বরিশালের সন্ধ্যা নদীতে লঞ্চডুবি, নিহত ১৪

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.09.21
20160921-BD-Accident1000.jpg বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীতে লঞ্চডুবির পর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ও ডুবুরিরা উদ্ধারকর্ম চালাচ্ছে। সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬।
স্টার মেইল

দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীতে প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে এমএল ঐশী নামের যাত্রীবাহী একটি লঞ্চডুবির ঘটনায় নারী, শিশুসহ ১৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।

গতকালের এই ১৪ জনসহ দুই সপ্তাহে নৌ, সড়ক ও রেলপথে মোট নিহত হয়েছেন প্রায় তিনশ মানুষ। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে।

স্থানীয় পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘাটে ভিড়তে গেলে নদীর পাড়ের একটি বড় অংশ ভেঙে পড়লে লঞ্চটি দুর্ঘটনার কবলে পরে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের মসজিদবাড়ি গ্রামের দাসেরহাটে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

“ছোট আকারের লঞ্চটি বানারীপাড়া থেকে প্রায় ৫০ জন যাত্রী নিয়ে উজিরপুর উপজেলার হারতার দিকে যাচ্ছিল। পথে দাসেরহাট ঘাটে যাত্রী নামাতে গিয়ে তীরের কাছে ওটি ডুবে যায়,” বেনারকে জানান বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল আহসান।

মরদেহ নিখোঁজদের খোঁজে নদীপাড়ে ছুটে আসেন স্বজনেরা। সেপ্টেম্বর ২১,২০১৬। নিউজরুম ফটো

স্থানীয় একাধিক এলাকাবাসী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানান, নদীর ভাঙন ও স্রোতের টানে লঞ্চটি ডুবে যায়। বরিশাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ও ডুবুরিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজে যোগ দেন।

বুধবার রাত সাড়ে আটটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নদী থেকে নারী, শিশুসহ ১৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছেন জীবিত পাঁচজন, নিখোঁজের সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন।

“তীব্র স্রোতের কারণে সন্ধ্যা পর্যন্ত লঞ্চটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে উদ্ধারকাজ অব্যাহত আছে,” বেনারকে জানান বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শহীদুল ইসলাম।

ঈদযাত্রায় ২৬৫ জনের প্রাণহাণি

এবারের ঈদযাত্রায় সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় যত মানুষ নিহত হয়েছেন, এর প্রায় ৯৪ শতাংশই সড়কপথে মারা গেছেন। আর ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনায় মোট প্রাণ হারিয়েছেন মোট ২৬৫ জন। আহত হয়েছে ১ হাজার ১৫৩ জন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তৈরি করা সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত ৭ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ১২ দিনে সড়ক, রেল ও নৌপথে সংঘটিত দুর্ঘটনার ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে গতকালের দুর্ঘটনা যুক্ত করলে দুই সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা প্রায় দুইশ।

প্রতিবেদন অনুসারে, ঈদযাত্রার ওই ১২ দিনে ১৯৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে সড়কপথে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৪৮ জন। একই সময়ে আটটি নৌ-দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে। ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছে ৭ জন। ১০টি ট্রেন দুর্ঘটনায় ৫০ জন আহত হয়েছে।

“রেল ও নৌপথের তুলনায় সড়কপথে সারা বিশ্বেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। তবে ঈদুল আজহার সময় এবারের প্রাণহানি বেশ উদ্বেগজনক। এর জন্য সরকারের অবশ্যই বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া উচিত,” বেনারকে জানান বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন।

তিনি বলেন, চালক বেপরোয়া না হলে এবং মহাসড়কে যানবাহনের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেক কমে যাবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনার যেসব কারণের কথা উল্লেখ করেছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে; অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক অতিক্রম (ওভারটেক), সড়ক বিভাজক না থাকা, অদক্ষ চালক, চালকের বেপরোয়া মনোভাব এবং সড়কে কম গতির যানবাহনের আধিক্য।

দুর্ঘটনা কমাতে সমিতির উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হচ্ছে; মহাসড়কে দ্রুত ও ধীরগতির যানের জন্য আলাদা লেন নির্মাণ, প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির বিধান রাখা, প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।