স্কুল–কলেজে ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেট রাখার নির্দেশে সবাই খুশি
2015.06.26
বাংলাদেশে এমন অনেক স্কুল–কলেজ রয়েছে যেখানে একটা মাত্র টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক—সবাই ওই টয়লেট ব্যবহার করে।
একটি মাত্র টয়লেট থাকায় মেয়েদের বিশেষ করে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছিল।
এই প্রেক্ষাপটে সকল মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসায় ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টয়লেট ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
২৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এই পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, মেয়েদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে কথা বলার জন্য একজন শিক্ষিকাকে নির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব দিতে হবে।
“ছাত্রীদের পিরিয়ডের সময়টি সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর। এ নিয়ে কথা বলা বা সহযোগিতার জন্য বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকাকে দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগ প্রশংসনীয়,” জানান ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ড. মঞ্জুর আহমেদ।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “মাসিকের সময় অনেক মেয়েই স্কুলে যায় না। ফলে তারা ৮০ শতাংশ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারায় উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়।”
২০১৪ সালের বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন বেইজলাইন সার্ভের প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, দেশে প্রতি ১৮৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি টয়লেট আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টয়লেটসমূহের ৪৫ শতাংশ বন্ধ থাকে।
এ ছাড়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ টয়লেটের ভেতরে বা কাছাকাছি পানি ও হাত ধোয়ার জন্য সাবানের ব্যবস্থা থাকে না। রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অভাবে শিক্ষার্থীরা প্রায় অনুপস্থিত থাকে।
রোগ সংক্রমণ রোধ ও শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়াতে এই নির্দেশ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, যারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করে।
“এটা এমন একটি জাতীয় ইস্যু যা বাস্তবায়নে ‘লো কস্ট ক্যাম্পেইন’ শুরু করা যেতে পারে,” বেনারকে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
তাঁর মতে, পরিবার থেকেই শিশুদের বাথরুম ব্যবহার করা শেখানো, স্টুডেন্ট কাউন্সিলকে বাথরুম পরিচ্ছন্ন রাখতে উদ্বুদ্ধ করা ও দায়িত্ব দেওয়া এবং জেন্ডার বান্ধব স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে হবে।
মন্ত্রনালয়ের পরিপত্রে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি এ খাতে পৃথক সংরক্ষিত তহবিলের ব্যবস্থা করবে। কমিটি টয়লেটসমূহ নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ করে সংরক্ষিত তহবিল হতে ব্যয় মেটাবে।
টয়লেট পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শিক্ষকদের নেতৃত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে স্কাউট বা গার্লস গাইডের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে টয়লেট ও স্যানিটেশন কমিটি গঠন করা যেতে পারে। প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দলে বিভক্ত করে পালাক্রমে সারা বছরের জন্য টয়লেট পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব দেবেন।
“কোনো জরিপ বা গবেষণা না থাকলেও অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারী হলে সেই বিদ্যালয়ের বাথরুম পরিষ্কার থাকে,” বেনারকে জানান শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান।
শিক্ষাসচিব মনে করেন, বাথরুম পরিষ্কার রাখার জন্য শুধু টাকাই বড় সমস্যা নয়। কারণ এমনও নজির আছে ১৯ কোটি টাকা তহবিলে থাকলেও সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বাথরুম নোংরা থাকে।
“একটি ভবন নির্মাণ করার চেয়ে এর আয়ুষ্কালে রক্ষণাবেক্ষণ বা পরিচ্ছন্নতার খরচ অনেক বেশি। কিন্তু আমরা শুধু একবারে বিনিয়োগ বা নির্মাণ খরচ নিয়েই ভাবি,” বেনারকে জানান ওয়াটার এইডের দেশীয় প্রতিনিধি মো. খায়রুল ইসলাম। ওয়াটার এইড স্কুল স্যানিটেশন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।
তাঁর মতে, ভবন নির্মাণের মূল প্রকল্পের সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
সরকারের পরিপত্রেও বলা হয়েছে, এখন থেকে নতুন ভবন নির্মাণের সময় রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্ন রাখার খরচ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
“১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ধারণা ছিল বাথরুম দূরে থাকতে হবে, যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়। এর ফলে এক বদনা পানি নিয়ে ঠিকভাবে শৌচকর্ম ও হাত ধোয়া সম্ভব না হওয়ায় ওই ধারণা বদলে যায়,” বেনারকে জানান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানজালা।
তিনি জানান, এই বাস্তবতার আলোকে পরবর্তীকালে সমন্বিত ডিজাইন চালু করায় স্যানিটেশন ব্যবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে, যা আরও করার সুযোগ আছে।
স্কুল স্যানিটেশন বিষয়ে সুফল পেতে চাইলে বেসরকারি সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাতগুলোকে যুক্ত করার আহ্বান জানান রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, শিক্ষক, মুরব্বি বা পুরুষদের সামনে বাথরুমে যাওয়া যাবে না-এই ধারণা এখনো মেয়েদের মধ্যে আছে।
“কোনো বিদ্যালয়ে যদি একটি বাথরুম থাকে, তবে সেটি যেন মেয়েদের ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হয়,” বেনারকে জানান সরকারের যুগ্ম সচিব এবং স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক চৌধুরী মুফাদ আহমদ, যিনি দাতাদের অর্থায়নে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন।