ট্যাম্পাকোর ধ্বংস্তুপ সরানোর কাজ চলছে, এখনও নিখোঁজ ১০
2016.09.16

বিস্ফোরণ, ধস ও অগ্নিকাণ্ডের সাত দিন পরেও গাজীপুরের টঙ্গীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানার ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শেষ হয়নি। এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ১০ শ্রমিক। তবে গত সোমবারের পর থেকে আর লাশ পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার উদ্ধার কাজ চলাকালে ওই ধ্বংসস্তুপ থেকে লক্ষাধিক টাকা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি হলেও গতকাল পর্যন্ত কোনও প্রতিবেদন জমা পড়েনি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া গেছে, গ্যাসের লাইন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে।
এদিকে লাশ দাফন বাবদ জেলা প্রশাসনের ঘোষিত সহায়তার অর্থও এখনো পর্যন্ত হতাহতদের পরিবারের কাছে পৌঁছেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিক নেতারা।
আহতদের সুচিকিৎসা ও পুণর্বাসনের পাশাপাশি নিহত প্রত্যেকের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দেওয়া দাবি শ্রমিক সংগঠনগুলোর।
গত সোমবার থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হয়েছে সেনাবাহিনীর একটি দল। কারখানাটির নিখোঁজ ১০ শ্রমিকের সন্ধান করার পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপ সরাতে কাজ করছেন তাঁরা। গাজীপুর সিটিকর্পোরেশন, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরাও তাঁদের সহায়তা করছেন।
সত্তর দশকে নির্মাণ করা ওই ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে কারখানার বিভিন্ন মালামাল বেরিয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার সেখান থেকে লক্ষাধিক টাকা পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে টঙ্গি থানার এস আই সুমন বেনারকে বলেন, “এ পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া কারখানাটি থেকে খাট, ডাইনিং টেবিল, চেয়ারসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ দুই হাজার ৭৫৫ টাকা এবং সাত হাজারের মত পোড়া টাকা রয়েছে। এগুলো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের হেফাজতে রাখা হয়েছে।”
এ ছাড়া উদ্ধারকর্মীরা কারখানাটি থেকে এখন পর্যন্ত ৮০০ টনের মত ধ্বংসাবশেষ ও ৮০টি খালি ড্রাম অপসারণ করেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের তালিকা প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন; সিলেটের রেদওয়ান আহমেদ (৩৬),লক্ষ্মীপুরের রিয়াদ হোসেন মুরাদ (৩২), টাঙ্গাইলের জহিরুল ইসলাম (৩৭), সিরাজগঞ্জের আনিছুর রহমান (৩০), চাঁদপুরের নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (৪৫), কুমিল্লার মাসুম আহমেদ (৩০), ফরিদপুরের চুন্নু মোল্লা (২১), কুমিল্লার মাসুম আহমেদ (৩০), কিশোরগঞ্জের রফিকুল ইসলাম (৪০) ও সিলেটের জয়নুল ইসলাম (৩৫)।
তাদের খোঁজে প্রায় প্রতিদিনই ধ্বংসস্তুপের চারপাশে ভিড় জমাচ্ছেন স্বজনেরা।
গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে টঙ্গীতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন(বিসিক) এলাকার প্যাকেজিং ও প্লাস্টিকের প্যাকেট এবং ফয়েল তৈরীর ওই কারখানায় বিস্ফোরণের পরপর আগুন লাগে। প্রায় তিনদিন পর আগুন নেভাতে সক্ষম হন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
এ ঘটনায় অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক শ্রমিক। এর মধ্যে এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১২ জন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
এ ঘটনায় কারখানার মালিক সৈয়দ মকবুল হোসেনসহ আট কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য গাজীপুর জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সে অর্থ অনেকেই পাননি। দুর্ঘটনার পরপরই নিহতদের লাশ বহনের জন্য ২০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসক। মালিকপক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। নিহতদের স্বজনদের অনেকেই এ টাকা পাননি বলে জানা যায়।
সেদিন শ্রমিকদের পাশাপাশি একজন রিকশাওয়ালা ও কয়েকজন পথচারি নিহত হন। তাঁদের একজন, ময়মনসিংহের রিকশা চালক আব্দুর রাশেদ। ট্যাম্পাকো বিস্ফোরণের সময় এর পাশ দিয়ে রিকশা চালিয়ে যাওয়ার পথে তিনি নিহত হন। ওই পথে যাওয়ার সময় দুই মেয়ে রোজিনা (২১) ও তাহমিনাসহ (১৮) নিহত হন হবিগঞ্জের হানিফ মিয়া।
এদের পরিবারের কেউই লাশ পরিবহনের জন্য জেলা প্রশাসনের সহায়তা পাননি। বিশেষ করে তারা কারখানার শ্রমিক না হওয়ায় টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম আলম বেনারকে জানান, “নিহত কিংবা আহত অনেকের পরিবার সহায়তা নিতে আসেনি। পরিচয়পত্র এবং চেয়ারম্যান বা মেয়রদের প্রত্যয়নপত্রসহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে এখনও টাকা দেওয়া হবে।”
এখনো পর্যন্ত লাশ পরিবহনের টাকা নিহতদের স্বজনদের হাতে না পৌঁছানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিক নেতারা।
এ বিষয়ে বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান বেনারকে বলেন, “মালিক এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অবহেলার কারণেই এমন মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এদের শাস্তির পাশাপাশি আহতদের সুচিকিৎসা ও পুণর্বাসন এবং নিহত প্রত্যেকের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”