বিশেষ ট্রাইব্যুনালে খালেদার বিচার হবে, সংসদে হাসিনা

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.07.09
BD-khaleda দলীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। ৮ জুলাই,২০১৫
বেনার নিউজ

পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যার অভিযোগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও জনবল পাওয়ার পরই এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে।

৮ জুলাই জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, পেট্রলবোমা হামলার নির্দেশদাতা খালেদা জিয়া এবং তাঁর সহযোগী সব অপরাধীর নামে দায়ের করা মামলাগুলোর বিচার করার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

তবে ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগ পর্যন্ত দ্রুত এসব অপরাধের বিচার করার জন্য দায়রা জজকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

“বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এবং জনবল চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে,” বেনারকে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সরকারি দলের সেলিনা বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার হুকুমে এ বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে চলমান হরতাল ও অবরোধে মোট ১৩৪ জনকে হত্যা করা হয়। তাদের ইস্যুবিহীন কথিত আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে ১ হাজার ৩৯৫টি যানবাহন, ১৩ দফায় ট্রেনে এবং ৬ দফা লঞ্চে নাশকতা চালানো হয়।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হিসেবে, এ বছরের শুরু থেকে আগুন-সন্ত্রাসের ৩৮৮টি ঘটনা পুলিশ তালিকাভুক্ত করেছে। এসব ঘটনায় ঘটনাস্থলে ধরা পড়া ৫৭৯ জনের মধ্যে ৩৬৫ জন ছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মী। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ২০৫ জনের।

“আগুন সন্ত্রাসী খালেদা জিয়ার বিচার করতেই হবে। আদালত সিদ্ধান্ত দেবে তাঁর রাজনীতি করার অধিকার আছে কি নেই” বেনারকে জানান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।


বিএনপির প্রতিক্রিয়া

তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের মধ্যে বিএনপি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। ৯ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে করে  বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন একথা জানান।

“এখন দেশে একদলীয় শাসন চলছে। সরকার নিজেদের মতো করে সংসদ সাজিয়েছে। বিরোধী দলও তাদের। সুতরাং তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো আইন করবে, সিদ্ধান্ত নেবে। তাতে কেউ বাধা দেবে না। তাদের কর্মকাণ্ড যদি গণতান্ত্রিক নিয়মনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয়, তাতেও কারো কিছু বলার নেই,” বেনারকে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপির ৩ মাস ধরে অবরোধ চলাকালে এসব নাশকতার বিরুদ্ধে সারা দেশে অসংখ্য মামলা হয়েছে। বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় তাদের দলের নেতা-কর্মীদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। কয়েকটি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও আসামি করা হয়েছে।

এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার দুটি মামলায় খালেদা জিয়াসহ দলের ২৮ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। দুটি মামলাতেই খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখানো হয়েছে। অভিযোগপত্র দুটি আদালত এখনো আমলে নেননি।

নাশকতার ঘটনা ছাড়াও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, নাইকোসহ অর্ধডজন মামলা রয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে, যেগুলো শুনানীর পর্যায়ে আছে।


খালেদার সৌদি আরব না যাওয়া নিয়ে গুঞ্জন

ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সৌদি আরবে তাঁর পূর্বঘোষিত সফরে যাননি। শেষ মুহূর্তে সফর স্থগিত করা নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে। ৮ জুলাই সৌদি আরবের উদ্দেশে তাঁর ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল।

দলের একটি সূত্র জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন নিয়ে হয়রানির নেপথ্যে সরকারের কূট তৎপরতা আছে, এ তথ্য পেয়ে খালেদা জিয়া শেষ মুহূর্তে যাত্রা বাতিল করেছেন।

শেষ মুহূর্তে সফর বাতিলের কারণ হিসেবে মির্জা ফখরুলের বিষয়টি ছাড়াও আরও দুই রকম ভাষ্য পাওয়া গেছে দলের অপর দুটি সূত্র থেকে। তা হলো, খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সফরসঙ্গী হিসেবে সৌদি দূতাবাসে ১৫ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। সৌদি দূতাবাস সবাইকে রাজকীয় অতিথি করতে রাজি না হওয়ায় জটিলতা দেখা দেয়।

অপর ভাষ্যটি হচ্ছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্য থেকে তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে দলীয় বিষয়ে মা-ছেলের আলোচনা হবে, দলে এমন কথা বলাবলি হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তারেক রহমান সৌদি ভিসা হাতে পাননি বলে তৃতীয় সূত্রটির দাবি।

দলীয় এই তিনটি সূত্রের কেউই সফর একেবারে বাতিল হয়ে গেছে কি না, তা নিশ্চিত করেননি। তাঁরা এটাকে আপাতত স্থগিত বলে মনে করছেন।

“খালেদা জিয়া রোজায় বা ঈদের পরে সুবিধামতো সময়ে ওমরাহ পালন করতে যাবেন,” ৮ জুলাই দুপুরে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

আসাদুজ্জামান বলেন, সৌদি সরকার প্রতি বছরের মতো এবারও যথাযথ সম্মানের সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রতি বছরই রমজানে তিনি ওমরাহ পালন করেন। এবার রমজানের শুরু থেকেই বিএনপির চেয়ারপারসনের শরীর ভালো যাচ্ছে না। এ কারণে এবার তাঁর না যাওয়ারও চিন্তা ছিল। সে কারণে ‘হয়তো’ এবার তিনি ওমরাহ পালনে যাচ্ছেন না।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।