আনসারুল্লাহ’র ‘টার্গেটে’ আরো চার বিশিষ্ট ব্যক্তি

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.09.02
BD-abt হুমকি প্রাপ্তদের দুইজন অধ্যাপক অনুপম সেন ও অ্যাডভোকেট রানাদাশ গুপ্ত। ২ সেপ্টেম্বর,২০১৫
বেনার নিউজ

নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে এবার হত্যার হুমকি পেলেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরসহ চট্টগ্রামের চার বিশিষ্ট ব্যক্তি।

তাঁরা হলেন, বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট অশোক কুমার দাশ এবং চট্টগ্রাম জেলা আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট চন্দন বিশ্বাস।

বুধবার সকালে পৃথক দুটি মোবাইলে পাঠানো খুদে বার্তায় (এসএমএস) হামলার পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে তাদের নাম লেখা হয়। এদিন সকাল ৭টা ৩৪ মিনিটে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে হুমকি সম্বলিত এসএমএসটি পান বলে জানান আইনজীবী অশোক দাশ। ৭টা ৩৫ মিনিটে একই ধরনের আরেকটি এসএমএস পান প্রসিকিউটর চন্দন বিশ্বাস।

দুটি এসএমএসে অভিন্ন ভাষায় লেখা আছে- “মি. ইউ অ্যান্ড ইয়োর ফ্যামিলি আর আওয়ার টার্গেট ফ্রম টুমরো। ড. অনুপম সেন/রানা দাশগুপ্ত. ইউ অল আর ইন্ডিয়ান এজেন্ট. আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।” অশোক দাশ বলেন, “এসএমএস পাওয়ার পর ওই নম্বরে কল করলেও তা বন্ধ পেয়েছি।”

একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক অনুপম সেন সমাজবিজ্ঞানী। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদেরও নেতা।
এর আগে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন দল আনসারুল্লাহ’র নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কয়েকজন মন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।


থানায় জিডি করা হয়েছে

বুধবার হুমকিপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন।

তিনি বেনারকে বলেন, “অ্যাডভোকেট অশোক কুমার দাশ থানায় একটি জিডি করেছেন। যে মোবাইল নম্বর থেকে এসএমএস এসেছে সেটির কললিস্ট বের করে হুমকিদাতাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। হুমকিদাতাকে গ্রেপ্তার চেষ্টার পাশাপাশি অনুপম সেন, রানা দাশগুপ্ত, অশোক কুমার দাশসহ হুমকি পাওয়া বিশিষ্টজনদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। সকলকে সমান গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা দেবে পুলিশ।”

এ ঘটনায় আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করার কথা জানান আইনজীবী চন্দন বিশ্বাসও। তিনি বেনারকে বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরেই আনসারুল্লাহ’র নামে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হত্যার হুমকি পেয়ে আসছেন। তাদের হুমকি পাওয়া অনেকেই ইতিমধ্যে খুন হয়েছেন। আজ হুমকি পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে অনেকের মত আমিও উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তাহীনতা থেকেই থানায় জিডি করেছি। এছাড়া এসএমএস পাওয়ার পরে ওই নম্বরে ফোন করলেও নম্বরটি বন্ধ পাই।”

এদিকে আনসারুল্লাহ’র পাঠানো ক্ষুদে বার্তায় নাম থাকলেও নিজেরা এমন বার্তা পাননি বলে জানান অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত ও সমাজ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অনুপম সেন।

মানবাধিকার সংগঠক রানা দাশ বলেন, “ব্যক্তিগত একটি কাজে সকাল থেকে আমার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। কাজ শেষে মোবাইল অন করলেও এ ধরনের কোনো খুদে বার্তা কিংবা হুমকি আমি পাইনি।”

ড. অনুপম সেনও জানান, তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল। ফলে এ ধরনের কোনো কিছু তিনিও জানেন না।

প্রবীণ এ শিক্ষাবিদ বলেন, “আমি তো ফেসবুকে বা ব্লগে কোথাও নেই। আমার কাজ শুধু শিক্ষা নিয়ে। আমাকে কেন হুমকি দেওয়া হবে।”


‘নিরাপত্তা যথেষ্ট নয়’

সরকারের পক্ষ থেকে হুমকিপ্রাপ্তদের নিরাপত্তার কথা বলা হলেও মূলতঃ তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পাননা বলে অভিযোগ এনেছেন সংশ্লিষ্টরা।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক চন্দন বিশ্বাস বলেন,  “আমরা যারা মুক্তমনের রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত আছি, তাদেরকেই টার্গেট করে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অথচ তাদের রক্ষায় সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও যে নিরাপত্তার কথা বলা হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়।”


‘অবস্থান জানান দেওয়াই উদ্দেশ্য’

“বাংলাদেশ মূলতঃ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। এবং এদেশের সাধারণ মানুষ কোনভাবেই জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয় না। আনসারুল্লাহ বা এ ধরনের নিষিদ্ধ জঙ্গিসংগঠনগুলো কিছু অঘটন ঘটিয়ে এদেশে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে তাদের অবস্থান এদেশে মোটেই শক্ত নয়।”- বেনারকে বলেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার, যিনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে সন্ত্রাসীদের হামলায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, “বিষয়টি শুধু হমকির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। হত্যার ঘটনাও ঘটছে। তাই সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এসব ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

অ্যাডভোকেট চন্দন বিশ্বাস বলেন, “দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। এখনো শীর্ষ পর্যায়ের কিছু যুদ্ধাপরাদীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়া বাকি আছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে তাদেরকে রক্ষা করতে চায় একটা শ্রেণী। যারা জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকও বটে। তবে তারা সফল হবে না। কারণ, এদেশের মানুষ জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।