নিহত বাংলাদেশি হাজির সংখ্যা বাড়ছে, মরদেহ পৌঁছাতেও ঘটছে বিলম্ব

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.10.01
BD-haji দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন বাংলাদেশি হাজিরা। ১ অক্টোবর,২০১৫
বেনার নিউজ

আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে সৌদি আরবের মিনায় পদদলিত হয়ে নিহত বাংলাদেশিদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়। আর একাজে অতিরিক্ত সময় মক্কায় অবস্থান করবে অস্থায়ী হজ মিশন। এদিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ ঘটনায় নিহতের মধ্যে ৪১ জন  বাংলাদেশিকে সনাক্ত করার কথাও জানানো হয়েছে।

বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, “অন্য বছর হজ শেষে মক্কার অস্থায়ী হজ মিশন জেদ্দায় চলে আসলেও এবার মিনায় দুর্ঘটনায় হতাহত ও নিখোঁজ বাংলাদেশিদের খোঁজ-খবর নিতে অতিরিক্ত ৪৫ দিন মক্কায় অবস্থান করবে। এই সময়ের মধ্যেই নিহতদের মরদেহ আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে সৌদিতে নিহত কোনো ব্যক্তির ওয়ারিশ না পাওয়া গেলে সেই লাশ সেখানেই দাফন করা হবে।”

সেখানে নিখোঁজদের অনুসন্ধানের পাশাপাশি অসুস্থ বা আহতদের চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
৪১ বাংলাদেশির লাশ সনাক্ত
এক একটি দিন পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বাংলাদেশি হাজিদের লাশের সংখ্যা। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দেওয়া তথ্য মতে, নিহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪১ জন বাংলাদেশিকে সনাক্ত করা গেছে। তার মধ্যে পরিচয় পাওয়া গেছে ১৮ জনের। ১২ জনের নাম জানা গেলেও বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।  তবে নিহতদের মধ্যে বাকিদের পরিচয় জানতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও হজ মিশনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
এছাড়া আরও ৬১ জন বাংলাদেশি মক্কা ও জেদ্দার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।


স্বজনদের সাহায্য চেয়েছে সরকার

নিখোঁজ হাজিদের খুঁজে পেতে স্বজনদের সাহায্য প্রার্থনা করেছে মক্কায় অবস্থানরত বাংলাদেশ হজ মিশন। পররাষ্ট্র  ও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ হাজিদের স্বজনদের মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মৃতদেহ সনাক্ত করতে সৌদি আরবে অবস্থানরত স্বজনদেরকে হজ মিশনের ১০৭  নম্বর কক্ষে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।  ফোন করা যাবে ০০৯৬৬-(০)১২৫৪১৩৯৮০ এই নম্বরে। এছাড়া হাজিদের পরিচয় জানতে ইমেইল করা যাবে missionhajj@gmail.com এই ঠিকানায়।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে পবিত্র হজের শেষ পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সৌদি আরবের মিনায় হাজিরা 'শয়তানের স্তম্ভে' পাথর ছুড়তে যাওয়ার সময় হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে বহু হতাহতের দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত এক হাজার একশ হাজির ছবি প্রকাশ করে সৌদি আরব। বিভিন্ন দেশের কয়েকশ হাজি আহতও হন।


দুঃস্বপ্ন নিয়ে ফিরছেন হাজিরা

এদিকে হজ পালন শেষে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন হাজিরা।  তবে তাদের সঙ্গী হয়ে আছে মিনা ট্র্যাজেডির দুঃসহ স্মৃতি।

দূর্ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী কুমিল্লার হাজি কাজী বশির উদ্দিন ঢাকায় ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে সেই দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা দিয়ে বেনারকে বলেন, “হঠাৎ করেই হুড়োহুড়ি। মানুষের ধাক্কায় প্রথমবার পড়ে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই আবার পড়ে যাই। একের পর এক মানুষ আমার ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিলো আর বেঁচে ফিরতে পারবো না। তবে কোনোরকম উঠে দাঁড়াতে পেরেছিলাম। তবে আমার সামনে আরও অনেকে পড়ে গিয়েছিল। তারা উঠতে পেরেছে কিনা জানিনা।”

একসঙ্গে হজ করতে গিয়ে মা ফিরোজা বেগমকে হারিয়ে একাই দেশে ফিরেছেন জামালপুরের মাজহারুল ইসলাম। বিমানবন্দরে নেমে তিনি বলেন, “কী হচ্ছিল কিছু বুঝতে পারি নাই। পাথর মারতে যাওয়ার পথে হঠাৎ দৌড়াদৌড়ি শুরু হল। একজন আরেক জনের ওপর পড়ছিল। মাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। কিন্তু মানুষের ধাক্কায় আমার হাত থেকে মা হারিয়ে গেল। এরপরেই মানুষের পায়ের চাপে পড়ে আমার মা মারা গেল। তাকে আমি বাঁচাতে পারিনি। তার মরদেহ কোথায়, তাও জানি না। অন্তত তার লাশ নিয়ে দেশে ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হজ এজেন্সি বা মোয়াল্লেম কেউই লাশ খুঁজতে কোন সাহায্য করেনি।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।