ছিটমহল বিনিময় কার্যকর ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.06.09
BD-Ind গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করের মধ্যে অনুস্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তির দলিল বিনিময় করেন। ৬ জুন,২০১৫
বেনার নিউজ

অনুস্বাক্ষরের পর এবার আগামী ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে কার্যকর হতে চলেছে দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষিত বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়।

এক্ষেত্রে ছিটমহলের অধিবাসীরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে চাইলে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় হাইকমিশন সোমবার এমন তথ্য জানিয়েছে।

গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিনিময় হয়। বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি-১৯৭৪ এবং সীমান্ত চুক্তির প্রটোকল ২০১১-এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, অপদখলীয় জমি বিনিময় ও সীমানা চিহ্নিত করার কাজটি শেষ হবে ২০১৬ সালের ৩০ জুন।

ছিটমহল বিনিময়ের আগে দুই দেশের সরকারের প্রতিনিধিরা যৌথভাবে ছিটমহলগুলো পরিদর্শন করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১১ সালে দুই দেশের যৌথ শুমারির তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, এতে রয়েছে ৩৭ হাজার মানুষের বাস। আর ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দা ১৪ হাজার।

ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন মোট ৭ হাজার ১১০ একর। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর।

এগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি, কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, নীলফামারী জেলায় ৪টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে।বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ছিটমহলগুলোতে ৩৭ হাজার এবং ভারতের মধ্যকার ছিটমহলগুলোতে ১৪ হাজার বাসিন্দা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলে আসছেন, চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (৭১১০ একর জমি) ভারতের অংশ হয়ে যাবে। আর ভারতের ১১১টি ছিটমহল (১৭১৬০ একর জমি) বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাবে।

এগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি, কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, নীলফামারী জেলায় ৪টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে।
ছিটমহল বিনিময় বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. বদিরুজ্জামান বলেন, দু্ই দেশের পিক্ষ থেকে ছিটমহল বিনিময়ের আগে সেখানকার যেসব লোকজন আগের নাগরিকত্ব বজায় রাখতে চান, তাদের চিহ্নিত করা হবে। তাদের জাতীয়তা ও নাগরিক হিসেবে অধিকারের বিষয়ে অবহিত করা হবে।  

তিনি জানান, এর আগে দুদেশে যৌথভাবে ছিটমহলের জনসংখ্যা গণণা করেছে। সে ২০১১ সালের জুলাইয়ে তালিকাও বিনিময় হয়েছে। ওই তালিকার অনুযায়ী এবং এরপর সেসব ঘরে জন্ম নেওয়া শিশুরা এ অধিকারের আওতায় থাকবে।

ছিটমহলের যারা আগের নাগরিকত্ব বজায় রাখতে চান, তাদের চলাচল এবং ছিটমহলের অধিবাসী হিসেবে চলাচলের জন্য দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তারা ছবি, প্রবেশ পাসসহ প্রয়োজনীয় দলিল ও তথ্য সংগ্রহ করবেন বলে দুই সচিব স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়।

ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, ছিটমহলবাসী যাতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বিঘ্নে নিজেদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং বহনযোগ্য সম্পত্তি নিয়ে যেতে পারেন, দুই দেশের সরকারে পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত করা হবে।

আর যারা ছিটমহল থেকে বাংলাদেশ কিংবা ভারতের মূল ভূখণ্ডে ফিরতে চান দুই দেশের সরকারের পরস্পরের সহযোগিতার ভিত্তিতে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সে বিষয়টিরও সুরাহা করবেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের হলদিবাড়ি, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধার মাধ্যমে এই আসা-যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
ছিটমহল বিনিময়ের জন্য দীর্ঘ ৪১ বছর পরে গত মে মাসে ভারতের পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনে বিল পাস হওয়ার কিছুদিন পরেই বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সফরে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা দলিল বিনিময় করেন।

দুই দেশের সীমান্ত সমস্যার সমাধানকে ইতিহাসিক উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, “সারা বিশ্ব হয়ত জমির জন্য যুদ্ধ করতে পারে, কিন্তু আমরা দুটি দেশ জমিকে সম্পর্কের সেতু হিসেবে ব্যবহার করেছি।”

ছিটমহল গুলোতেও এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় খুশির জোয়ার বইছে।

ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলের সভাপতি আলতাব হোসেন বেনারকে বলেন, ভারতের পার্লামেন্টে বিলটি পাস হওয়ার পর থেকেই এমন খবর শোনার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। নতুন করে খুশির জোয়ার বইছে ছিটমহলবাসীদের মনে। আর বন্দী জীবন নয়, নতুন জীবন নিয়ে বাঁচতে পারব আমরা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।