কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে নারীদের আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.12.04
BD-it কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে নারীদের আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে।
বেনার নিউজ

বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে চার বছরের গ্র্যাজুয়েশন কোর্সে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও মাত্র ৩ হাজার শিক্ষার্থী প্রোগামিংয়ে আসে। যেখানে নারী প্রোগ্রামারের সংখ্যা খুবই সামান্য। তাই প্রোগ্রামিংয়ে এবার নারীদের আগ্রহী করে তুলতে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বেনারকে বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের নারীরা। সেই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল বাংলাদেশে সময়ের প্রয়োজনেই আরো প্রোগ্রামার প্রয়োজন। আর অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের মত তথ্যপ্রযুক্তিতেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে চাই। নারী প্রোগ্রামার চাই।’


ন্যাশনাল গার্লস প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (এনজিপিসি)

প্রতি বছরের ৭-১৩ ডিসেম্বর বিশ্ব কম্পিউটার বিজ্ঞান শিক্ষা সপ্তাহ পালিত হয়। সেখানেই অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি এবার শুধু নারীদের জন্য প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা থাকছে।

এর আওতায় হাইস্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে  মেয়েদের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। হাইস্কুলের ২ বা ৩ জনের দল অংশ নিতে পারবে। যেকোনও স্কুলের ২-৩ জন মিলে দল গঠন করতে পারবে। আর একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে গঠন করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় দল। এনজিপিসি’র জন্য হাইস্কুল দলের নিবন্ধন ফি ধরা হয়েছে ৫০০ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১ হাজার টাকা। বিজয়ীদের জন্য আর্থিক পুরস্কারের ব্যবস্থাও থাকছে।


অনলাইনে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা

অনলাইনেও আছে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। এর জন্য নিবন্ধন ফির প্রয়োজন হবে না। হাইস্কুল ও অন্যান্য এই দুই ক্যাটাগরিতে যে কেউ এতে অংশ নিতে পারবে। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে কোডমার্শাল (www.codemarshal.com) প্ল্যাটফর্মে। প্রতিযোগিতায় প্রথম ১০০ জনকে পুরস্কৃত করা হবে এবং অংশগ্রহণকারীদের ডিজিটাল সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এতে সমস্যার সমাধান করতে হবে সি/সি++ প্রোগ্রামিং ভাষায়। আগামী ১১ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।


‘নারী প্রোগ্রামার হাতে গোনা’

প্রোগামিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও প্রেগ্রামিংয়ে এখনও সামান্য সংখ্যক নারীর দেখা মেলে। এ কাজে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে ছোট থেকেই মেয়েদেরকে কোডিংয়ে আগ্রহী করে তুলতে হবে। ন্যাশনাল গার্লস প্রোগ্রামিং কনটেস্টকেও স্বাগত জানিয়েছেন তারা।

একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বি্জ্ঞান বিভাগের ছাত্র প্রবীর কুমার দত্ত বেনারকে বলেন, ‘আমাদের ক্লাসে ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৭জন মেয়ে ভর্তি হয়। পরে অবশ্য একজন অন্য বিভাগে চলে যায়। এ সংখ্যা থেকেই আন্দাজ করা যায়, এই বিষয়ে নারীরা এখনো ততটা আগ্রহী হয়ে ওঠেনি। এর অন্যতম কারণ সমাজে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের মত প্রোগ্রামিং পেশা হিসেবে ততটা পরিচিতি পায়নি”।

তবে সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তিতে মেয়েদের অংশ গ্রহণ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি। একইসঙ্গে  ন্যাশনাল গার্লস প্রোগ্রামিং কনটেস্টকে স্বাগত জানান এই প্রোগ্রামার।

এ প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর পক্ষ থেকে সংগঠনটির সভাপতি শামীম আহসান বেনারকে বলেন, “মেয়েরা অনেকক্ষেত্রে শুরু থেকেই ম্যাথ, সাইন্স, কম্পিউটার সাইন্সের মত বিষয়গুলো এড়িয়ে যায়। মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই গ্যাপটা শুরু হয়, অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ও অনেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ছিটকে যায়”।

তবে তিনি বলেন, এখন চিত্র পাল্টাচ্ছে। প্রযুক্তিতে খাতে নারীদের অবদান বাড়াতে বেসিস উইমেন ফেরামও করেছি। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বেশ কিছু প্রোগামও আয়োজন করেছি। এই সেক্টরে কাজের পরিবেশ অন্যান্য চাকরির চেয়ে অনেক ভাল- এটা আমরা নারীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে প্রোগ্রামারদের সংখ্যা বাড়াতে ছোটবেলা থেকে কোডিংয়ে আগ্রহী করে তুলতে হবে।

দেশে নারী কোডার আর প্রোগ্রামারের সংখ্যা হাতে গোনা উল্লেখ করে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টিম ইঞ্জিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বেসিসের পরিচালক সামিরা জুবেরী হিমিকা বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রিতে নারী কোডার আর প্রোগ্রামারদের অবদান রাখার বিরাট সুযোগ আছে। প্রযুক্তিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ একেবারেই কম। যারা কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনা করছে তাদের সফটওয়্যার পড়ানো হয়, শেখানো হয়। প্রোগ্রামিংটা সেভাবে শেখানো হয় না। এই উদ্যোগটা আমাদের নিতে হবে। দেখা গেল, ৫০০টা অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। খুঁজলে হয়তো দেখা যাবে এরমধ্যে মাত্র ২টা মেয়েদের তৈরি। খুবই হতাশাজনক চিত্র।’


কম্পিউটার সপ্তাহ জুড়ে আরো যা আয়োজন

কম্পিউটার বিজ্ঞান শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে চলতি বছর দেশব্যাপী নানা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর সহ-আয়োজক। এই আয়োজনে আরও সহযোগিতা করছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কোডমার্শাল, ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ, গুগল ডেভেলপার গ্রুপ বাংলা, গুগল উইম্যান টেকমেকার্স ও দ্বিমিক কম্পিউটিং স্কুল।


এই আয়োজনের উল্লেখযোগ্য অংশ হলো দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ার অব কোড বা এক ঘণ্টার প্রোগ্রামিং-এর আয়োজন। এতে হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এ আগ্রহী করে তোলা হবে। এছাড়া ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন প্রোগ্রামিং কনটেস্ট। এই  প্রতিযোগিতায় ৭ হাজারের বেশি প্রোগ্রামার অংশ নেবে বলে আয়োজকরা আশা করছেন।


আগামী ১২ ডিসেম্বর একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাশনাল গার্লস প্রোগ্রামিং কনটেস্ট অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে হাইস্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের মেয়েরা দলগতভাব অংশ নিতে পারবে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং আড্ডা ও প্রোগ্রামিং কর্মশালারও আয়োজন করা হবে। সমাপনী অনুষ্ঠান হবে ১৫ ডিসেম্বর।


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।