অবশেষে বিয়ের বয়স কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটলো সরকার
2015.06.23
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিয়ের বয়স না কমানোর পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি জানিয়েছেন, বিয়ের জন্য ন্যূনতম বয়স ১৮ বছরই থাকছে। এই আইনে কোন পরিবর্তন করা হচ্ছে না।
এর আগে সরকার বিয়ের বয়স কমিয়ে ১৬ বছর করার প্রস্তাব করে। বয়স কমানোর ফলে বাল্য বিয়েকেই উৎসাহ যোগানো হবে বলে সে প্রস্তাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে নারী অধিকার কর্মীরা।
তবে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, বিয়ের বয়স কমানো হচ্ছে না। মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ২১ বছরই থাকছে।
জানা যায়, বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর বহাল থাকলেও এই আইনে একটি ধারা যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার। এর উদ্দেশ্য, ১৮ বছর হওয়ার আগেই বাংলাদেশের সমাজে একটি মেয়েকে নিরাপত্তাহীনতা থেকে শুরু করে আরও যেসব সমস্যার মুখে পড়তে হয় সেসবের মোকাবেলা করা।
শেষ পর্যন্ত সরকারের ‘বোধোদয়’ হওয়ায় বিয়ের বয়স না কমানোর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন নারী অধিকার কর্মীরা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বেনারকে বলেন, “সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আশা করছি সরকারের বোধোদয় হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের ফলে বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির আশঙ্কা কমলো। তবে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে এর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা, দারিদ্র্য মোচন, নারীর ক্ষমতায়ন সহ বিভিন্ন বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “ আমরা যারা নারী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা শুরু থেকেই বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমানোর বিরুদ্ধে ছিলাম। বরং পারলে বিয়ের বয়স বাড়ানো উচিত।”
গত বছর লন্ডনে অনুষ্ঠিত বাল্যবিবাহ বিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঙ্গীকার করেন, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে মেয়েদের বিবাহ বন্ধ করা হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সব ধরনের বাল্যবিবাহ বন্ধ হবে।
এরপরেই ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইনটি যুগোপযোগী করার জন্য আইনের খসড়া করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যাতে বলা হয়েছে বিশেষ পরিস্থিতিতে অভিভাবক বা আদালতের অনুমতিতে ১৬ বছর বয়সেও মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যাবে। ছেলেদের ক্ষেত্রেও বিয়ের বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৯ করার কথা প্রস্তাব রাখা হয় তাতে।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৩৯ শতাংশ এবং ১৮ বছরের মধ্যে ৭৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। এদেশে বাল্যবিবাহের গড় হার ৬৫ শতাংশ। ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের এই হার বিশ্বে সর্বোচ্চ। প্রতিবেশি দেশ ভারতের বাল্যবিবাহের গড় হার ৫০ শতাংশ, নেপালে ৫৭ শতাংশ এবং আফগানিস্তানে ৫৪ শতাংশ।
এ ছাড়া সরকারের ২০১১ সালের সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) বলছে, ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ৬৬ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ১৯ বছরের মধ্যে প্রতি তিনজনের একজন কিশোরী গর্ভধারণ করছে বা সন্তানের জন্ম দিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বেনারকে বলেন, “বিয়ের বয়স কমানো থেকে সরকারের পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পায়। তবে যেভাবে দেশে বাল্য বিবাহ মহামারি আকার ধারণ করেছে তাতে করে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। সমাজকে বাল্য বিবাহমুক্ত করতে আইনের শাসন এবং প্রান্তিক পর্যায়ে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে ধারনা পৌঁছে দিতে হবে।”
বাল্যবিবাহ কমাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক সময় দেখা যায়, একই গ্রামে অনেক এনজিও একই বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তাতে করে অন্যান্য এলাকায় আমাদের কার্যক্রম পৌঁছায় না। তাই সবার সমন্বয়ে বাংলাদেশের সব এলাকায় বাল্যবিবাহ রোধ করতে সব ধরনের কর্মসূচি নিতে হবে। সরকারও এ বিষয়ে অগ্রগতির জন্য দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। আশা করি, এনজিও ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরষ্পরকে সহযোগিতা করে কাজ করবে।”