প্রকাশক হত্যার বিরুদ্ধে সারাদেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.11.02
BD-killing গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মিরা প্রকাশক হত্যার প্রতিবাদে সোমবার শাহবাগে মশাল মিছিল করে। ২ নভেম্বর, ২০১৫
বেনার নিউজ

নৃশংস হামলা চালিয়ে ঢাকায় গত শনিবার এক প্রকাশককে হত্যা এবং আরেক প্রকাশকসহ দুই যুবককে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা, যাঁরা সবাই ব্লগার। একজন প্রকাশককে হত্যা, আরেকজন প্রকাশককে হত্যাচেষ্টার যোগসূত্র হচ্ছে, তাঁরা দুজনই অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করেছেন।

এই হত্যা ও হামলার বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ, সারাদেশে চলছে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ। গণজাগরণ মঞ্চ মঙ্গলবার সারাদেশে অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে। দেশের পুস্তক ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান বন্ধ রেখে তিন দিনের শোক পালনের কর্মসূচি দিয়েছেন। শিক্ষক-লেখক সাধারন ছাত্ররা প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী অভিজিৎ রায়কেও এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে একুশের বইমেলায় হাজার হাজার মানুষ ও পুলিশের সামনে হত্যা করা হয়, একই সময় তাঁর স্ত্রী রাফিদাকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়েছিল দুর্বৃত্তরা।

দুই প্রকাশক হলেন জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সল আরেফিন (দীপন) ও শুদ্ধস্বরের আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল)। টুটুল বেঁচে গেলেও পৃথক ঘটনাস্থলে মারা যান দীপন।

অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি প্রকাশ করেছিল জাগৃতি প্রকাশনী। আর তাঁর ‘অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই বের করেছে শুদ্ধস্বর।

নিহত প্রকাশক দীপনের বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক ও লেখক। আবার নিহত লেখক অভিজিতের বাবা ড. অজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান অধ্যাপক, লেখক ও শিক্ষাবিদ।

এসব ঘটনা ও যোগসূত্র দেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। আতঙ্কিত করে তুলেছে মুক্তচিন্তার নাগরিকদের।

যেভাবে ঘটনা ঘটেছিল

ওই দিন বেলা আড়াইটায় লালমাটিয়ায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। সেখান থেকে তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে যখন চিকিৎসা চলছিল, তখন জানা গেল, শাহবাগে আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটে আরেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির কার্যালয়ের ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক ফয়সল আরেফিন দীপন। দুটি ক্ষেত্রেই হামলার পর কার্যালয়ের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

ফয়সলকে (৪৩) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

কারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত—জানতে চাইলে আবুল কাশেম ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টা অত্যন্ত স্পষ্ট। লালমাটিয়ায় যারা হামলা করেছে, তারাই দীপনকে হত্যা করেছে। অভিজিৎ দীপনের বন্ধু ছিল। ওর বইও দীপন বের করেছে। তবে সে ধর্মের বিরুদ্ধে কখনো লেখেনি। কোনো উসকানিও দেয়নি। কখনো কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেনি। কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতাও নেই।”

রাতে এই দুই হামলার দায় স্বীকার করে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলাদেশ শাখা—আনসার আল ইসলাম। নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টে এই বিবৃতি দিয়ে এ দায় স্বীকার করা হয়। তবে এই দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ধারণা, চার ব্লগারের মধ্যে ঘাতকদের লক্ষ্য ছিল দুজন—ফয়সল আরেফিন ও আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল)। এই দুজনই ছিলেন অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক, একই সঙ্গে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার।

তাঁদের মতে, একা থাকায় দীপন বাঁচতে পারেননি, আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ভেতর তাঁকে কুপিয়ে তালাবদ্ধ করে রেখে যায় ঘাতকেরা।

আর লালমাটিয়ায় আহমেদুর রশীদ চৌধুরীকে হত্যা করতে গেলে তাঁর সঙ্গে থাকা দুই ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুকেও দুষ্কৃতকারীরা কুপিয়ে দরজা বন্ধ করে রেখে যায়। আহত অবস্থায় রণদীপম পুলিশকে এবং ফেসবুকে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান। তারপর পুলিশ এসে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে।

এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এবং ৩ অক্টোবর রংপুরে যথাক্রমে দুই বিদেশি নাগরিক সিজার তাবেলা ও কুনিও হোশিকে হত্যা, এরপর ৫ অক্টোবর ঢাকায় পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খানকে হত্যা এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে একজন ধর্মযাজককে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

গত ২৩ অক্টোবর পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হামলায় দুজন নিহত হয়। এসবের রেশ না কাটতেই গতকালের এই নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে।

