ড্রোন ব্যবহারের নীতিমালা প্রস্তুত করছে সরকার

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.12.16
BD-fly সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষাথী ড্রোন তৈরি করেছে।
বেনার নিউজ

বাংলাদেশে মনুষ্যবিহীন উড়ুক্কুযান (ড্রোন) ওড়ানোর জন্য নীতিমালা তৈরীর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জঙ্গিদের ড্রোন বানানোর চেষ্টার খবর এবং হযরত শাহজালাল (র.)  বিমানবন্দরে তিন মাসে ৩৮টি ড্রোন আটকের ঘটনায় উদ্বেগ সৃষ্টি  হওয়ার  প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত  অনিবার্য  হয়ে  ওঠে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনুষ্যবিহীন বিমান তৈরির চেষ্টা নিয়ে  উৎসাহ উদ্দীপনা চলছে  নবীন গবেষকদের মধ্যে।  মনুষ্যবিহীন বিমান তৈরীর চেষ্টা করে  সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) চার শিক্ষাথী প্রায় সফল হয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি  ড্রোন নীতিমালা করার তাগিদ  দিয়েছে ।

“সিভিল এভিয়েশন ইতিমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা করেছে। যারা ড্রোন ওড়ায় বা এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে,”  বেনারকে জানান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফারুক খান ।

এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, “বাচ্চাদের খেলনা বিমানও নীতিমালার মধ্যে রাখতে বলা হয়েছে। কারণ ওই ধরনের খেলনা দিয়েও অশুভ কাজ করা যায়।”  

আকাশসীমায় গুপ্তচরবৃত্তি চালানো, নিজ দেশের আকাশসীমা পাহারা,  বেতার ও রাডার সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটানো এবং আড়ি পেতে তথ্য জোগাড় করতে পারে এ ধরণের বিমান। এগুলো পাইলটবিহীন হওয়ায় যুদ্ধে পাইলটের মৃত্যুঝুঁকি থাকে না।

বাংলা উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমানগুলোতে সংবেদনশীল যন্ত্র ও ক্যামেরা থাকে। ওই ক্যামেরার মাধ্যমে গৃহিত ভিডিওচিত্র ভূমি থেকে বিমান নিয়ন্ত্রণকারী অপারেটরের কাছে  পৌছে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি  জাতীয় সংসদ ভবনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ ধরনের বিমান নিয়ে  আলোচনা হয়।

সংসদ সচিবালয় সূত্র  জানায়,  বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নীতিমালা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনী ছাড়া অন্য যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যে কোনো স্থানে ড্রোন ব্যবহার করতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষ -বেবিচকের অনুমতি নিতে হবে।

যেসব স্থানে বিমানবন্দর নেই, সেখানে বেবিচক ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ড্রোন ব্যবহার করা যাবে বলে খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।

এর আগে  গতবছর জানুয়ারিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ‘পরীক্ষামূলক ড্রোন বা রিমোট কন্ট্রোল চালিত বিমান/হেলিকপ্টার’ ওড়ানোর আগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বিমান বাহিনীর অনুমোদন নিতে হবে।

“যে কোনো ধরনের ‘ফ্লাইং মেশিন’ আকাশে ওড়াতে গেলেই আগে অনুমতি নেওয়ার নিয়ম রয়েছে, যা অনেকেই মানছে না“, বেনারকে জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ফ্লাইট সেফটি ও রেগুলেশনস বিভাগের পরিচালক এস এম নাজমুল আনাম।

“যেগুলো খেলনা ফ্লাইং অবজেক্ট, ৫ বা ১০ ফুট ওপরে ওঠে- সেগুলোর কথা আলাদা। কিন্তু যেটাকে ড্রোন বলা হচ্ছে- সেটি আরো বড়, আরো ক্ষমতাশালী। হয়তো ক্যামেরাও লাগানো রয়েছে, এগুলো ১০০ থেকে ২০০ ফুট উঠতে পারে। এগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে, “  জানান নাজমুল।

গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে খেলতে এসে মিরপুর স্টেডিয়ামে ড্রোন উড়িয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। পরে নিষেধাজ্ঞার কথা জেনে ক্ষমাও চায় তারা।

বাংলাদেশে শিশুদের খেলনা উড়োজাহাজ আমদানি করার ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়ারও নিয়ম রয়েছে, যা অনেকসময় মানা হয় না।


দুটি  বিশ্ববিদ্যালয়ে চেষ্টা চলছে

গত বছর ডিসেম্বরে শাবিপ্রবির চার শিক্ষার্থী মনুষ্যবিহীন বিমান ড্রোন তৈরির কাজ শুরু করেন।

“ওটা ছিল ম্যানুয়ালি অপারেটেড এয়ারক্রাফট, যা  ড্রোন তৈরির প্রথম পদক্ষেপ, “ বেনারকে  জানালেন রবি কর্মকার। তিনি  ড্রোনটির  পরীক্ষামূলক হার্ডওয়্যার  প্রোগ্রামিং অংশের কাজ করছেন।  

গত ২৮ জানুয়ারি ওই  ড্রোনটি ১৫ মিনিট আকাশে ওড়ে। তবে  এটির উড্ডয়ন ক্ষমতা ছিল ৪৫ মিনিট।

এর আগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) এক শিক্ষার্থী তৈরি করেছেন  ড্রোনের আদলে মনুষ্যবিহীন আকাশযান। ওই শিক্ষার্থীর নাম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান। তিনি কুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অষ্টম ব্যাচের  শিক্ষাথী।

রিমোট নিয়ন্ত্রিত ওই আকাশযান প্রথম আকাশে ওড়ানো হয় গত বছরের ১০ জুলাই। এরপর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে  বলে। প্রয়োজনে উৎসাহী‌দের সশস্ত্র বাহিনীর পরামর্শ নিতে বলা হয়।

ফারুক খান বলেন, “আমরা বাংলাদেশে আনঅথোরাইজড ড্রোন ব্যবহার দেখেছি। কিছুদিন আগে খেলার মাঠে ব্যবহার হয়েছে। কিছু কিছু অ্যাম্বেসি তাদের নিরাপত্তার জন্য ড্রোন ব্যবহার করে। এ ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার”।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।