বাংলাদেশে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমছে

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.10.03
20161003-Padma-bridge1000.jpg পদ্মাসেতুসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যা দেশের দারিদ্র কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে সরকার আশা করছে। অক্টোবর ২, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

বাংলাদেশে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক অগ্রগতি এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশের এ অর্জন দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, পাকিস্তান কিংবা ভুটানের চেয়েও প্রশংসনীয়।

বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটির তথ্য ও দেশের অর্থনীতির হালনাগাদ চিত্র এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন সংস্থাটির ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

তবে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯ ডলারের বা ১১৫ টাকার কম। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

. শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরেই জরিপ

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কোনো দেশের দারিদ্যের হার বলতে মূলতঃ অতিদরিদ্রদেরই বোঝানো হয়। আর প্রত্যেক অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি বিচার করে বিশ্ব ব্যাংক এই হার নির্ধারণ করে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “গত অর্থ বছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.১ শতাংশ। এর ভিত্তিতেই অতিদারিদ্র্যের হার হিসাব করা হয়েছে।”

অন্যান্য বছরগুলোর প্রবৃদ্ধির হার বিবেচনায় ২০১০-১১ অর্থ বছরে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ; ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল ২০১১-১২ অর্থবছরে।

এ ছাড়া ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ; ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল অতিদারিদ্র্যের হার ছিল। তবে ২০০৫ সালে এই হার ছিল ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

শূন্যে নামাতে চাই . শতাংশ প্রবৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক নিয়মে, দারিদ্র্যের হার তিন শতাংশের নিচে নেমে এলে তাকে শূন্য দারিদ্র্য বলে গণ্য করা হয়। অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের দারিদ্র্যের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হলে বাংলাদেশকে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।”

তাঁর মতে, “তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ বাড়লে ১ দশমিক ৫ শতাংশ দারিদ্র্য কমে। এই হিসাবে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার ২ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমে আসবে।”

যদিও সরকার চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির আশা করছে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে ভিন্ন কথা। সংস্থাটি জানিয়েছে, এ প্রবৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। তাতে অতিদারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্য সব সূচক ইতিবাচক রয়েছে। তবে বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অবকাঠামোর ঘাটতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ঘাটতির কারণে আগামী অর্থ বছরে এই হার কমে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, “অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু অনিশ্চয়তার কারণে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।”

দারিদ্র্যের হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রশংসার দাবিদার—এ কথা উল্লেখ করে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান বলেন, “দেশে কর্মসংস্থানের নানা সুযোগ থাকায় অতিদারিদ্রের হার কমেছে। এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে।”

অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ

প্রতিবেদনে বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অবকাঠামো ঘাটতি, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দুর্বলতাকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ব্রেক্সিটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব যাচ্ছে, সেটাও বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে বিশ্ব ব্যাংক।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনো কিছু উদ্বেগ থাকার কথা উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, “দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ না হয়ে সঞ্চয় করা অর্থ পাচার হচ্ছে। আর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়ায় সরকারি ও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের ব্যবধান বেড়ে যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “অর্থের অভাব নেই; ফলে রিজার্ভ বাড়ছে। অথচ সেটা বিনিয়োগে কাজে লাগছে না। তাই অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা থাকলেও উদ্বেগটা কাটছে না”।

সামগ্রিক দারিদ্র কমবে

অতি দারিদ্র কমে আসাকে ইতিবাচক উল্লেখ করে এই ধারাবাহিকতায় দেশের সার্বিক দারিদ্র কমে আসবে বলে আশাবাদ করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটাতে পারলে এ দারিদ্রের হার আরো দ্রুত কমে যেতে পারে বলেও মনে করেন তাঁরা।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে বিনিয়োগ বিশেষ করে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে অতিদারিদ্র এমনকি সামগ্রিকভাবে দারিদ্র কমানোর হারটা আরো ত্বরান্বিত হবে।”

শুধু জিডিপির ভিত্তিতে না করে জাতীয় পর্যায়ের আয়–ব্যয়ের জরিপের ভিত্তিতে গবেষণা করলে আরো সঠিকভাবে দারিদ্র কমার হার বেরিয়ে আসত বলে মত দেন ওই গবেষক।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।