বর্ষবরণের দিনে যৌন নিপীড়ন ঘটনার জবাব দিতে গিয়ে বিপাকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.07.08
BD-abuse পুলিশ বর্ষবরণ উৎসবে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের কয়েকজনের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে। মে, ২০১৫
বেনার নিউজ

বর্ষবরণ উৎসবে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার করা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গত সোমবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রতিমন্ত্রী ওই ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও পুলিশ তা অস্বীকার করে।

এ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী কয়েক দফা তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেও তা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারছে না।
এ ঘটনার বিচারে সরকার বা পুলিশের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিচারপ্রার্থী নাগরিক, নারী ও ছাত্রসংগঠনগুলো।

“সবচেয়ে বড় কথা দেশজুড়ে এতোবড় আলোচিত ঘটনায় এ পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এমনকি পুলিশের কাছে ঘটনার ভিডিওচিত্র থাকা সত্ত্বেও,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক।

বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তারের কথা না জানালেও জড়িতদের মধ্যে কয়েকজনকে ‘ধরা’ হয়েছে বলে জাতীয় সংসদে তথ্য দেন প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

সংসদে ৬ জুলাইয়ের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সাংসদ তাহজিব আলম সিদ্দিকী এক সম্পূরক প্রশ্নে যৌন নিপীড়নের ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান।

জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ওই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “চিহ্নিত ব্যক্তিদের ধরার বিষয়ে আমাদের আইজি সাহেব (পুরস্কারের ) ঘোষণাও দিয়েছেন। কয়েকজনকে আমরা ধরেছি। তাদের আইনের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। দুই-একজন বাকি আছে। তাদেরকেও ধরব।”


পুলিশ জানায়, কাউকে ধরা হয়নি

এই বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকেরা পুলিশের কাছে কাদের ধরা হয়েছে, তা জানতে চান। কিন্তু পুলিশ জানায়, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।  

“ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি,” জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

পুলিশের এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রতিমন্ত্রী কামাল একইদিন সাংবাদিকদের আবার বলেন, “আইজিপি এবং থানা-পুলিশের মাধ্যমে যা তথ্য পাওয়া গেছে, তাই সংসদে বলা হয়েছে।’’

মন্ত্রী ও পুলিশের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এরপর ৭ জুলাই মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চিহ্নিত কাউকে ধরা হয়নি। একজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছিলাম বা বলতে চেয়েছিলাম যে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে ৫৪ ধারায় আদালতেও পাঠানো হয়েছে।”

প্রতিমন্ত্রীর এই ব্যাখ্যায়ও সন্তুষ্ট নন বিচারপ্রার্থীরা, সামাজিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনা চলছে।

গত ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের উৎসবের সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে ভিড়ের মধ্যে একদল তরুণ ও যুবক নারীদের ওপর চড়াও হয়। তাতে বাধা দিতে গিয়ে আহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দীসহ কয়েকজন।

সে সময় চার নিপীড়ককে ধরে দুই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি স্বীকার করা হয়।  

এক মাসেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে ছবি ও ভিডিও দেখে চিহ্নিত আটজনের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য গত ১৭ মে এক লাখ টাকা করে পুরস্কারও ঘোষণা করে পুলিশ।

সম্প্রতি পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক পয়লা বৈশাখে যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে ‘কিছু ছেলের দুষ্টামি’ বলে মন্তব্য করেন।
“পুলিশ প্রধানের এমন  ন্যাক্কারজনক বক্তব্য থেকে তাদের মনোভাব বোঝা যায়। নারীর ওপর ক্রমেই হামলার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু হামলা প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে,” বেনারকে জানান সুলতানা কামাল, যিনি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক।

হাইকোর্টের রুল

এদিকে বর্ষবরণের দিনে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ প্রধানের নেওয়া পদক্ষেপ হাই কোর্টকে জানানো হয়েছে।

যৌন হয়রানির ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে ১৬ এপ্রিল হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। আদালত ওই ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে এক মাসের মধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ মে আইজিপির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।

“প্রতিবেদন ঘটনার পর ডিএমপিকে কমিটি গঠন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া, শাহবাগ থানায় ফৌজদারি মামলা করা,পুলিশের গাফিলতি আছে কি না তা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া, জড়িতদের গ্রেপ্তারে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা সহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা আদালতকে অবহিত করা হয়েছে,” বেনারকে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।