সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে, আরাকান আর্মির একজন আটক

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.08.27
BD-BGB আটক অং নং ইয়ং রাখাইনের নিকট থেকে উদ্ধার করা দুটি ঘোড়া। ২৭ আগষ্ট,২০১৫
বেনার নিউজ

বান্দরবন সীমান্তে মিয়ানমারের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে গোলাগুলির পর ওই এলাকায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবারের অভিযানে সংগঠনটির এক ‘সহযোগীকে’ আটক করেছে বাংলাদেশের যৌথ বাহিনী। এছাড়া পার্বত্য সীমান্তে মিয়ানমারের ওই বিদ্রোহী সংগঠনটির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

“বান্দরবনের থানচির গভীর জঙ্গলে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত বিজিবি ও সেনা অভিযান অব্যাহত থাকবে” - বলেন বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, যিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

বাংলাদেশের এ অভিযানে মিয়ানমার সহায়তা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) ও আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সে দেশের সেনাবাহিনীও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে মিয়ানমার জানিয়েছে।”


সরঞ্জামসহ আরাকান আর্মির সহযোগী আটক

এদিকে দুই জেলার মধ্যবর্তী রাজস্থলী উপজেলার তাইদং পাড়ায় বুধবার রাত ১০ থেকে টানা পাঁচ ঘণ্টার অভিযানে অং নং ইয়ং রাখাইন (২৫) নামের ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

রাজস্থলী থানার ওসি ওয়াহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে  আরাকানের নাগরিক অং ইউ নিজেকে আরাকান আর্মির সহযোগী বলে স্বীকার করেছে।”

আটকের সময় তার কাছ থেকে মিয়ানমার আর্মির পোশাকের ৩০ গজ কাপড়, আর্মির তিন সেট পোশাক, তিনটি ল্যাপটপ, দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা, একটি হ্যান্ডিক্যাম, একটি মোবাইল, একটি মডেম, তাঁর স্ত্রীর পাসপোর্ট, দুটি ঘোড়া ও তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিওনের জিটুআই মেজর তসলিম তারেক ।

সেনাবাহিনীর ৩০৫ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের পক্ষে জিএসও-২ মেজর তসলিম স্বাক্ষরিত একটি ইমেইলে বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ড. রান নিন সোয়ে মার্মা নামে একজন নেদারল্যান্ডস প্রবাসীর বাড়ির বন্ধ একটি কক্ষে অং ইউ রাখাইন নামের ওই যুবককে পাওয়া যায়। ইমেইলের সঙ্গে পাঠানো একটি ছবিতে দেখা যায়, যুবকটির দুটি হাত নেই এবং তার শরীরে স্প্লিন্টারের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

জানা যায়, অভিযানের সময় বাড়ির মালিক পালিয়ে যান। তবে অং ইউকে আটক করে রাজস্থলী থানায় নেওয়া হয়।

এর আগে বুধবার সকালে বান্দরবানের থানচির বড় মোদক এলাকায় মিয়ানমারের একটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে গোলাগুলিতে বিজিবির এক সদস্য আহত হয়। এরপর যৌথ অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ।  

বান্দরবন ঘুড়ে এসে ঢাকায় ফিরে সন্ধ্যায় আজিজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন,  পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে বিজিবির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থান নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলতে থাকবে।”


প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান

বিজিবি বলছে, পার্বত্য সীমান্তে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান মিলেছে।

“বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অপারেশন শুরু হয়। দুর্গম এলাকা ঘুরে আরাকান আর্মিদের ব্যবহৃত রাইফেলের গুলি, শেল এবং কোমরের বেল্ট উদ্ধার করা গেছে। এসব তাদের ট্রেইনিংয়ের আলামত বলে মনে করছি আমরা।” - বলেন জেনারেল আজিজ ।

এছাড়া গোলাগুলির ঘটনায় আরাকান আর্মির অন্তত ৮- ১০ জন সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানান তিনি।


‘দূর হবে মিয়ানমারের শঙ্কা’

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়দাতা সন্দেহে সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে এক ধরনের দুরত্ব বজায় রেখে আসছে মিয়ানমার। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী ও সেনাবাহিনীর হাতে বিচ্ছিন্নতাবাদী দমনের এ ঘটনা এবার সেই সন্দেহ দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে।

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবীর এ প্রসঙ্গে বেনারকে বলেন, “মিয়ানমারের কিছু উগ্রপন্থিকে যেভাবে বাংলাদেশ দমন করল, তাতে দেশটির কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ইতিবাচক বার্তা যাবে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ বাড়ানোর যে চেষ্টা চালিয়ে আসছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসী দমনের ঘটনা।”

বিজিবি মহাপরিচালকও বলেন, এ ঘটনা প্রমাণ করল বাংলাদেশের মাটিতে কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় নেই। বাংলাদেশ তাদের স্থান দেয় না।”


হামলা অপ্রত্যাশিত, কমানো হবে অরক্ষিত সীমানা

পার্বত্য এলঅকার অত্যন্ত দূর্গম এলাকায় এ ধরনের হামলার জন্য বিজিবি মোটেই প্রস্তুত ছিলনা বলে জানান জেনারেল আজিজ।

তিনি বলেন, “হামলাটি ছিল অতর্কিত ও অপ্রত্যাশিত। নৌকায় টহল দেওয়ার সময় অতর্কিতে হামলা করা হয়েছিল। আমরা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। কারণ আমাদের প্রতিবেশি ভারত কিংবা মিয়ানমার, কারো সঙ্গেই সীমান্তে কোনো উত্তেজনা নেই।”

এদিকে দীর্ঘদিন থেকেই পার্বত্য অঞ্চলে বাংলাদেশের কিছু সীমানা অরক্ষিত। স্বাধীনতার পরে মিয়ানমারের সঙ্গে ৫৩৯ কিলোমিটারের মত অরক্ষিত সীমান্ত ছিল। সম্প্রতি ১১০ কিলোমিটার সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। বাকিগুলোও ধীরে ধীরে নজরদারিতে আনার পরিকল্পনা আছে বলছে বিজিবি।

আজিজ আহমেদ বলেন, “আরও ৩০-৩৫টি বিওপি স্থাপন করতে পারলে নতুন করে ১০০ কিলোমিটার সীমান্ত নজরদারিতে আনা যাবে। সে পরিকল্পনা আমাদের আছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।