থানায় ও প্রশাসনে নারীকে ঘুষ দিতে হয়, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রতিবেদন
2015.03.12
নারী নির্যাতন মামলায় একজন নারীকে থানায় দায়ের করা থেকে শুরু করে শুনানি হওয়া পর্যন্ত ৩০০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। বাংলাদেশের গাজীপুর ও জামালপুরের দুটি ইউনিয়নের নারীদের ওপর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত এক গবেষণার তথ্য এটি। গত বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে ‘নারীর অভিজ্ঞতায় দুর্নীতি: বাংলাদেশের দুইটি ইউনিয়নের চিত্র’ শিরোনামে গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়।
ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, একজন নারীকে নারী নির্যাতনের মামলা পরিচালনার জন্য থানায় মামলা করতে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা, বাড়িতে এসে মামলার অনুসন্ধানের জন্য চা-নাশতা বাবদ ৩০০-৬০০ টাকা, মামলা আদালতে ওঠানোর জন্য পাঁচ হাজার টাকা, আসামি ধরতে যাওয়ার জন্য পুলিশের গাড়ির তেলের খরচ ও যাতায়াত বাবদ ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা এবং শুনানির জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূত টাকা দিতে হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবি বলেছে, শুনানির জন্য যে টাকা দিতে হচ্ছে তা আসলে কার কাছ থেকে কার কাছে যায়, সে সম্পর্কে গবেষণার আওতাভুক্ত নারীদের পরিষ্কার ধারণা নেই।
ওই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, নারী শুধু সেবা পেতে ঘুষ দেন না, নারী ঘুষ নেনও।
টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেছেন, নারী তাঁর অসহায়ত্বের জন্য দুর্নীতির শিকার হন। নারী যখন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হন, তখন তাঁকে দ্বিমাত্রিক-ত্রিমাত্রিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কোনো কোনো সময় দুর্নীতি করার ক্ষেত্রে নারীকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা সহজ। নারী বলেই তিনি দুর্নীতি করবেন না, এমনটিও ঠিক নয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি সেবা পেতে নিয়মবহির্ভূত অর্থের লেনদেন মানুষের সাধারণ জীবনযাপনের অংশ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, মানুষ দেখছে, যাঁরা দুর্নীতি করছেন তাঁদের শাস্তি হচ্ছে না, হলেও সেটি প্রতীকী। নারী সেবা পেতে দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন, নারী দুর্নীতির মাধ্যম হচ্ছেন, কখনো কখনো নিজেও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। ’
‘নারীর অভিজ্ঞতায় দুর্নীতি: বাংলাদেশের দুইটি ইউনিয়নের চিত্র’ গবেষণার আওতায় জানুয়ারি ২০১৩ থেকে ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দুর্নীতির শিকার হয়েছেন এমন ৬৬ নারী তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এনজিও, বিচারিক সেবা, ভূমি, ব্যাংক ইত্যাদি খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা পেতে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়; প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ভিজিডি-ভিজিএফ কার্ড পেতে, মাটি কাটার কাজ পেতে, নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করতে ও উপবৃত্তি পেতে নারীদের ঘুষ দিতে হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে গিয়েও যেমন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নারী সদস্য হিসেবে উন্নয়ন বরাদ্দ পেতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হতে হয়।