কিশোর রাজন হত্যার বিচার শুরুর নির্দেশ, রাকিব হত্যার অভিযোগ আমলে

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.09.22
BD-killing কিশোর রাজন ও রাকিব হত্যাকান্ডের পর বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী, ছাত্র সংগঠনের কর্মী সহ জনগন ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানায়। ৭ আগস্ট, ২০১৫
বেনার নিউজ

কিশোর শেখ সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৩ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে মঙ্গলবার সিলেটের আদালত। অন্যদিকে, আরেক কিশোর রাকিব হাওলাদারকে পিটিয়ে হত্যা মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছে খুলনার আদালত। মামলাগুলোর অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে কিশোর দুটির পরিবার।

মঙ্গলবার সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা বর্বোরোচিত এই কিশোর হত্যা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য শুরুর জন্য ১ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। এসময় আদালতে আসামিদের ১০ জনকে উপস্থিত করা হয়। বাকি তিনজনই পলাতক, যাদের মধ্যে প্রধান আসামি কামরুল সৌদি আরবে আটক আছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মফুর আলী বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া লাশ গুম করার চেষ্টার অভিযোগে এদের মধ্যে চার আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় পৃথক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।”

আদালতে হাজির করা আসামিরা হলেন- সদর উপজেলার শেখপাড়ার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম, তার ভাই মুহিত আলম, আলী হায়দার ও শামীম আহমদ; পাভেল আহমদ, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমিন, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, দুলাল আহমদ, নুর মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল্লাহ ও আয়াজ আলী।

তবে পলাতক কামরুল, শামীম ও পাভেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে।

এসব আসামিদের মধ্যে মুহিত আলম, ময়না চৌকিদার, শামীম আহমেদ ও তাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে লাশ গুমের অভিযোগ আনা হয়।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের মোট ৩৮ জনের জাবানবন্দি শুনবে আদালত।

এদিকে ছেলের হত্যার বিচার শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন রাজনের বাবা আজিজুর রহমান।

তিনি বেনারকে বলেন, “প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হওয়ায় আমি সন্তুষ্ট। তবে প্রধান আসামি কামরুলকে ফেরত আনার বিষয়ে নানা ধরনের মন্তব্য শুনলেও আজ অবধি বিষয়টির কোন অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। তাকে দ্রত ফিরিয়ে আনা সহ বাকি আসামিদের আটক করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সম্পন্ন করার আহবানও জানাচ্ছি।”

গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে খুঁটিতে বেঁধে ১৩ বছরের রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে নির্যাতনকারীরা তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তোলপাড় শুরু হয়। একে একে জনতা ধরিয়ে দেয় রাজন হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের। পালিয়ে সৌদি আরব গিয়ে প্রবাসীদের হাতে ধরা পড়েন ঘটনার মূল হোতা কামরুল ইসলাম। ঘটনার দেড় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে গত ১৬ আগস্ট ১৩ জনকে আসামি করে মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার।


‘অক্টোবরের ১ম সপ্তাহে আনা হবে কামরুলকে’

সৌদি আরবে আটক হওয়া কামরুলকে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফেরত আনা হতে পারে বলে বেনারকে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ। তিনি বলেন, “রাজন হত্যার এই আসামিকে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তবে পবিত্র হজের কারণে সৌদিতে এখন সরকারি ছুটি চলছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ছুটি শেষ হবে। এরপর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই কামরুলকে দেশে নেওয়া হতে পারে।”


রাকিব হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু ৫ অক্টোবর

এদিকে খুলনায় কিশোর রাকিব হত্যা মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে আগামী ৫ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের তারিখ ধার্য করেছে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত। মঙ্গলবার একইসঙ্গে আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করেন আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা।

গত ২৫ আগস্ট  ঘটনার মাত্র ২২ দিনের মাথায় খুলনার কিশোর রাকিব হাওলাদার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পুলিশ। এতে প্রধান অভিযুক্ত ওয়ার্কশপ মালিক মো. শরীফ, তার মা বিউটি বেগম এবং শরীফের দূর সম্পর্কের চাচা মিন্টু মিয়াকে আসামি করা হয়। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন,  “গত ৬ সেপ্টেম্বর মহানগর হাকিম ফারুক ইকবাল অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারিক কাজের নির্দেশ দিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর (আজ) পরবর্তী শুনানির আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় অভিযোগপত্রটি মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত তা আমলে নেন। একই সঙ্গে আদালত অভিযোগপত্রে নাম থাকা তিন আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।”

গত ৩ আগস্ট নগরের টুটপাড়া কবরখানার পাশের শরীফ মোটরসে মোটর সাইকেলের হাওয়া দেওয়ার কমপ্রেসর মেশিন দিয়ে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে রাকিবকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ওই গ্যারেজের মালিক মো. শরীফ, তার সহযোগী মিন্টু এবং শরীফের মা বিউটি বেগমকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ঘটনার পরদিন তিনজনের নামে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা হয়।

রাকিবের বাবা নুরুল আলম হাওলাদার বেনারকে বলেন,  “মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া থেকে শুরু করে সকল প্রক্রিয়ায়ই দ্রুত গতিতে হচ্ছে। আমরা এতে সন্তুষ্ট। বিচারের শেষ দিন পর্যন্ত এই গতি বজায় থাকুক সেটাই চাওয়া। যাতে রাকিবের হত্যাকারীরা সঠিক বিচার পায়। এর বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমার।”


‘জনগণের সাফল্য’

রাজন ও রাকিব হত্যার ঘটনায় করা মামলাগুলোর প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে চলার কৃতিত্ব পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা বা সরকারকে নয়, জনগণকে দিতে চান মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন, জনগণ বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছিল বলেই সরকার বা প্রসাশন দ্রুততার সঙ্গে মামলাগুলো পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান বেনারকে বলেন,  “আমাদের দেশের নিয়মই হয়েছে, জনগণ যে বিষয়টি নিয়ে নাড়া দেয় সরকারও সে বিষয়ে অতিমাত্রায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। অন্যথায় বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও এ ধরনের বিচার আলোর মুখ দেখে না। রাকিব কিংবা রাজন হত্যার বিষয়টিও তেমনটি হয়েছে। জনগণের স্বতর্স্ফুর্ত প্রতিবাদের মুখে চাপে পড়ে সরকার। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সরকারের প্রসাশন বিষয়গুলো নিয়ে সক্রিয় হতে বাধ্য হয়েছে। তাই বলব, এই দ্রুত গতিতে মামলা চলার সাফল্য সরকারের নয়, জনগনের। সকল মামলার বিচার যদি এ ধরনের দ্রুত গতিতে চলে তখনই সরকারের সাফল্য বলা যাবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।