নিহত ২৬ বাংলাদেশি হাজি সনাক্ত, আরো অনেকে এখনো নিখোঁজ

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.09.29
BD-haji সৌদি আরবের মিনায় পদদলিত হয়ে নিহতদের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ২৯ সেপ্টেম্বর,২০১৫
এএফপি

সৌদি আরবের মিনা দূর্ঘটনার পাঁচদিন পর পদদলিত হয়ে নিহতদের মধ্যে  ২৬ জন বাংলাদেশিকে সনাক্ত করার কথা জানিয়েছে সরকার।

মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মিনা দূর্ঘটনায় নিহত হাজিদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশিকে সনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকিদের পরিচয় জানতে হজ এজেন্সি ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এছাড়া আরও ৩৩ জন বাংলাদেশি মিনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

তবে এই ২৬ জন ছাড়া আরো পাঁচজনকে বাংলাদেশি বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জানিয়েছেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ।

বেনারকে তিনি আরো বলেন,  “ইতিমধ্যে পরিচয় পাওয়া তিন বাংলাদেশি হাজির মরদেহ তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরন করা হবে। নিহতদের উত্তরাধিকারী বা স্বজনরা মক্কা বা বাংলাদেশ যেখানে ইচ্ছা সেখানে দাফনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এ জন্য সৌদি আরব সরকার ও বাংলাদেশ হজ মিশন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশি হাজিদের মরদেহ মক্কার মাইসাম হাসপাতালে রাখা আছে। তবে সেগুলো কিছুটা বিকৃত হয়ে গেছে।

দেশে বা মক্কায় অবস্থানরত নিখোঁজ হাজিদের স্বজনদের মাইসাম হাসপাতালে গিয়ে সংরক্ষিত মরদেহ দেখে সনাক্ত করার আহ্বান জানান গোলাম মসিহ।


নিহতের সংখ্যা সহস্রাধিক

গত বৃহস্পতিবার সকালে পবিত্র হজের শেষ পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সৌদি আরবের মিনায় হাজিরা 'শয়তানের স্তম্ভে'  পাথর ছুড়তে যাওয়ার সময় হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে বহু হতাহতের দুর্ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা এক হাজার একশ-তে পৌঁছেছে।

সৌদি আরব সরকার বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের কাছে নিহত হাজিদের ছবি দিয়েছে। এর আগে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের সংখ্যা জানানো হয়েছিল ৭৬৯ জন। আর আহতের সংখ্যা বলা হয়েছিল ৯৩৪ জন।

ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, পদদলিত হয়ে নিহত হওয়া এক হাজারেরও বেশি ব্যক্তির ছবি কূটনীতিকদের হাতে দিয়েছে সৌদি সরকার। তবে মৃতের চূড়ান্ত সংখ্যা নিয়ে এখনো তারা কোনো মন্তব্য করেনি।

লাশ উদ্ধারের পর ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তাদের সনাক্ত করতে রোববার পর্যন্ত ৬৫০ জনের ছবি প্রকাশ করা হয়।

সেসব ছবির সঙ্গে মিলিয়েই বাংলাদেশিদের সনাক্ত করার কাজ করছেন সৌদিতে বাংলাদেশ মিশন,  হজ কর্মকর্তা ও এজেন্সিগুলো।

এরই মধ্যে সৌদি আরব থেকে স্বজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে অনেকেই বাংলাদেশ দূতাবাস ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছেন।   

এর ভিত্তিতে সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০ জনের মৃত্যু ও ৯৮ জন নিখোঁজ থাকার কথা জানানো হয়। তবে হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বাহার সৌদি আরবে বাংলাদেশী হজ মিশনের উদ্বৃতি দিয়ে ১৮জন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার কথা জানান।


অপেক্ষায় আছেন স্বজনরা

জানা গেছে, স্বজনদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দূতাবাস ১২৮ জন নিখোঁজ হাজির তালিকা তৈরি করে। এদের মধ্যে ৩০ জনকে সুস্থ অবস্থায় পাওয়া গেছে। তবে এখনো ৫২ জন হাজি নিখোঁজ আছেন বলে দূতাবাসের কাছে তথ্য আছে।

এদিকে নিখোঁজ হাজিদের তথ্য জানতে উদ্বিগ্ন স্বজনরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আর যারা প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছেন সেসব পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ঘটনার চারদিন পর হাজি মো. আবুল কাশেমের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত হয় তার পরিবার।

তার বড় মেয়ে নুসরাত কাশেম বেনারকে বলেন,  গত রোববার রাতে  আল-ফালাহ ট্রাভেলসের মুয়াল্লিম আবদুল কাদের আব্বার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কোনোভাবেই তার এভাবে চলে যাওয়া মানতে পারছি না আমরা। আমরা আমাদের আব্বার মৃতদেহকে  অন্তত একবার দেখতে চাই।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।