পাঁচজন ব্লগারকে এর আগে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ঘটনার বিচারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। নিহত ব্লগাররা হলেন আহমেদ রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়। গত বছর ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ব্লগার হত্যাকাণ্ড। তখন থেকে একটির পর একটি ঘটনা ঘটছে, আর আগের ঘটনা হারিয়ে যাচ্ছে বা ধামাচাপা পড়ছে।

“আগের পাঁচজন ব্লগারকে হত্যা এবং শনিবারে আজিজ সুপার মার্কেট ও লালমাটিয়ায় হামলার ধরন একই। এ সবই একই সূত্রে গাঁথা,” সাংবাদিকদের জানান গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ।

তবে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি হয়নি বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব দেশেই এ রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। আনসারুল্লাহ, জেএমবি বা আইএস—যারাই এটা করুক না কেন, তারা যুদ্ধাপরাধী বা জামায়াত-শিবিরের লোক। যারাই জড়িত থাকুক না কেন, আমরা খুঁজে বের করব।’

তবে গত দুই বছর নাশকতা দমনে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারলেও উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দক্ষতা দেখাতে পারেনি বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, “গোপন-অতর্কিত হামলা থেকে কেউই নিরাপদ নয়, আমিও নই।”

তবে এসব হামলা ঠেকানো কঠিন বলে মনে করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। গত রোববার মিন্টো রোডে ডিবির দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এগুলো ‘টার্গেটেড কিলিং’। দৃশ্যমান পুলিশের নিরাপত্তা দিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করা কঠিন।

পুলিশি সাহায্য চেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেছিলেন হামলার শিকার শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশীদ। এরপরও কেন হামলা এড়ানো গেল না, জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ এ রকম অনেক ঘটনা প্রতিরোধ করেছে। আহমেদুর রশীদ জিডি করার পর পুলিশ সেখানে গিয়েছে। এরপরও হামলা হয়েছে।


ছেলের হত্যার বিচার চান না বাবা

সন্তান খুন হওয়ার পর আবুল কাশেম ফজলুল হকের বিচার প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে। কেউবা বিস্মিত হয়েছেন, কেউবা ক্ষুব্ধ।

“বিচার চেয়ে আর কী হবে? এ দেশে রাজনৈতিক সমাধান যতক্ষণ পর্যন্ত না হচ্ছে, ততক্ষণ আইনগত কোনো সমাধান সম্ভব না। আমার কাছে মনে হয়, আগে এটা আদর্শগত ও রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে,” বেনারকে জানান আবুল কাশেম ফজলুল হক।

তিনি বলেন, “এটা মোটেও আবেগ বা ক্ষোভের বিষয় নয়। আমি এটা ভেবে ও নিজের যৌক্তিক বিবেচনাবোধ থেকে বলেছি। বিচার দিয়ে বা আইন-আদালত দিয়ে আমরা একজনকে শাস্তি বা জেল-ফাঁসি দিতে পারি। কিন্তু যদি দেশের সার্বিক উন্নতি না হয়, সবার বিচার তো আর হবে না”

তিনি আরও বলেন, “তাই আমি শুভ বুদ্ধির জাগরণ চাই। সেই জাগরণ হতে হবে সমাজে, রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে।”

রাফিদারও বিচার প্রত্যাখ্যান

বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যার বিচার চান না তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ (বন্যা)। গত রোববার তাঁর ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা লিখেছেন। তাঁর লেখার শিরোনাম ‘আমিও বিচার চাই না’।

রাফিদা আহমেদ তাঁর পেজে লেখেন, “দীপনের (জাগৃতির প্রকাশক নিহত ফয়সাল আরেফিন দীপন) বাবার মতো আমিও বিচার চাই না। আমি নিশ্চিত জানি টুটুলের স্ত্রী, দীপনের স্ত্রী, অনন্তের বোন, রাজিব, বাবু, নীলয়ের বন্ধুরাও আর বিচার চান না।”

রাফিদা এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি টিএসসি সামনে হামলায় নিহত হন অভিজিৎ। এ সময় তাঁর স্ত্রী রাফিদাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। হামলায় তিনিও আহত হন।

রাফিদা বলেন, “সরকারের কাছ থেকে কিছু চাওয়ার নেই, আমাদের। একটাই অনুরোধ ওনাদের কাছে, দয়া করে দিনরাত আর “আমরা সেক্যুলার পার্টি” বলে গলা ফাটিয়ে নিজেদের এনার্জি নষ্ট করবেন না।”


বিশিষ্টজনরা যা বলেন

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, “যদি আগের ব্লগার হত্যাকাণ্ডগুলোর বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত, দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া যেত, তাহলে শনিবারের ঘটনা (প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা ও প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরীসহ তিনজনকে হত্যার চেষ্টা) ঘটত না।”

