ইতালীয় নাগরিক খুনের তদন্তে অগ্রগতি নেই, রাজনীতিতে নতুন খোরাক

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.09.30
BD-killing ইতালীয় নাগরিকের হত্যাকারী খুঁজে পেতে পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে। ৩০ সেপ্টেম্বর,২০১৫
বেনার নিউজ

ইতালীয় নাগরিক খুনের ঘটনায় বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার মন্তব্যের সূত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনার নতুন খোরাক যুগিয়েছে। যদিও ৪৮ ঘণ্টায় ওই হত্যার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেনি।  

গত সোমবার রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। জঙ্গি হামলার শঙ্কায় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের সফর নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে এই ঘটনা দেশে-বিদেশে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক অনুষ্ঠানে  বিএনপির স্থায়ী কমিটির  সদস্য  আবদুল মঈন খান ওই হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “সাম্প্রদায়িক জুজুর ভয় দেখিয়ে এদেশে কেউ পার পাবে না। পশ্চিমা বিশ্বে এই জুজুর ভয় দেখিয়ে এই সরকার হয়তো অনেক কিছু লুফে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা যে সেটা পারবে না,  জুজুর শিকার নিজেরাই হবে- তার প্রমাণ ঘটে গেছে গতকাল সন্ধ্যায়।”


বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকে ‘ক্ষয়িষ্ণু’  অভিহিত করে মঈন বলেন, “একজন সম্পূর্ণ নির্দোষ ব্যক্তি যিনি এদেশের নাগরিকও নন, এ দেশের কোনো ভালো-মন্দের সঙ্গে জড়িত না হয়েও একমাত্র এই দেশের ক্ষয়িষ্ণু সমাজ ব্যবস্থার শিকার হয়ে  তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।”


মঈন খানের বক্তব্যের এ প্রসঙ্গ টেনে যুক্তরাষ্ট্রে সফররত প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখন তো সন্দেহ হয় যে, ওই ঘটনার সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা। উনাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত, আমি দেশে ফিরে সে ব্যবস্থাও করব।”

বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  যারা বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল’ করতে চায়, তারাই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকতে পারে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়াকে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’  চাপানোর চেষ্টা বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল বুধবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, “যখন রাষ্ট্র পরিচালনা ও সুশাসনের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আসে, তখন নিঃসন্দেহে অন্যের ওপর দোষারোপ করে তারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চান।’’

কারাবাস ও যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা শেষে নয় মাসের বেশি সময় পর গতকাল বেলা ১১টার দিকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান ফখরুল। সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।


জঙ্গিবাদ আছে কি নেই

সিজার হত্যার দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।  জঙ্গিগোষ্ঠীর এই দায় স্বীকার নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দেশে আইএস বা আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব বা কর্মকাণ্ড নেই।

বুধবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে  ইতালির দূতাবাস একমত যে এটা আইএসের কাজ নয়। সচিবালয়ে  ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিয়ো পালমার সঙ্গে বৈঠক শেষে  মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

“এতোদিন সরকার পশ্চিমা বিশ্বের কাছে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের ধোঁয়া তুলে যে খাল কেটেছে, সেই খালে সরকার নিজেই পড়েছে,”  বেনারকে জানান মঈন খান।

জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা ‘পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন’  মন্তব্য করে  মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “একদিকে তাদের মন্ত্রীদের মধ্যে অনেকে বলেন, এখানে জঙ্গিবাদ আছে। আবার অনেকে বলেন,  এখানে কিছু নেই। এটা পরস্পরবিরোধী অবস্থান।’’

“আজ দেশে যা কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে,  তার কারণ হচ্ছে- দেশে সুশাসনের অভাব,  আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অভাব ও গণতন্ত্রের অভাব,’’  জানান ফখরুল।


রেড অ্যালার্ট জারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিস্ময়

সিজার হত্যাকাণ্ডের পর অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।   

জাতিসংঘ অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন,  “এই নিউ ইয়র্ক শহরেও আওয়ামী লীগ নেতা নজমুলকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তাই বলে কি এই সিটিতে রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছিল?”

ঘটনাটি ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’  বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন,  “বাংলাদেশই শুধু নয়,  এখন বিশ্বব্যাপী এমন সন্ত্রস্ত পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা কোনো জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করি না। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানও আমরা চাই না।”

এদিকে সিজার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আর্ন্তজাতিক প্রতিক্রিয়া অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ। বুধবার বিকেলে গুলশানে হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করতে এসে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বেনজির বলেন,  ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে। কিন্তু এ ঘটনায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া অপ্রত্যাশিত’।


১১ সদস্যের  দল গঠন

গুলশানে কূটনীতিকপাড়ায় ইতালীয় নাগরিক সিজারকে হত্যার ঘটনা তদন্তে পুলিশের গঠন করা কমিটিকে সহায়তার জন্য ১১ সদস্যের একটি দল গঠন করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে গতকাল পর্যন্ত এই হত্যার তদন্তে অগ্রগতি হয়নি।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ হত্যাকাণ্ড তদন্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার মো. মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে এক সদস্যের যে কমিটি করা হয়েছে তাকে সহায়তা করতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের বাছাই করা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদন্ত সহায়তা টিম গঠন করা হয়েছে ।

“মহানগর গোয়েন্দা শাখার ডিসি মাহবুব আলমের সমন্বয়ে ১১ সদস্যের তদন্ত সহায়তা দলে একজন উপকমিশনার ও চারজন অতিরিক্ত উপকমিশনার রয়েছেন,”  বেনারকে জানান মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।