চুরি যাওয়া ৮ কোটির মধ্যে দেড় কোটি ডলার ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.09.19
20160919-BD-Bank1000.jpg ফিলিপাইনের আদালত দেড় লাখ ডলার ফেরতের নির্দেশ দেওয়ার পর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে সব অর্থ পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। সেপ্টেম্বর ১৯,২০১৬।
স্টার মেইল

বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের যে অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে, তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ফিলিপাইনের একটি আদালত। এর পরিমাণ ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি ডলার (১২০ কোটি টাকা)।

গত ফেব্রুয়ারিতে নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকে নেওয়া হয়েছিল। এই অর্থের অধিকাংশ জুয়ার টেবিলে চলে গেলেও তার মধ্যে দেড় কোটি ডলার ফিলিপাইন উদ্ধার করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ওই অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দিতে গত সোমবার আদালত আদেশ দিয়েছে। অর্থ ফেরত পাওয়ার খবর পেয়ে গতকাল বিকেলেই ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাপ্ত তথ্য গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চুরি যাওয়া সব অর্থ ফেরত পাওয়ার আশা প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন,বাকি টাকা ফেরত পাওয়া সহজ নয়।

“ফিলিপাইনের রিজওনাল ট্রায়াল কোর্ট আজ শুনানি শেষে ইতিপূর্বে বাজেয়াপ্ত ও ফিলিপিনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশের অনুকূলে অবমুক্ত করার আদেশ জারি করেছে,” সংবাদ সম্মেলনে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোকাম্মেল হক।

গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি) সরানো হয়েছিল। ওই ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়, প্রশ্নের মুখে পড়ে ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থা।

ফিলিপাইন সরকার তৎপর হলে দেড় কোটি ডলারের সন্ধান মেলে, এরপর তা জব্দ করা হয়। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই অর্থের মালিকানা দাবি করে ফিলিপাইনের আদালতে আবেদন করা হয়।

ফিলিপাইনের বিচার বিভাগের প্রধান কৌঁসুলি রিকার্দো পারাস রয়টার্সকে বলেছেন, বাংলাদেশ এই অর্থের প্রকৃত মালিক বলে আদালতের আদেশে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের কিছুটা অর্থ ফিলিপাইন ফেরত দেওয়ার বিষয়টি ‘সুখবর’ উল্লেখ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বেনারকে বলেন, বাকি টাকা খুব শিগগির উদ্ধার হবে বলে মনে হয় না।

“এখনো চুরি যাওয়া অর্থের বিরাট অংশ বাকি আছে। সেগুলো ফেরত পাওয়া সহজ হবে না। কারণ, সে টাকা কোথায়, কার অ্যাকাউন্টে গেছে তার সন্ধান এখন পর্যন্ত মেলেনি,” জানান সাবেক অর্থ উপদেষ্টা।

ওই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাকি টাকার সন্ধান পাওয়া গেলেও যে দেশে গেছে, সে দেশের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টাকা ফেরত আনতে হবে, যা সময় সাপেক্ষ।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

“প্রতিবেদনে চুরির প্রক্রিয়া এবং জড়িতদের সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। তবে এটা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার প্রকাশ করবে,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, যিনি তদন্ত কমিটির একজন সদস্য।

গত ১৫ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস।

গত ২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয় এই কমিটি। এরপর ৩০ মে দেওয়া হয় পুরো প্রতিবেদন। এর পর অর্থমন্ত্রী একাধিকবার তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের কথা বললেও সেটি আর প্রকাশ করা হয়নি।

এদিকে চুরি যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের বাকি অর্থ কোথায় গেছে, তার হদিস এখন পর্যন্ত মেলেনি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আশাবাদী সব অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে।

“অবশিষ্ট অর্থ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যায়, চুরি যাওয়া সব অর্থ অচিরেই বাংলাদেশ আদায় করতে সমর্থ হবে,” বেনারকে জানান মোকাম্মেল হক। তিনি জানান, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ দূতাবাসকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট ম্যাসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একশ কোটি ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি বার্তার মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে ও অন্য একটি বার্তার মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি এনজিওর নামে পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার।

শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপাইনের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে ক্যাসিনোর জুয়ার টেবিল ঘুরিয়ে তা তুলে নেওয়া হয়।

ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ পায়। ওই ঘটনায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।