সংখ্যালঘুদের ওপর আবার হামলা, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.12.11
BD-attack জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দিনাজপুরে মন্দিরে হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
বেনার নিউজ

দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) একটি মন্দিরে কীর্তন ও ধর্মসভা চলার সময় দুর্বৃত্তদের গুলি ও হাতবোমা হামলায় দুজন আহত হয়েছেন ।

গত ৫ ডিসেম্বর একই উপজেলায় কান্তজিউর মন্দির প্রাঙ্গণে রাসমেলার একটি যাত্রা প্যান্ডেলে দুর্বৃত্তের ছোড়া হাতবোমা বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন নয়জন।

এসব ঘটনায় দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। গতকাল শুক্রবার এর প্রতিবাদে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন সংগঠন।

“গত কয়েক মাস ধরে হিন্দুদের মন্দির ও তাঁদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু জড়িতরা ধরা পড়ছে না,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ।

তাঁর মতে, বিচারহীনতার কারণেই একের পর এক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সাধু-সন্ন্যাসীদের ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর এসব হামলার সপ্তাহ কয়েক আগে দেশে শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর একাধিক হামলা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পুরোনো ঢাকার ইমামবাড়ায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলা এবং বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলা। এ দুটি ঘটনায় কমপক্ষে তিনজন মারা যান।

ওই সব ঘটনার রেশ না কাটতেই আবার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা শুরু হয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর নেত্রকোনার বারহাট্টায় স্কুলে যাওয়ার পথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্জুন বিশ্বাসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এর আগে নভেম্বরে ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুর এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে হামলায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক অলোক সেনের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করা হয়।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাহারোলের ডাবোর ইউনিয়নের জয় নন্দ গ্রামে ইসকন মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলায় গুলিবিদ্ধ মিঠুন (২২) ও রণজিৎ চন্দ্র রহিতকে (৪০) প্রথমে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে একজনকে রংপুরে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার পর স্থানীয় সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

“স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছেন, মন্দিরে কীর্তন-ধর্মসভা চলার সময় তিন যুবক গুলি করে এবং কয়েকটি হাতবোমা ছুড়ে মারে। ঘটনায় জড়িতরা চিহ্নিত হবে,” জানান মনোরঞ্জন।


আটক দুজন

ইস্কন মন্দিরে হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শুক্রবার ভোরে মোজাম্মেল হক নামের একজনকে আটক করা হয়েছে । এর আগে ঘটনাস্থল থেকে শরিফুল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

মোজাম্মেলের বাড়ি লালমনিরহাটে। তাঁর কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৩৩টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া-শালবনসংলগ্ন এলাকায় মো. সিরাজ নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে মোজাম্মেল হক ভোরবেলায় আশ্রয় চান। সিরাজের সন্দেহ হলে আশপাশের প্রতিবেশীদের ডাক দেন। প্রতিবেশীরা কিছু জানতে চাইলে মোজাম্মেল পালানোর চেষ্টা করেন।

এলাকাবাসী ধরতে গেলে মোজাম্মেল গুলি ছোড়েন। এতে মো. রফিক (৩২) নামের এক ব্যক্তি আহত হন। এরপর স্থানীয় লোকজন মোজাম্মেল হককে পাকড়াও করে পুলিশে সোপর্দ করেন। আহত রফিককে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার দাবি

দিনাজপুরের কাহারোলে এক সপ্তাহে দুটি মন্দিরে হামলার ঘটনায় জড়িতদের সাত দিনের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ।

গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকায় কান্তজিউ ও ইসকন মন্দিরে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে এই দাবি তোলা হয়।

“দুই হামলার ঘটনায় জড়িতদের সাত দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে,” বেনারকে জানান হিন্দু মহাজোটের প্রেসিডিয়াম সদস্য কালীপদ মজুমদার।

সমাবেশে পড়ে শোনানো এক লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থানে হিন্দু বাড়ি-ঘর ও জমিজমা দখল ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ হত্যা ও হত্যার চেষ্টা চলছে।”

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।  

ইসকন মন্দিরে গুলি ও বোমা হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় আরও বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি, শ্রী শ্রী রাধাবল্লভ জিউ বিগ্রহ মন্দির।


চট্টগ্রামে বিক্ষোভ

দিনাজপুরের কাহারোলে ইসকন মন্দিরে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে ।

শুক্রবার বিকেলে এই সমাবেশ আয়োজন করে চট্টগ্রাম ইসকন রাধামাধব মন্দির, গৌর নিতাই আশ্রম ও মোহরা রাধাগোবিন্দ মন্দির।

‘‘স্বাধীন বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিশ্বাসীদের ওপর বারবার হিংস্র শকুনের থাবা পড়ছে,” সমাবেশে জানান হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত।

সমাবেশে সনাতনী সমাজের ওপর হামলা-নির্যাতন থামাতে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন রানা দাশ গুপ্ত।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।