারাদেশে জনমত সৃষ্টি করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, অস্তিত্বের জন্য বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। গত মার্চে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে দলের ভেতরে যেমন অস্থিরতা ছিল, তেমনি বাইরেও সমালোচনা হয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বেনারকে বলেন, “বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়।”

তাঁর মতে, ক্ষমতায় কে আসবে তা জনগণ ঠিক করবে। কিন্তু এই সরকার যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসতে চায়, এটা দুর্ভাগ্যজনক।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।