জাপানি বৌদ্ধ নারীকে হত্যার পর কবর, গ্রেপ্তার পাঁচ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.11.24
BD-japanese জাপানী নারী হত্যার সঙ্গে জরিত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বেনার নিউজ

ঢাকায় ষাটোর্ধ্ব এক জাপানি বৌদ্ধ নারীকে মুসলিম ধর্মাবলম্বী পরিচয়ে কবর দেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। হত্যা মামলায় পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিন করে পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত ।

ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়া এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি মো. জাকির পাটোয়ারিকে (৪২) গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

এ ঘটনায় গত ২২ নভেম্বর উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশের করা মামলায় বলা হয়, এজাহারভুক্ত আসামিরা কৌশলে মিয়াতাকে অপহরণ করে পরস্পর যোগসাজশে হত্যা করে। তাঁরা মিয়াতার নাম-পরিচয় গোপন করে লাশ গুম করে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। পরে তাঁরা মিয়াতার মালামাল চুরি করে নিয়েছে।

মিয়াতা হত্যা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের খবর জানাতে গতকাল বেলা ১১টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বাতিল করে ডিএমপি।

সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিতে এসেও পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার বিধান ত্রিপুরা পরে চলে যান। জাপান দূতাবাসের অনুরোধে সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন।


মুসলিম নাম দিয়ে কবর দেয়া হয়

গত ১৯ নভেম্বর জাপান দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানায় মিয়াতা নিখোঁজ রয়েছেন বলে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এই জিডির তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে ২৯ অক্টোবর তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পরিচয় ও নাগরিকত্ব গোপন করে হালিমা খাতুন নামে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, মিয়াতার লাশ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে আবেদন করা হয়েছে। কাল বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

“ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে,” সাংবাদিকদের জানান পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার বিধান ত্রিপুরা।

গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ ঢাকা ও লক্ষ্মীপুরে অভিযান চালিয়ে এই মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানার ওসি আবু বকর মিয়া মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন ।

শুনানি শেষে মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী আসামিদের চার দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

গ্রেপ্তার চার ব্যক্তিরা হলেন মো. মারুফুল ইসলাম (৩০), রাশেদুল হক ওরফে বাপ্পী (৪২), ফখরুল ইসলাম (২৭) , বিমলচন্দ্র শীল (৪০) ও মো. জাহাঙ্গীর (২৮)। এদের মধ্যে বিমল পেশায় চিকিৎসক।

তাদের আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা তরে জামিনের আবেদন হলেও তা নাকচ হয়ে যায়।

“গত ২৯ অক্টোবর জাপানি নারী হিরোয়ি মিয়েতাকে হত্যা করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে ওই জাপানি নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে,” আদালতকে জানান পুলিশের এস আই উজির আলী।

“যেসব সামগ্রী আসামিদের কাছে পাওয়ার কথা পুলিশ বলছে, সেই জব্দ তালিকা আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি,” জবাবে বলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী কে এম ফুরকান আলি।  

হিরোয়ি মিয়েতা প্রায় দশ বছর ধরে ‘অবৈধভাবে’ বাংলাদেশে বসবাস করছিলেন এবং এ দেশে বায়িং হাউজের ব্যবসায় জড়িত ছিলেন বলে পুলিশের তথ্য।


ঘটনার বিবরন

মামলার সূত্রে জানা গেছে, মিয়াতা প্রতি সপ্তাহে তাঁর মাকে ফোন করতেন। গত ২৬ অক্টোবর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর মা মিয়াতাকে খুঁজে বের করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে ঢাকায় জাপানি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেন।

জিডির পরে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে এজাহারভুক্ত আসামি জাকিরুল ইসলাম পাটোয়ারি ও মারুফুল ইসলাম ব্যবসায়ী অংশীদার মিয়াতার। তাঁরা মিয়াতাকে উত্তরার সিটি হোমস হোটেলে রাখতেন।

রাশেদুল সুকৌশলে তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এরপর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ফখরুলের বাসায় আটকে রাখেন। তাঁরা মিয়াতাকে আটকে রেখে জাপানে তাঁর স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন।

এজাহারে বলা হয়, বিমলচন্দ্র শীলের উপস্থিতি ও সহায়তায় পাঁচ আসামি ২৯ অক্টোবর ভোররাত চারটার দিকে সুকৌশলে মিয়াতাকে হত্যা করেন। ওই দিন বিকেলে মারুফুল মিয়াতার লাশ সমাহিত করেন। মিয়াতার ল্যাপটপটি রাশেদুলের প্রতিষ্ঠান থেকে জব্দ করে পুলিশ।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ২৭ অক্টোবর মিয়াতা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাঁকে পাশের একটি ওষুধের দোকান থেকে স্যালাইন ও ওষুধ কিনে খাওয়ানো হয়।

বাংলাদেশি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাঁকে কোনো হাসপাতালে নিতেও সাহস করেননি তাঁরা। ২০০৬ সালে মিয়াতার তাঁরা ভিসার মেয়াদ শেষ হয় বলে জানায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামীরা।

সাম্প্রতিক সময়ে ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলাকে গুলশানে ও জাপানি নাগরিক হোশিও কুনিকে রংপুরে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া দিনাজপুরে আরেক ইতালি নাগরিককে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

এসব ঘটনা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে ভিন্ন কায়দায় জাপানি এই নারীকে হত্যার পর কবর দেওয়া হল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।