ব্লগার রাজীব হত্যা: ৮ আসামির বিচার শুরু
2015.03.18
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় আট আসামির বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. রুহুল আমিন বুধবার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য আগামী ২১ এপ্রিল দিন ঠিক করে দিয়েছেন তিনি। খবর বিডিনিউজ২৪এর।
আসামিদের মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী ছাড়া বাকিরা নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস বিভাগের ছাত্র। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মামলার প্রধান আসামি রেজোয়ানুল আজাদ রানা ছাড়া সবাই অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রানা মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
বাকি ছয় আসামি হলেন- সাদমান ইয়াছির মাহমুদ, ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ।
বিচারক তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শুনিয়ে জানতে চান- তারা দোষী না নির্দোষ।
উপস্থিত সাত আসামির সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে সুবিচার চান।
২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।
তদন্ত শেষে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী করা হয় ৫৫ জনকে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন। অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনতেন। এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়।
জসীমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে বাকি আসামিরা ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন। রাহমানিকে ওই হত্যাকাণ্ডে উৎসাহদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পেশায় স্থপতি রাজীব ব্লগ লিখতেন ‘থাবা বাবা’ নামে, যেখানে ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের বিপক্ষে লিখতেন তিনি।
আসামিদের মধ্যে জসীমকে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয় তার আগে মার্চ থেকে অগাস্টের মধ্যে।
মুফতি জসীমের উসকানিমূলক খুতবার বিষয়টি ছাত্রদের জবানবন্দিতেও উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য, রাজীবকে যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ঠিক একইভাবে ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কেও হত্যা করেছে। ধারনা করা হচ্ছে একই মৌলবাদি জঙ্গি গোষ্ঠি এই হত্যার জন্য দায়ী। আনসারউল্লাহ বাংলা ৭ অভিজিতের হত্যার দায় স্বীকার করে টুইটার করেছে, সে কথা জানিয়েছে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। এই ঘটনায় ফেসবুকে অভিজিৎকে হত্যার হুমকির জন্য ফারাবীকে গ্রেফতার করে কিন্তু পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী তার কাছ থেকে হত্যার কোনো ক্লু তারা পায় নাই। হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত আর কাউকে পুলিশ এখন পর্যন্ত আটক করতে পারে নাই।