সিরিজ বোমা হামলায় জড়িত ৫ জেএমবি সদস্যের ১০ বছরের জেল‏

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.10.29
BD-jmb ২০০৫ সালে সিরিজ বোমা হামলায় জেএমবি সদস্যদের ব্যবহার করা বোমা ও অস্ত্র।
অনলাইন

‘জঙ্গি উত্থান’ আর ‘আইএস অস্তিত্ব’ নিয়ে বিতর্কের মাঝেই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পাঁচ সদস্যকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের একটি আদালত। দশ বছর আগে গোপালগঞ্জের আদালত চত্বরে সিরিজ বোমা হামলার মামলায় এ সাজা পেল জেএমবি সদস্যরা। এর পাশাপাশি তাদেরকে আর্থিকভাবেও দন্ডিত করা হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা আর বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গি দমনের চেষ্টা দেশে জঙ্গি উত্থান অব্যাহত রেখেছে। জঙ্গি সম্পর্কিত মামলাগুলো পরিচালনায় বিশেষ আদালত গঠনের এবং জঙ্গি দমনে তাদের উৎসে আঘাত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তারা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগম গোপালগঞ্জের আদালতে সিরিজ বোমা হামলা মামলার রায় দেন। এ রায়ে সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- মিলন খান, জিল্লুর রহমান মোল্লা, জিয়াউর রহমান, গিয়াস উদ্দিন ও হাসান আলী।

রায় সম্পর্কে সরকার পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ শামসুল হক বাদল বলেন, ১০ বছরের জেলের পাশাপাশি আসামিদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। এ অর্থ অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে আসামিদেরকে।”

তিনি বলেন, “রায়ে বিচারক দণ্ডিতদের জেএমবি সদস্য বলেছেন কিনা জানি না। তবে মামলার নথিপত্রে তাদের ‘জামায়াতুল মুজাহেদীনের (জেএমবি) সঙ্গে যুক্ত’ বলা হয়েছে।”

তবে এ মামলার আরো ৪ আসামিকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। এরা হলেন- রাকিব, মামুন, আনিসুর রহমান  ও আনিছুজ্জামান।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট গোপালগঞ্জের জজ কোর্ট চত্বরসহ পাঁচটি জায়গায় সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানার এসআই সিরাজুল হক বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করেন।

২০০৬ সালের ১৬ জুন সদর থানার ওসি রুহুল ইসলাম ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন, যাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
এই মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে ৩৪ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

এর আগে গত ১১ অগাস্ট গাজীপুরে সিরিজ বোমা হামলার মামলায় ১৭ জন জেএমবি সদস্যকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার আরেকটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল।


‘বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা বড় দূর্বলতা’

দ্রুত বিচার আদালতেও মামলাটির রায় হতে ১০ বছর সময় লাগার সমালোচনা করেছেন বিশ্লেষকরা। জঙ্গি দমনে এটি অন্যতম দূর্বলতা বলে মনে করেন তারা। এছাড়া জঙ্গির উৎসে আঘাত করার ক্ষেত্রেও সরকার ব্যর্থ বলে অভিযোগ সমালোচকদের।

এ বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বেনারকে বলেন, “বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা বাংলাদেশের অন্যতম একটি নেতিবাচক দিক। সারাদেশের আদালতগুলোতে প্রায় ৩০ লাখের বেশি মামলা জমে আছে। এই মামলার জটে না ফেলে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো সন্ত্রাস দমন আইনে নতুন আদালত গঠন করে বিচার করা উচিত। কারণ, এটা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে”।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সকল জঙ্গির গড ফাদার জামায়াত। একারণে জঙ্গি নির্মূলে সবার আগে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের অর্থের উৎস, সামাজিক সাংস্কৃতিক অবস্থান নষ্ট করতে হবে, সরকারের নিয়ন্ত্রেণে আনতে হবে। আমাদের মাদ্রাসাগুলোতে এখনো জামায়াতের সংস্কৃতি পড়নো হচ্ছে। তারাই জঙ্গি হয়ে উঠছে। একটাকে গ্রেফতার করলে এক লাখ বেরুচ্ছে। তাই যুদ্ধাপরাধরাধীদের বিচারের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামকে নির্মূল করতে হবে।


হোসেনি দালানে বোমা হামলায় আহত আরো একজনের মৃত্যু

এদিকে আশুরার সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে এই ঘটনায় দুইজন মারা গেলেন।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জামাল উদ্দিন (৫৫) নামের আহত ব্যক্তি মারা যান।

গত ২৪শে অক্টোবর আশুরার রাতে ঢাকার পুরনো অংশের হোসেনি দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় পরপর বেশ কয়েকটি বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই এক কিশোর নিহত হয়। ওই হামলায় পঞ্চাশজনের বেশি আহত হয়। ওই বোমা হামলার ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

হামলার পেছনে মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট-এর সম্পৃক্ততা দাবী করা হলেও, এর পেছনে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।