ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরে দুইদেশের সম্পর্কের আরো উন্নতির আভাস
2015.06.04
গত বছর প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হবার পরপরই নরেন্দ্র মোদী অগ্রাধিকার ঠিক করেছিলেন যে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করবেন।
তার এই আন্তরিকতার পরিচয় তিনি দিলেন শিঘ্রই ভুটান, নেপাল ও শ্রীলংকা সফরের মধ্য দিয়ে।কিন্তু ঢাকা সফর বাদ রেখেছিলেন কারণ ‘খালি হাতে’ এখানে আসতে চান নি।
গত ৭ মে পার্লামেন্টে স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল পাশ হলো ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে ১৯৭৪ সালের চুক্তি সাক্ষরের ৪১ বছর পর, এতে করে নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের পটভূমি রচিত হলো।
এই স্থল সীমান্ত চুক্তিটি এখন দু’দিনের ঢাকা সফরকালে মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে যৌথভাবে সাক্ষরিত করবেন।যা শুরু হতে যাচ্ছে শনিবার (৬জুন) থেকে। যে যুক্তির অধীনে বাংলাদেশ তাদের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতের ১১১ টি ছিটমহলের ১৭,১৬০ একর ভূমি লাভ করবে আর ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহলের ৭,১১০ একর ভূমির দখলসত্ব লাভ করবে ভারত।
সমস্যার সমাধান এবং যৌথ সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উদ্যোগ ইতিবাচক উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে যা কেবল যৌথ সম্পর্ক জোরদার করবে না তিস্তা ইস্যুর মতো অন্যান্য সমস্যা সমাধানের পথ খুলে দেবে।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সালমান হায়দার যেমন বেনারকে বললেন, “তাতপর্যকর এই উদ্যোগ ৪ দশক ধরে একে অপরের সীমান্তে অনিশ্চিতভাবে ঝুলে থাকা হাজার হাজার মানুষের জীবনের উন্নতি ঘটাবে”। তিনি আরো বলেন, “এই সীমান্ত বিলটি ২ দশক আগেই পাশ হতে পারতো, শুধুমাত্র অর্থহীন রাজনীতির জন্যই তা এতোদিন অর্জিত হয় নি। এখন এর ফলে, দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার হবে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সমস্যার দিকেও নজর দেয়া হবে”।
তবে মোদীর সফরে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে যখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দু’সপ্তাহ আগে জানালেন যে মোদীর সফরকালে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লাখো মানুষের জন্য বিষয়টি হতাশা বয়ে আনছে, যেহেতু তিস্তার পানির উপরেই তাদেরকে জীবন নির্বাহ করতে হয়।
সাবেক কূটনীতিক ও নেতৃস্থানীয় কলাম লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বেনার নিউজকে জানান, “এটা খুবই হতাশজনক যে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না।যেটি বাংলাদেশের খুব প্রয়োজন”। তিনি আরো বলেন, “একটা জিনিস পরিস্কার হতে হবে যে ভারত আমাদেরকে কোনো কিছু দান করছে না।এটা আমাদের অধিকার। ভারতের অভ্যন্তরীন রাজনীতির জন্যই স্থল সীমান্ত চুক্তি অনেকদিন গড়ালো একইভাবে তিস্তা চুক্তিটিতেও বিলম্ব ঘটছে। বাংলাদেশের মানুষ পুরনো দিনের কথা ভুলে যেতে চায়, কিন্তু ভারতকে তিস্তা সমস্যার দ্রুত সমাধানের মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে”।
তবে, এই সফরকালে তিস্তা চুক্তিটি না হলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সম্ভাবনা থাকছে এবং আশার ব্যাপার যে পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী মোদীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফরকালে চুক্তিটিতে তখন জোর আপত্তি জানিয়েছিলেন এবং সফরসঙ্গী হননি মমতা।
নয়াদিল্লির থিংট্যাঙ্ক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র মেম্বার জয়ীতা ভট্টাচার্জী বেনারকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে মমতার সঙ্গী হবার সদিচ্ছা একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত যে সমস্যাটি সমাধান পাবে শিঘ্রই।
ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরকালে মমতা নিজেই বলেছিলেন, “ আমার উপর আস্থা রাখুন যাতে দুইদেশের মানুষগুলো কষ্ট পাচ্ছে এবং যারা তিস্তার পানির উপর নির্ভরশীল সেই তিস্তার পানি সমস্যার আমরা যেন সমাধান করতে পারি”।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও মোদীর সফর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে, যেহেতু প্রধান বিরোধীদল বিএনপি যারা ভারত-বিরোধী হিসেবে পরিচিত তারা খোলাখুলিভাবে এই সফরকে স্বাগত জানিয়েছে।
“রাজনৈতিক দলগুলো ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যপারে বিভাজিত, কিন্তু আমার ধারনা, এই সফর বিএনপিকে উদ্বুদ্ধ করেছে ঘরোয়া রাজনীতিতে ভারত বিরোধী কার্ড না খেলার জন্য”, বেনারকে বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন।
বিএনপির মুখপাত্র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন মোদীর সফরকে স্বাগত জানিয়ে বেনারকে বলেন, “বিএনপি ভারত বিরোধী দল নয়, আমরা ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই।আমরা তিস্তা পানি চুক্তি হোক চাই এবং সীমান্তে হত্যা বন্ধ হোক চাই”।
প্রফেসর হোসেন আরো বলেন, “বিজেপি ও কংগ্রেস বাংলাদেশের ব্যপারে সীমান্ত চুক্তির জন্য সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে যৌথভাবে নিরঙ্কুশ সমদৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছে।এখন একইভাবে আমাদের দেশেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা যৌথ সমদৃষ্টিভঙ্গি দেখতে চাই।এটা আমাদেরকে একটা নতুন অধ্যায় খুলে দেবে”।