দেশে ফিরলেন রাজ্জাক, বাড়ি ফিরে দেখবেন নতুন সন্তানের মুখ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.06.25
BD-BGB টেকনাফে ফিরে আসার পর রাজ্জাককে (ডান থেকে তৃতীয়) নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখেন বিজিবির প্রতিনিধিদল। এসময় তাঁর নাকে ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়। ২৫ জুন,২০১৫
বেনার নিউজ

মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপির হাতে অপহৃত হওয়ার আট দিন পর দেশে ফিরেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাক।
২৫ জুন মিয়ানমারের মংডুতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পতাকা বৈঠক করে রাজ্জাককে বিজিবি কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করে বিজিপি।

রাজ্জাকের মুক্তির খবরে নাটোরে তার পরিবারে শঙ্কার মেঘ কেটে গেছে। তার স্ত্রী আসমা বেগম স্বামীর কোলে নবাগত অতিথিকে তুলে দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন, যার জন্ম হয় রাজ্জাক আটক হওয়ার চার দিন পর।

“ছেলে বাড়ি ফিরলেই আকিকা করে নাতির নাম রাখব,” স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান রাজ্জাকের মা বুলবুলি বেগম।
বিকাল সোয়া ৪টার দিকে হস্তান্তরের পরপরই রাজ্জাককে পরীক্ষা করেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মেজর মো. শাহ আলম। পরে তারা স্পিড বোটে দেশের পথে রওনা হন।

“টেকনাফ স্থলবন্দরের পুলিশ ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে রাজ্জাক পৌঁছান সন্ধ্যা সোয়া ৬টায়। বর্তমানে তিনি বিজিবির টেকনাফ ক্যাম্পে রয়েছেন,” জানান বিজিবির কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার এম এম আনিসুর রহমান।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন সাংবাদিক বেনারকে জানান, “বৃষ্টির মধ্যে পায়ে হেঁটেই ঘাটে উঠে আসেন রাজ্জাক। বিজিবির পোশাকে থাকা এই সদস্যের মুখে ছিল দাড়ি, নাকে ছিল কাটা দাগ।”

বিজিপি নির্যাতন করেছে কি না জানতে চাইলে রাজ্জাক চুপ করে থাকেন। নাকের ক্ষতের বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় কেটে গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে চারটায় পিলখানায় রাজ্জাকের দেশে ফেরা উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং করেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি এ ঘটনাকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলে মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে গত কয়েকমাস ধরে প্রচণ্ড টানাপোড়েন চলছে।

এরই মধ্যে গত ১৭ জুন ভোরে বিজিবির ছয় সদস্যের একটি দল নায়েক আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে নাফ নদীতে টহল দিচ্ছিল। তাঁরা বাংলাদেশের জলসীমায় মাদক চোরাচালান সন্দেহে দুটি নৌকায় তল্লাশি করছিলেন।  

একপর্যায়ে বিজিপির সদস্যদের বহনকারী ট্রলারটি বিজিবির টহল নৌযানের কাছে এসে থামে। বিজিপির ট্রলারটিকে বাংলাদেশের জলসীমা ছেড়ে যেতে বলা হলে তাঁরা নায়েক রাজ্জাককে জোর করে ট্রলারে তুলে নেয়।

বিজিবির অন্য সদস্যরা এতে বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। এতে সিপাহি বিপ্লব কুমার গুলিবিদ্ধ হন। অবশ্য বিজিপির অভিযোগ, বিজিবির সদস্যরা মিয়ানমার সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেছিল।


রাজ্জাককে অপহরণের পর তাঁর হাতকড়া পরানো ছবি বিজিপির ফেসবুক পেজে প্রচার করা হয়। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এ ধরনের ছবি প্রচারের তীব্র নিন্দা জানায় বাংলাদেশ।

এ ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে ১৮ জুন তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাজ্জাককে ফেরত না দিয়ে উল্টো তাঁকে নির্যাতন করে রক্তাক্ত ছবি বিজিপির ওয়েবপেজে প্রকাশ করায় ১৯ জুন ফ্যাক্স ও ই মেইলে  কড়া প্রতিবাদ পাঠায় বিজিবি।

নায়েক রাজ্জাককে ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া ৫৫৫ জনকে ফেরত আনার নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছিল মিয়ানমার। নতুন এই শর্তকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে, অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি।

টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিজিপির মধ্যে ১৮ জুন যে পতাকা বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। এরপর ১৯ জুন বেলা ১২টায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম জিরো পয়েন্টে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও রাজ্জাককে ফেরত দেওয়া হয়নি।

সেদিন কক্সবাজার সেক্টরের কমান্ডার এমএম আনিসুর রহমানের কাছে মানবপাচারের শিকার ৩৭ জন বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেন মিয়ানমার ইমিগ্রেশন বিভাগ। এর আগেও গত ৮ জুন ১৫০ জনকে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনা হয়েছিল।

বিজিপির পক্ষ থেকে  সর্বশেষ শর্ত দেওয়া হয়েছিল, রাজ্জাকসহ মিয়ানমারের জলসীমায় দেশটির নৌ-বাহিনীর হাতে উদ্ধার হওয়া ৭২৭ জনের মধ্যে ৫৫৫ জনকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

কিন্তু দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে আলাপ–আলোচনার পর ২৫ জুন আবার পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিজিবির একটি প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের মংডুতে পতাকা বৈঠকে অংশ নিতে যায়।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটি দিয়ে কোস্ট গার্ডের দুটি হাইস্পিড বোটে বিজিবির প্রতিনিধিদল মংডুর উদ্দেশে রওনা হয় প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে। দলটি সন্ধ্যায় যখন ফিরে আসে তখনো আবহাওয়া ছিল প্রতিকূল। কিন্তু সবার মুখে ছিল হাসি, যে হাসি ছড়িয়ে পড়েছে সুদূর নাটোরের সিংড়া উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।