ফিরিয়ে আনা হল পাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়া ১৫০ বাংলাদেশিকে
2015.06.08
পাচারকারীদের নৌকায় করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টার পথে মিয়ানমারের উপকূল থেকে উদ্ধার হওয়া দেড়’শ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে এনেছে বিজিবি।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে তারা দেশে প্রবেশ করেন। তার আগে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পর বেলা ১টা ৫৩ মিনিটে ঘুমধুমের বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতু দিয়ে ৩০ জনের প্রথম দলটি দেশে প্রবেশ করে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ (বিজিপি)।
গত ২১ মে মিয়ানমার উপকূল থেকে অভিবাসন প্রত্যাশী ২৮৪ জনকে উদ্ধার করে দেশটির নৌবাহিনী । তাদের ঢেকিবুনিয়া ১নং মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) ব্যাটালিয়নে রাখা হয়।
বিজিবি ১৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলমের নেতৃত্বে পুলিশ, ইমিগ্রেশন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দশ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল পতাকা বৈঠকে অংশ নেন। মিয়ানমারের পক্ষে অংশ নেয় বিজিপি, দেশটির ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা।
মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন বিভাগের উপ পরিচালক সনাইং ওই বাংলাদেশিদের দায়িত্ব কক্সবাজার বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. খালেকুজ্জামানের হাতে বুঝিয়ে দেন।
বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, এই দেড়’শ জন ১৭ জেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে ৫৫ জন নরসিংদীর এবং ৩৪ জন কক্সবাজার জেলার।
উদ্ধারের পর থেকে এদের মধ্যে ২০০ জন বাংলাদেশি রয়েছে বলে দাবি করে মিয়ানমার। কিন্তু মিয়ানমারের পাঠানো তালিকা ‘বিভ্রান্তিকর’ ও ‘অপূর্ণাঙ্গ’ উল্লেখ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গত শনিবার নতুন তালিকা পাঠায় মিয়ানমার। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সে তালিকা যাচাই করে দেড়’শ জনকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে শনাক্ত করেন। তালিকা মিলিয়ে দেড়’শ বাংলাদেশিকে সোমবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্নেল খালেকুজ্জামান।
ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশিদের প্রাথমিকভাবে নাইক্ষ্যছড়ির ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে পুলিশে হস্তান্তরের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বেনারকে জানান, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের কক্সবাজারের পুলিশ যাচাই বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ টেলিফোনে জানান, ছয়টি বাসে করে ১৫০জনকে কক্সবাজারের একটি কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। সেখানে গিয়ে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাচারকারীদের বিষয়ে তথ্য জানতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সহায়তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথা সম্ভব কম সময়ে মিয়ানমারে আটক বাংলাদিশদের ফেরত এনেছে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার মহাপরিচালক আসুদ আহমেদ বেনারকে বলেন, “কূটনৈতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে মানবপাচার বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন করে তুলতে হবে।”
তিনি বলেন, “লোভে পড়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে পাচারকারীদের হাতে পড়ে সর্বস্ব এমনকি জীবন হারনোর বিষয়টি জনগণকে আরো ব্যাপকভাবে জানাতে হবে। সচেতন করে তুলতে হবে। অল্প মুলধনে দেশেই ভাল উপার্জন করা সম্ভব সে বিষয়েও তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রসাশনকে কাজে লাগানো যেতে পারে।”
আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য নিহত
কক্সবাজারের টেকনাফে মানবপাচারকারী কয়েকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এক মানবপাচারকারী নিহত হয়েছে। নিহত আমান উল্লাহ আনু আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা আছে বলছে পুলিশ।
সোমবার ভোরের দিকে টেকনাফ থানাধীন আলীখালী গ্রামের লবনের মাঠে কয়েকজন মানবপাচারকারী টাকাপয়সা লেনদেন নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। একপর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে একটি লাশ উদ্ধার করে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি আতাউর রহমান খোন্দকার বেনারকে জানান, উদ্ধার হওয়া লাশটি নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের আমান উল্লাহ (৩০) আনুর বলে সনাক্ত করা হয়। সে এলাকার বেকার যুবকদেরকে ফুসলিয়ে সাগর পথে মানবপাচার করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলাও আছে।