নির্বাচনে নামলো বিএনপি‏, পরীক্ষার মুখে নির্বাচন কমিশন

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.12.07
BD-election দেশের বিভিন্ন শহরে পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারনা শুরু হয়েছে।
বেনার নিউজ

আবারও নির্বাচনী মাঠে মুখোমুখি হচ্ছে  বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর এবার পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছে তারা। প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন এবং প্রতীকে মেয়র নির্বাচনকে ঘিরে তাই জমজমাট হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পরিমাপক এই নির্বাচনকে ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিয়ে ভোটযুদ্ধের কর্মকৌশল সাজাতে ব্যস্ত উভয় দলের হাইকমান্ড।

মাঠে নেমেছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিকদলসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অন্যান্য শরিকরাও। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে এখন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি নির্বাচন কমিশন(ইসি)। কারণ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুসারে দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণের হবে  আগামী ৩০ ডিসেম্বর। গত মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ পৌরসভা নির্বাচনের এ তফসিল ঘোষণা করেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এবার ২৩৪টি পৌরসভায় ২৩৪টি মেয়র, ৭৩৮টি সংরক্ষিত (মহিলা) কাউন্সিলর এবং ২ হাজার ৯৫২টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে। এতে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৬ জন এবং নারী ভোটার ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪০ জন। ভোট গ্রহণ করবেন মোট ৬১ হাজার ১৪৩ জন কর্মকর্তা। নির্বাচনী এলাকার মোট ৩ হাজার ৫৮২টি কেন্দ্রে ভোট নেয়া হবে।


সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাঝপথ থেকে সরে যাওয়ার পর এবার ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। যাকে ‘নতুন ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। তবে যে কারণেই হোক, বিএনপি এই নির্বাচনে ফিরে আসাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।


বিএনপির যত অভিযোগ

এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মাঠে আছে বিএনপি এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিকরাও। উচ্চ আদালতে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত অংশ নিতে না পারলেও দলটির প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এদিকে প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের চেয়ে অনেকাংশে পিছিয়ে বিএনপি। নানা কারণে বিপর্যস্ত বিএনপির প্রার্থীদের অনেকেই এখনও গ্রেফতার আতংকে ভুগছেন।


সদ্য জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়েই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না। যেভাবে সিটি ও উপজেলা নির্বাচনেও করেনি। তারা মূলত একটি দলের হয়ে কাজ করছে। তবু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। যদি সুষ্ঠভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে বিএনপিই নির্বাচনে জয়লাভ করবে”।

বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধ ধরপাকড় অভিযান অব্যহত রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ বলেছেন, “সরকার তাড়াহুড়া করে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। যার ফলে অতীত নির্বাচনগুলোর মত  এটাতেও দলীয়করনের গন্ধ পাচ্ছি। এজন্য আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছি আমরা”।

আর বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ বলেছেন, “আমরা মনে করি, পৌর নির্বাচন সরকারের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা হবে। এই নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, তাহলে বিএনপির ধানের শীষ বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।”


আওয়ামী লীগ যা বলছে

বিএনপির এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বেনারকে বলেন, “নির্বাচনে জিততে না পারার শঙ্কায় যেকোন নির্বাচনের আগে থেকেই বিএনপির নেতারা  এ ধরনের অভিযোগ করেন। তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চান”।

এদিকে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিষয়েও সমালোচনায় মুখর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, “নতুন কোন ষড়যন্ত্রের জন্য বিএনপি নির্বাচনে এসেছে। তবে জেতার সম্ভাবনা না দেখলে আবারও দলটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে।”

নির্বাচনের কমিশনের ওপর সরকারর চাপ প্রয়োগের বিষয়টি তিনিও অস্বীকার করেন।


কঠিন পরীক্ষায় নির্বাচন কমিশন

পৌরসভা নির্বাচন দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাশাপশি নির্বাচন কমিশনের জন্যও বড় ধরনের পরীক্ষা বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনেরও যোগ্যতার প্রমাণ মিলবে।

এ বিষয়ে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “পৌরসভা নির্বাচনের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে দুই দলের জনপ্রিয়তা যাচাই হবে। এ কারণে উভয় দলের জন্যই এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুষ্ঠুভাবে পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন করার পরীক্ষা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। কারণ, সিটি কর্পোরেশন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে গিয়ে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এবার পৌরসভা নির্বাচনেও যদি যোগ্যতার পরিচয় দিতে তারা ব্যর্থ হয়, তাহলে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে”।

তিনি বলেন, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, “একটি বড় নির্বাচন হিসেবে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবার জন্য সমানভাবে আইনের প্রয়োগ হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।


বৈষম্যের শিকার নারী প্রার্থীরা

এদিকে, এবারও অবহেলার শিকার হচ্ছেন আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়া নারী প্রার্থীরা ।  যোগ্যতার নিরিখে মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে শুধু ‘নারী’ হিসেবেই মূল্যায়ন; বিশেষ করে প্রতীক নির্ধারণের ক্ষেত্রেও তারা লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তীব্র সমালোচনার পরেও চকলেট, পুতুল, চুড়ি, ফ্রক,ভ্যানিটি ব্যাগ, কাঁচি, গ্যাসের চুলা, মৌমাছি, হারমোনিয়ামের মত প্রতীক  নির্ধারণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ  প্রকাশ করেছেন নারী প্রার্থীরা । তাদের অভিযোগ গৎবাঁধা পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার কারণে যোগ্যতা থাকার পরও নারীদের আশানুরূপভাবে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। মানা হচ্ছে না ৩০ শতাংশ নারী প্রার্থী ঘোষণার নিয়মও।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।