তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কিশোরের দণ্ড,হাকিমকে তলব করেছে হাইকোর্ট
2016.09.20

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় বিচারালয় ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (নির্বাহী হাকিম) ও সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তলব করেছেন হাইকোর্ট।
টাঙ্গাইল-৮ আসনের সাংসদ অনুপম শাজাহান জয়কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসের অভিযোগে ওই স্কুলছাত্রকে দুই বছর কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল বলে মত দেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা।
গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এরপর হাইকোর্টের একটি অবকাশকালীন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ওই দুই কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার আদেশ দেন। ওই আদেশে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া দণ্ডপ্রাপ্ত স্কুলছাত্রটিকে জামিন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বেনারকে বলেন, সাংসদকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনায় একটি জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
“আমি আদালতকে জানিয়েছি, তদন্তের পর্যায়ে থাকা কোনো বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত এভাবে দণ্ড দিতে পারে না। আর আসামি যদি শিশু হয়, তাহলে তার বিচার শিশু আইনে করতে হবে,” জানান খুরশীদ আলম।
আদালতের শুনানিতে অংশ নেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শামসুদ্দোহা তালুকদার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিতে পারে না। ফেসবুকে মন্তব্যের জের ধরে জিডি হয়েছে। সাধারণ নিয়মে এর তদন্ত হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ওই শিক্ষার্থীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করলে আদালত দণ্ড দেন।”
যে দুই কর্মকর্তাকে আদালত তলব করা হয়েছে তাঁরা হলেন; টাঙ্গাইলের সখীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং সখীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম।
গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, একটি ফেসবুক আইডি থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে গত শুক্রবার রাতে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়।
এই অভিযোগ ভিত্তিতে একই উপজেলার প্রতিমা বঙ্কি এলাকা থেকে ওই স্কুলছাত্রকে আটক করে গত রোববার ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন।
এ আদেশের পর সোমবার সকালে ওই কিশোরকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন সখিপুরের ওসি মাকসুদুল আলম।
এ প্রসঙ্গে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নুর খান বেনারকে বলেন, “জিডি নেওয়ার অর্থ বিষয়টি তদন্তাধীন থাকা। এমন অবস্থায় পুলিশই ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে যায়। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েই তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।”