ব্লগার অনন্ত হত্যাকারী সন্দেহে ফটোসাংবাদিক আটক, পৃথক ঘটনায় ৯ জঙ্গি গ্রেফতার
2015.06.08
ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসাবে সিলেটের স্থানীয় একটি পত্রিকার এক ফটো সাংবাদিককে গ্রেফতার করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একই দিন রাজধানী ঢাকায় জঙ্গি সন্দেহে নয়জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ইদ্রিস আলী (৩০) নামে সবুজ সিলেট পত্রিকার আলোকচিত্রীর বিরুদ্ধে পুলিশ বলছে আটক জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে দাবি পুলিশের।
সোমবার ভোরের দিকে সিলেট শহরতালীর সাহেব বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সিআইডির বিশেষ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকি।
তবে ইদ্রিসের পরিবারের দাবি বাসা থেকে নয়, রোববার রাতে সিলেট শহর থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। পরে রাতে বাসায় তল্লাশি চালায় সিআইডি সদস্যরা।
১২ মে প্রকাশ্য নগরের বনকলাপাড়া দিঘীরপাড় এলাকায় অনন্ত বিজয় দাশকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে বিমনবন্দর থানায় মামলা (নং-১২(৫)১৫) দায়ের করেন।
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ঢাকা জোনের পরিদর্শক আরমান আলী সোমবার বিকালে ইদ্রিসকে সিলেটের মহানগর হাকিম আমলি আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে শুনানি শেষে সাত দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক।
আদালতে দাখিল করা পুলিশ পরিদর্শক আরমান আলীর আবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে ইদ্রিস আলী অনন্ত হত্যার ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত। সে একজন জঙ্গি অপরাধী চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ইদ্রিসের স্ত্রী মিতা বেগম বেনারকে বলেন, “রোববার অফিসে যাওয়ার পর আমার স্বামী আর ফেরেননি। পরে রাত ২টার দিকে সিআইডি পুলিশ আমার বাসা তল্লাশি করে। এসময় তারা ইদ্রিসকে গ্রেফতারের কথাও জানায়”।
ইদ্রিসের সঙ্গে জঙ্গি চক্রের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, “সেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তিনি কেবলই একজন ফটো সাংবাদিক। এর বাইরে তার কোন পরিচয় নেই। পুলিশের নিশ্চয় কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। অথবা পুলিশকে ভুল তথ্য সরবারহ করা হচ্ছে।”
সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল্লাহেল বাকি “সন্দেহভাজন হিসাবে ইদ্রিসকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যাবে আমাদের ধারণা। এ কারণে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।”
বিমানবন্দর থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল আলম প্রথমে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেলেও হত্যাকারীদের কেউ গ্রেপ্তার বা শনাক্ত না হওয়ায় ১৪ দিনের মাথায় তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে।
‘জঙ্গি’ আটক
ডিবি পুলিশ জানায়, রোববার রাতে রাজধানীর বনশ্রী ও সূত্রাপুর থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সন্দেহভাজন নয় সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
আটকরা হলেন- কাজী ইফতেখার খালেদ ওরফে খালেদ, ফাহাদ বিন নুরুল্লাহ কাশেমী ওরফে ফাহাদ, মো. রাহাত, দ্বীন ইসলাম, আরিফুল করিম চৌধুরী ওরফে আদনান, মো. নুরুল ইসলাম, মাওলানা নুরুল্লাহ কাশেমী, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. ইয়াসিন আরাফাত।
আটকের পর সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, এদেশে আইএসের আদলে ‘বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ’ নামের একটি জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছে একটি গ্রুপ। আটকৃতরা সেই গ্রুপটির সক্রিয় সদস্য। দলীয় তহবিল সংগ্রহের জন্য তারা ঢাকা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের একটি ব্যাংকে ডাকাতির পরিকল্পনাও করেছিল।
তাদের সঙ্গে আর কোন জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা বা কারা তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে বলেও ব্রিফিংয়ে জানান তিনি।
কিছুদিন আগে সাভারের আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকে রোমহর্ষক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যারা আগে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য ছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
বাংলাদেশে কিছুদিন পরপরই এভাবে জঙ্গি আটকের দাবি করে পুলিশ। আটকের পর তাদেরকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়। তবে তাদেরকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করার কোন সুযোগ সাংবাদিকদের থাকে না।
জঙ্গি তৎপরতা ও উগ্রপন্থি কর্মকাণ্ডের কারণে হুজি, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা ও হিযবুত তাহরীর এবং আনসারুল্লাহ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার।
২০০৫ সালে জেএমবিসহ চারটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে সরকার। ২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়।
সর্বশেষ গত ২৫ মে নিষিদ্ধ করা হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে, যাদের সঙ্গে আল কায়েদার যোগাযোগ রয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা স্বীকার করে থাকে। তবে গোয়েন্দাদের কাছে এ বিষয়ে তেমন কোন তথ্য নেই