‘আইএস’ বনাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, ‘বড়ভাই’ বনাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী

শাহরিয়ার শরীফ ও কামরান রেজা চৌধুরী
2015.10.28
BD-is ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজারের মরদেহ।
এএফপি

দেশে আইএস-এর অস্ত্বিত্ব আছে কিনা তা যাচাই করার ব্যাপারে আমেরিকা সহযোগিতা করতে চাইলে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে, বুধবার বেনার নিউজকে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে তিনি দুই বিদেশি হত্যা ও শিয়াদের উপর বোমা হামলা আইএস-এর কেউ করেছে তা মানতে রাজি না।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হামলাগুলোর আইএস যে দায় স্বীকার করেছে সে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুত্বের’ সঙ্গে নিয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের সরকার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে যারা এই হামলার সাথে জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য”।

তিনি বলেন, “ এটা বলা মুস্কিল যে আইএস সেখানে কতখানি জড়িত বা আদৌ জড়িত কিনা। তবে এখন সেখানে তদন্ত কাজ চলছে, তাদের কোনো সাহায্যের দরকার হলে আমরা সাহায্য করতে চাই। সেটা বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বিষয়টি নিশ্চিত করা”।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বেনারকে বলেন, “সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, আমরা এখনো সাহায্য প্রস্তাবের অপেক্ষায় আছি, যদিও আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি”।

সাবেক সেনাপ্রধান এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার চাইলে আমেরিকার প্রস্তাবের সুযোগ নিতে পারে।

তাঁর মতে, “আইএস নিয়ে বিতর্ক সত্তেও ব্লগার হত্যা, দুই বিদেশি খুন ও শিয়াদের উপর হামলা এইসব মিলে দেশে দূর্যোগের মতো অবস্থা দেখা দিয়েছে। জঙ্গিদের ব্যাপারে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুব বাজে। আমাদের গোয়েন্দারা জঙ্গিদের ধরার ব্যাপারে খুবই দূর্বল। তবু তারা তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই, বাংলদেশে আইএস কোনো কার্যক্রম চালাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহযোগিতা চাইতে পারে”।


সাইট বাংলাদেশের মর্যাদাহানীর চেষ্টা করছেঃ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী

দুই বিদেশি হত্যা ও শিয়াদের উপর সাম্প্রতিক হামলার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কয়েক দফা  এসবের সঙ্গে আইএস’র সম্পৃক্ততা থাকার কথা জোরের সঙ্গে অস্বীকার করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এই সব হামলায় আইএস-এর দাবির খবর দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সেইসব খবর ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন এবং সাইট গ্রুপকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টার জন্য অভিযোগ তোলেন।

বেনারকে তিনি বলেন , “সাইট বাংলাদেশের মর্যাদাহানীর চেষ্টা করছে, যা তাদের প্রপাগান্ডা”।

মঙ্গলবার সাইট তাদের এক বিবৃতিতে, বাংলাদেশে পর পর ৩ টি আক্রমনের সঙ্গে আইএস’র দায় স্বীকারের খবরে তারা আত্নপক্ষ সমর্থন করে জানায়, বিশ্বব্যাপী জিহাদি হুমকির খবরের নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসেবে সুনামের সঙ্গে তারা কাজ করছে।

সাইট আরো জানায়, “ বাংলাদেশ সরকার এইসব আক্রমনে আইএস জড়িত থাকার ব্যাপারে প্রবলভাবে অস্বীকার করে আসছে। উলটো সাইট এবং এর পরিচালক রিতা কাতজের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন প্রচারনার অভিযগ তুলছে”।

আরো জানায়, শুধু সাইট নয়, আইএস’র বিভিন্ন মিডিয়া চ্যানেলে ও তাদের টেলিগ্রাম মেসেজেও ঘটনার দায় স্বীকারের খবর প্রকাশিত হয়েছে।


বড়ভাই-এর ব্যাপারে সুর বদল

ঢাকায় বিদেশি নাগরিক তাবেলা সিজারকে খুনের ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে এম এ কাইয়ুমকে শনাক্তের কথা বলার ১২ ঘণ্টার মধ্যে অবস্থান বদল করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলছেন, ওই বিএনপি নেতা সন্দেহের তালিকায় আছেন।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক বৈঠকের পর আগের দিনের বক্তব্য থেকে সরে যান আসাদুজ্জামান কামাল ।

ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলাকে খুনের ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে ঢাকার সাবেক কমিশনার এম এ কাইয়ুমের নাম মঙ্গলবার রাতে প্রথমে একাত্তর টেলিভিশনকে বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বুধবার সচিবালয়ে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এ ধরনের কথা হয়নি”।

অবস্থান বদল করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি একাত্তর জার্নালকে বলেছি, যুগান্তর পত্রিকায় যেটা ছাপা হয়েছে যে, কাইয়ুম বিএনপির এক ওয়ার্ড কমিশনার, আমরা তাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছি।”

“তাকে (কাইয়ুম) ছাড়াও আরও অনেকজনকে সন্দেহ করেছি, তারাও সন্দেহের তালিকায় আছে ।”

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাইয়ুম ঢাকা মহানগর কমিটিরও যুগ্ম আহ্বায়ক। সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকার সময় তিনি গুলশান-বাড্ডা এলাকার কমিশনার ছিলেন।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে গুলশান-বাড্ডা আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কাইয়ুম। তবে তিনি এখন বিদেশে বলে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।


তাবেলা সিজার হত্যা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

তাবেলা হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর গত সোমবার পুলিশ বলেছিল, এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

পরদিন মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনীতিবিদ রয়েছে। তবে তখন কারও নাম বলেননি তিনি। রাতে কাইয়ুমের নাম বলেন তিনি যা বুধবার দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।

বিদেশি হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত কি না- এ প্রশ্নে মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “আমাদের তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে বাদ বাকি জানা যাবে।”


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি আজগুবি: বিএনপি

ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে বিএনপির ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ কাইয়ুম ওরফে কাইয়ুম কমিশনার জড়িত বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে দাবি করেছেন তাকে ‘আজগুবি’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি ।

দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

আসাদুজ্জামান রিপন অভিযোগ করেন, সরকার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে এ দলের কোনো নেতা-কর্মীর এসব ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যাবে না বলেও দাবি করেন তিনি।

বিদেশি নাগরিক হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আসাদুজ্জামান রিপন সরকারকে এ নিয়ে ‘দোষারোপের রাজনীতি’ না করার আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাবেলা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে যে চারজনকে আটক করা হয়েছে, তাঁরা কেউই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়।


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।