বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ব্রিটেন সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.01.27
BD-airport গত ২৪ জানুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা মহড়ার ছবি।
বেনার নিউজ

ব্রিটিশ ন্যাশনাল সিকিউরিটি ঢাকার হজরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টেকসই নিরাপত্তা চায়। এ লক্ষ্যে সরকারের কাছে তারা সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যন্ত্রপাতি বসাতে সহায়তাসহ চারটি প্রস্তাব দিয়েছে।

বিশ্বের ১৯টি দেশের ৩৮টি বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি নিজেদের দেখভালের আওতায় (স্ক্রিনিং) নিয়েছে ব্রিটিশ ন্যাশনাল সিকিউরিটি, যার মধ্যে আছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে যে সব দেশ থেকে ব্রিটেনে সরাসরি বিমান যায়, সেসব দেশের ওপর তারা নজর দিচ্ছে।

সম্প্রতি মিশরে একটি রাশিয়ান বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। ধারণা করা হচ্ছে সেই বিমানের কার্গো হোল-এ বোমা রাখা ছিল।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্প্রতি একজন নারী কোনো বোর্ডিং পাস ছাড়াই অভ্যন্তরীণ রুটের একটি ফ্লাইটে উঠে বসে। এ ঘটনায় তুমুল হইচই শুরু হয়।

বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দুর্বলতার বিষয়ে দেশটি প্রশ্ন তুলে ৯ জানুয়ারির মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর পরামর্শ দেয়। ওইসময়ের মধ্যে নিরাপত্তা জোরদার করতে না পারলে বিমানবন্দর ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার কথা জানায় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ।

ব্রিটেনের এই অবস্থান জানতে পেরে অস্ট্রেলিয়াও উদ্বেগ প্রকাশ করে। ঢাকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এখন কার্গো বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়িরা এতে তাদের ক্ষতির কথা উল্লেখ করে সরকারকে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে।

এদিকে ব্রিটিশ ন্যাশনাল সিকিউরিটির পর্যবেক্ষণ পাওয়ার পর সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য একটি বিশেষ বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নেয় সরকার।

“এই বাহিনী গঠনের আগ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে ভিন্ন আরেকটি ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশ, আনসার এবং বিমানবাহিনী থেকে লোকবলের সমন্বয়ে ১০০ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে,” বেনারকে জানান বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

তিনি জানান, নতুন বাহিনী তৈরি করার আগে তারা পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন বাহিনী থেকে লোকবল নিয়ে একটি নিরাপত্তা দল গঠন করতে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরে নতুন স্ক্যানিং মেশিন বসানো, যাত্রী তল্লাশি জোরদার এবং দর্শনার্থীদের প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে।

এদিকে নতুন বাহিনী গঠনে জনবলের অনুমোদন চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটি এখন পর্যন্ত অনুমোদন হয়নি।

গত ২৪ জানুয়ারি ব্রিটিশ ন্যাশনাল সিকিউরিটির পরিচালক জনাথন অ্যালেন এবং ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা চারটি প্রস্তাব দেন।

“তারা বিমানবন্দরের পরিস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সরকারকে রাজনৈতিক সদিচ্ছার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে তাঁরা এও বলেছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন হলেও এটাকে টেকসই করতে হবে,” জানান রাশেদ খান মেনন।

প্রতিনিধি দলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করেন।

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, ব্রিটিশ প্রতিনিধি দলটি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের তাৎক্ষণিক বিভিন্ন উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করলেও এর স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ জন্য তারা মাঝেমধ্যে সরেজমিন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি নজরদারির কথা জানিয়েছেন।     

“বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আমাদের লোকজনদের মধ্যে সুপারভাইজার লেভেলের কর্মকর্তাদের তারা প্রশিক্ষণ দেবে। বিশেষ করে অপারেশন লেভেলের কর্মকর্তা, বিমানের কর্মকর্তা এবং সিভিল অ্যাভিয়েশনের অন্তত পাঁচজন কর্মকর্তাকে তারা হিথ্রো বিমানবন্দরে নিয়ে সেখানকার নিরাপত্তা সরেজমিন দেখাতে চান,” বেনারকে জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

এ ছাড়া শাহজালালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে তারা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে চায়। এর পাশাপাশি আগামী মার্চে ব্রিটিশ ন্যাশনাল সিকিউরিটি লন্ডনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি সেমিনার করবে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে অন্তত তিনজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ব্রিটিশ ন্যাশনাল সিকিউরিটির পরিচালক বলেছেন, আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি পুরোনো প্রযুক্তি দিয়েও অপরাধ ঘটতে পারে। তাই কেবল আধুনিক প্রযুক্তিতে অপরাধ হবে, এটা না ভেবে আদি প্রযুক্তির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

“ব্রিটেন উদ্বেগ জানানোর পর যাত্রীদের চেক ইনের সময় এখন বেল্ট, ঘড়ি বা জুতো খুলতে বলা হচ্ছে। স্ক্যানিং যন্ত্রসহ বিস্ফোরকের সন্ধানে ডগ স্কোয়াড ব্যাবহার করা হচ্ছে। ব্যাগেজ হ্যান্ডলিংয়ে জড়িতদের ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থার  ক্লিয়ারেন্স নেওয়া হচ্ছে,” বেনারকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।