সন্ত্রাসবাদে জড়িত সন্দেহে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ আটক ৪
2016.09.22

সন্ত্রাসবাদে জড়িত সন্দেহে তিন বিদেশিসহ একজন স্থানীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে মালয়েশিয়ার পুলিশ। বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশ, নেপাল ও মরক্কোর তিন নাগরিক আছেন।
মালয়েশিয়া পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ করেছে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল নিউজএশিয়া। ওই খবরের দাবি, আন্তর্জাতিক একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের অভিযোগে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হওয়া ওই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তবে বাংলাদেশ সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তিকে আটক বা তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
এর আগে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে সিঙ্গাপুরে ছয় বাংলাদেশির সাজা হয়েছে। সেখান থেকে আরো ১০–১২ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
সিঙ্গাপুরের পর এবার মালয়েশিয়ায় সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে বাংলাদেশি আটক হওয়ার খবরে বিব্রত অনেকেই। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মত দিচ্ছেন কেউ কেউ। তবে বাংলাদেশ সরকার এটাকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছে।
বিবৃতিতে মালয়েশিয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক খালিদ আবু বকর জানান, “৩৭ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাংয়ে একটি রেস্তোরাঁ চালাতেন। গত ১৯ আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করে ২ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরত পাঠানো হয়।”
তিনি জানান, “তার বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের ব্যবহারের জন্য অস্ত্র পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ইন্টারপোলে তার নামে রেড নোটিসও জারি হয়েছিল।”
আটক বাকি বিদেশিদেরও ইতোমধ্যে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে সেখানকার পুলিশ জানায়।
খালিদ জানান, “৩৮ বছর বয়সী নেপালি নাগরিক মালয়েশিয়ায় একটি বিনোদন আউটলেটের ব্যবস্থাপক ছিলেন। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যেদের ব্যবহারের জন্য ভ্রমণের ভুয়া কাগজপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাকেও ২ সেপ্টেম্বর দেশে পাঠানো হয়।”
আটক মরোক্কোর নাগরিকের বয়স ২৬ বছর। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সদস্য সন্দেহে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে সিরিয়ায় অনুপ্রবেশের চেষ্টার পর তুরস্কে ওই ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলে জানান খালিদ। তুরস্ক থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মে মাসে সে মালয়েশিয়া ঢুকে। গত ২ আগস্ট আটক হওয়া ওই ব্যক্তিকে বুধবার মরোক্কো পাঠানো হয়েছে।
সকল সন্দেহভাজনকে আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর ও পাহাং রাজ্যে পৃথক অভিযান চালিয়ে আটক করে মালয়েশিয়ার পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা।
গ্রেপ্তার হওয়া চতুর্থ ব্যক্তি মালয়েশিয়ার নাগরিককে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি এক ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন।
খালিদ জানান, ফেইসবুকে ইসলামিক স্টেটের কর্মকাণ্ডের সক্রিয় সমর্থক মুহাম্মদ ওয়ানদি মোহাম্মদ জেদি নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি নিজেও ফেসবুকের মাধ্যমে আইএসএর কর্মকান্ড প্রচার করতেন।
সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি বর্তমানে অধিকতর তদন্তের জন্য সিকিউরিটি অফেন্সেস (স্পেশাল ব্যবস্থা) আইন ২০১২ এর অধীনে আটক রয়েছেন।
মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩০ জন আইএস সদস্য সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে। সিরিয়া বা ইরাকের যুদ্ধ সফর থেকে ফেরা মালয়েশিয়ানরা নিজে দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার আদালত এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৭২ জন আইএস সদস্যকে অভিযুক্ত করেছে।
নিশ্চিত করেনি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ
এদিকে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো ওই সন্দেভাজন বাংলাদেশি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারেনি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ। পুলিশ, ইমিগ্রেশন পুলিশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এমন কেউ বাংলাদেশে এসেছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র মাসুদুর রহমান বেনারকে বলেন, “ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এমন কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।”
বিমানবন্দর থানার ওসি নুরুল আলম মিয়াও বেনারের কাছে এমন কোনো ব্যক্তি আটক হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে যোগাযোগ করা হলে শ্রম কাউন্সিলর সাইদুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “মালয়েশিয়ার পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। গণমাধ্যম থেকে বিষয়টি প্রথম জানতে পারি। তবে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।”
বিচ্ছিন্ন ঘটনা
সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে একজন বাংলাদেশি আটক হওয়াকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে কোনভাবেই প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বেনারকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকরা অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে। সেখানে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে আটক হওয়ার বিষয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। এমন একটি ঘটনা কোনভাবেই লাখ লাখ শ্রমিকের সুনামকে নষ্ট করতে পারে না।”
ওই ব্যক্তিকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে নির্দিষ্ট আইনে তার বিচার হবে বলে জানান তিনি।
জনশক্তি রপ্তানিকারকেরাও আটক হওয়া ব্যক্তিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বেনারকে বলেন, “এ ধরনের সংবাদ আমাদেরকে হতাশ করে। দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে শ্রম বাজার এর কোন প্রভাব না পড়ে।”
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিদিনই দেশটিতে বাংলাদেশের কিছু শ্রমিক প্রবেশ করছেন।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কুয়ালালামপুর থেকে ফাহিরুল এন. রামলি।