বাংলাদেশে দুই উলফা নেতার যাবজ্জীবন কারাদন্ড

ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী
2015.04.08
BD-Ind উলফার দুই নেতাকে বাংলাদেশ যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে। আটক উলফার সাধারন সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে ভারতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। ছবিতে অনুপ চেটিয়াকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০১
এএফপি

আপডেটঃ ১০-৩৭ সকাল(ইস্টার্ন টাইম,৯ এপ্রিল,২০১৫

ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুইজনকে অবৈধ অস্ত্র রাখার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনে বাংলাদেশের একটি আদালত বুধবার (৮ এপ্রিল)যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আসামের এই বিচ্ছিনতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অভ আসাম (উলফা) নামে পরিচিত।

কিশোরগঞ্জ জেলার সেশন জজ মাহবুব-উল-ইসলাম উলফা নেতা রঞ্জন চৌধুরী ওরফে মেজর রঞ্জন ও তার সহযোগী প্রদীপ মারাককে অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে এই যাবজ্জীবন সাজা দেন।

র‍্যাব তাদেরকে আটক করার ৫ বছর পর এই রায় দেয়া হলো। অভিযুক্ত দুইজনের উপস্থিতিতে বিচারক তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন, “ কোনো প্রকার সন্দেহের উর্ধে অভিযোগ সমুহ প্রমাণিত হয়েছে”।
কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আজিজুল হক বেনার নিউজকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে ৪টি মামলার ২টিতে রায় দেয়া হয়। একটি অবৈধ অস্ত্র রাখার মামলা আরেকটি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটানোর প্রচেষ্টার মামলা। তাদের বিরুদ্ধে আরো ২টি মামলা রয়েছে, একটি বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা ও আরেকটি অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারিতে তাদের বিরুদ্ধে বিচার কাজ শুরু হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালের ১৭ জুলাই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাবের ইউনিট-৯ ভৈরব উপজেলার লক্ষীপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রঞ্জন চৌধুরী ও প্রদীপ মারাককে ঘেড়াও করে ফেলে। তারা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলেও র‍্যাব সদস্যরা চারটি গ্রেনেড,পিস্তল, রিভলভার, গুলি ও বিস্ফোরকসহ হাতেনাতে ধরে ফেলে।

আজিজ জানায়, “ এই দুই অপরাধী বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যে ভারত বিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছিলো। বিচারক উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের বিরুদ্ধে সকল প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ”।

কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান বেনার নিউজকে বলেন, পুলিশ ও র‍্যাব যৌথভাবে এই এলাকায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। তিনি বলেন, “জঙ্গি,উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসীদের প্রতি সরকারের শুন্য-সহনশীলতা’র নীতি অনুসারে আমরা গোয়েন্দা-নজরদারী বাড়িয়েছি”।

তিনি বলেন, “প্রদীপ মারাক শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি এলাকায় থাকতো, সেখানে সে এক গারো মেয়েকে বিয়ে করে।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়।

ভারত-বিরোধী ৭ রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে প্রশ্রয় দেবার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কে অবনতি দেখা দেয়। হাসিনার সরকার জঙ্গি বিরোধী কঠোর অবস্থান নেয়ায় ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতি ঘটে। দুইদেশের মধ্যে বন্দি-বিনিময় চুক্তি হয়েছে উলফার সাধারন সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের জন্য। ১৯৯৭ সালে অনুপ চেটিয়া অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘদিন সাজা ভোগের পর তিনি এখন ভারতের কাছে হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষা করছেন।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত সপ্তাহে সংসদে বলেন, চেটিয়ার হস্তান্তরের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সংশোধনঃ ভুলক্রমে আগের রিপোর্টে উলফা নেতাদের মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) দন্ড দেয়া হয়েছে বলা হয়েছিলো। প্রকৃতপক্ষে হবে বুধবার (৯ এপ্রিল)।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।