৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণের সুপারিশ, খুশি নন ফেলানীর মা–বাবা, বিচার চান
2015.08.31
বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীর পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের ফুল বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে।
যদিও মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ মানার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই ভারতীয় সরকারের, তবে ভারতের একটি সরকারি সংস্থা এই সুপারিশের মাধ্যমে ফেলানী হত্যার দায় স্বীকার করে নিলো। এতে এই হত্যার পরবর্তি ধাপের বিচার আরো প্রসস্থ হবে বলে মনে করেন ফেলানীর আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন।
“ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করার মধ্যদিয়ে অপরাধের দায় স্বীকার করা হলো। ফলে আসামি অমিয় ঘোষের নতুন করে বিচারের দ্বার উন্মোচিত হলো,” বেনারকে জানান আইনজীবী ও কুড়িগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি লিংকন।
ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হওয়ায় ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে এই সুপারিশ করে বলে জানান এই আইনজীবী।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ২০১১ সালে ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ওই কিশোরী। কাঁটাতারের বেড়ায় তার ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এর আগে ভারতের কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন বিএসএফ–এর এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে। এবার ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেল। কমিশন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের এই অর্থ ফেলানীর পরিবারকে দিতে বলেছে।
এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল-ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তা ছয় সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে কমিশনের এক চিঠিতে ।
ওই চিঠিতে বলা হয়, “আমরা জানি, সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে খুবই স্পর্শকাতর একটি দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু দায়িত্ব পালনের সময় তাদের অবশ্যই শৃঙ্খলা ও নীতি অনুসরণ করতে হবে।”
আগে মেয়ে হত্যার বিচার চান ফেলানীর বাবা-মা
“টাকা দিয়ে মেয়েকে ফিরে পাব না। কাজেই আগে মেয়ের হত্যার বিচার চাই। খুনি অমিয় ঘোষের মৃত্যুদণ্ড চাই,” টেলিফোনে বেনারকে জানান ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু।
তাঁর মতে, “হত্যার বিচার টাকা দিয়ে হয় না। আমি ক্ষতিপূরণের দাবি করেছি, তবে আগে ফেলানী হত্যার বিচার হতে হবে। বাবা হিসেবে মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।”
ফেলানীর বাবার মতো মাও ক্ষতিপূরণের এই টাকা দেওয়ার ঘোষণায় সন্তুষ্ট নন। তিনিও আগে বিচার চান।
“টাকা পয়সা চাই না। আগে কঠোর সাজা চাই অমিয় ঘোষের। অমিয় ঘোষকে গুলি করে এ রায় কার্যকর করার দাবি আমার,” মোবাইল ফোনে বেনারের কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান ফেলানীর মা জাহানারা বেগম।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট
ফেলানী হত্যার পর বিএসএফের বিশেষ আদালতে অমিয় ঘোষকে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগ গঠন করে। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেন ওই আদালত।
সেই রায় যথার্থ মনে না করায় বিএসএফের মহাপরিচালক রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দেন। দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের ২ জুলাই রায় পুনর্বিবেচনায় অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।
গত ৮ জুলাই বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের মাধ্যমে ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) নির্বাহী পরিচালক কিরীটী রায়ের কাছে একটি আবেদন করেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম।
হতভাগা ওই বাবা ভারতের উচ্চ আদালতে মেয়ের হত্যার ন্যায়বিচার চান। মাসুম ভারতের সুপ্রিম কোর্টে গত ১৪ জুলাই একটি রিট মামলা দায়ের করে। ২৬ আগস্ট মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ৬ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
“বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। উভয়েই সীমান্তে সংঘাত কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে। এ বিষয়ে আন্তরিকতা প্রমাণের জন্য ফেলানী হত্যার বিচার করাটা ভারতের জন্য একটি বড় সুযোগ ছিল,” বেনারকে জানান আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল।
“তবে সেই সুযোগ এখনো আছে। আমরা বিশ্বাস করি এই হত্যার বিচার গণতান্ত্রিক ওই রাষ্ট্র করবেই,” মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওই উপদেষ্টা।