ব্লগার হত্যার বিচারে শৈথিল্যের প্রশ্ন তুলে মিজানুর রহমান রবিবার বলেন, “এই শৈথিল্য নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে। প্রশাসনের মধ্যে ধর্মান্ধ লুকিয়ে আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। থাকলে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

তিনি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা এমন কোনো বক্তব্য দেবেন না, যেটা ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে উৎসাহিত করে।” তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে, এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

গত কয়েক বছরে যেসব গুপ্ত হত্যা হয়েছে, সেগুলোর একটিরও বিচার না হওয়ার কথা উল্লেখ করে লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশা করা দুরাশামাত্র। এটি রাষ্ট্রের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি জনগণের জন্যও ক্ষতিকর।”

রাষ্ট্র ফেল করেছে—মন্তব্য করে অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে বিচার চাই না। কেননা এ দেশ পরিচালিত হচ্ছে একটি ত্রিভুজের মাধ্যমে, যার এক মাথায় সাম্রাজ্যবাদ। এক বাহুতে জামায়াতে ইসলামী, আরেক দিকে ১২৩টা জঙ্গি সংগঠন আর মৌলবাদের অর্থনীতি। যাঁদের কাছে বিচার চাইব, তাঁরাই ওই ত্রিভুজ পরিচালিত ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যাঁরা বিচার চাইছেন, তাঁরাও জানেন বিচার পাবেন না।”


গণজাগরণ মঞ্চের হরতাল

প্রকাশক ফয়সল আরেফিন হত্যা এবং প্রকাশক আহমেদুর রশীদ, লেখক রণদীপম বসু ও কবি তারেক রহিমকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে এবং দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মঙ্গলবার সারা দেশে আধা বেলা হরতাল ডেকেছে গণজাগরণ মঞ্চ।

“এ দেশে বিচার পাওয়া যাবে না—কথাটি যখন অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়, তখন আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু যখন একে একে অনন্ত দাস, নীলাদ্রি থেকে শুরু করে পীর-মাশায়েখদের পর্যন্ত হত্যা করা হচ্ছে, গণমাধ্যমকর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তখন বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়,” বেনারকে জানান গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

তিনি বলেন, ‘আজকে যদি কেউ মনে করে থাকেন, আমি তো নিরাপদেই আছি, তাঁদের বলতে চাই, কদিন পর আপনার সন্তানকেও যে আইলানের মতো বঙ্গোপসাগরের বুকে ভাসতে হবে না, সে কথা কেউ বলতে পারবে না।’

ইমরান বলেন, ‘সরকারকে বলব, আপনাদের রাজনৈতিক দলগুলো এখন কোথায়? একের পর এক মানুষ হত্যা হচ্ছে, তবে কি ধরে নেব, আপনারা হত্যাকারীদের পক্ষে আছেন। তা না হলে আপনাদের রাজনৈতিক দলগুলো কেন রাজপথে নেই?’


প্রকাশকদের কর্মসূচি

জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারীকে হত্যা এবং শুদ্ধস্বরের কর্ণধারসহ আরও তিনজনের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারা দেশে বই বিক্রি বন্ধ রাখে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। প্রতিবাদ স্বরুপ কিছু বই তারা পুড়িয়ে দেয়।পাশাপাশি তিন দিন শোকও পালন করবেন ব্যবসায়ীরা।

“এর আগে লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে। এখন তাঁর বইয়ের প্রকাশক দীপনকে হত্যা করা হয়েছে, আরেক প্রকাশক টুটুলকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। এ অবস্থা চললে মুক্তচিন্তার বই প্রকাশ হবে না,” জানান  কমিটির সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন।


কেউ নিরাপদ নয়

এসব ঘটনার পর বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ বারবার বলছেন, জঙ্গিদের থামাতে না পারলে কেউই আর নিরাপদ নয়। কিন্তু সবগুলো ঘটনা নিয়ে পুলিশ বা গোয়েন্দারা একরকম অন্ধকারে আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিরা জড়িত। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে গ্রেপ্তার বা শাস্তির মুখোমুখি করতে পারছে না।  

“এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলো এগিয়ে আসত। কিন্তু শিক্ষক সমিতিগুলোও শিক্ষকদের রাজনৈতিক বিভক্তি ও ব্যক্তিস্বার্থের কারণে অনেকটাই অকেজো হয়ে পড়েছে। এখন তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। শুধু ফেসবুকে থাকলে হবে না, প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামতে হবে,” বেনারকে জানান নিহত ব্লগার অভিজিতের বাবা প্রবীণ অধ্যাপক অজয় রায়।

তিনি বলেন, শিক্ষকদেরও দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে মাঠে নামতে হবে। যে পরিস্থিতির দিকে দেশ যাচ্ছে, তাতে কেউই এখন আর নিরাপদ নয়।


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।