এবার শিশু হত্যায় পুলিশ সদস্যসহ তিনজনের ফাঁসি
2015.11.30
এবার বাংলাদেশে আরেক শিশু আবু সাঈদ হত্যা ও অপহরণ মামলায় একজন পুলিশ সদস্যসহ তিনজনকে ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়া ও ৩০২/৩৪ ধারায় হত্যার দায়ে দু'বার করে ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন আসামিরা।
সোমবার সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন। যিনি পরদিনই (০১ ডিসেম্বর) সর্বশেষ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করে অবসরে যাবেন। ঘটনার আট মাস পরে হলেও অভিযোগ গঠনের পর মাত্র সাত কার্য দিবসে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। যা বিচার বিভাগে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন বিচার সংশ্লিষ্টরা।
শিশু সাঈদ হত্যায় দণ্ডিতরা হলেন সিলেট বিমানবন্দর থানার বরখাস্ত পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুল, সিলেট জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওরফে আব্দুর রাকিব ও পুলিশের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা। তবে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় আরেক অভিযুক্ত ওলামা লীগ নেতা মাহিব হোসেন মাসুমকে খালাস দেওয়া হয়। এছাড়া দণ্ডিতদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় আসামিরা সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়া আলোচিত সিলেটের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা ও খুলনায় শিশু রাকিব হত্যা চেয়েও এ মামলার বিচার দ্রুত শেষ হলো বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
মামলার সরকারপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক বলেন, সিলেটের অপর শিশু রাজন ও খুলনার খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলার চেয়েও দ্রুততম সময়ে নিষ্পন্ন হলো স্কুলছাত্র শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলার বিচার।
সন্তুষ্ট পরিবার
সাঈদ হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে শিশুটির পরিবার। এ রায় ‘এ রায় প্রত্যাশিত’ উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শিশুটির বাবা আবদুল মতিন বলেন, “রায়ে আমি সন্তুষ্ট। তবে আমরা দ্রুত রায় কার্যকর চাই।”
আর “এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে” বলে মন্তব্য করেন সাঈদের মামা আশরাফুজ্জামান আযম।
সিলেট নগরীর রায়নগর শাহ মীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কাবেরি রাণী দে বলেন, “সাঈদ আমাদের স্কুলের একজন মেধাবী ছাত্র ছিলো। তাকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের ফাঁসির রায় হওয়ায় আমরা খুব খুশি। এখন চাই দ্রুততার সঙ্গে তা যেন কার্যকর করা হয়।”
‘সকল শিশু নির্যাতনের বিচার করতে হবে’
শুধু আলোচিত শিশু হত্যাকান্ড নয়, সকল শিশু নির্যাতনের দ্রুত বিচার করতে হবে বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা।
এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বেনারকে বলেন, “রাজন, রাকিব হত্যা মামলার মত দ্রুতগতিতে শিশু সাঈদ হত্যার বিচার সম্পন্ন হওয়া নিশ্চয় বিচার বিভাগের জন্য দৃষ্টান্ত, কিন্তু সামান্য কয়েকটি আলোচিত হত্যাকান্ডের জন্য নয় এমন দ্রুততা থাকতে হবে দেশের প্রতিটি বিচারে। প্রত্যেক শিশু নির্যাতনের ঘটনায়।
এসময় তিনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলির মামলার আসামি সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের জামিনে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, “সরকার দলীয় বলে কোন আসামি যেন বিচার থেকে ছাড় না পায়। ‘হত্যাকান্ড’ নয় বলে শিশু সৌরভ যেন বিচারহীনতায় না ভোগে। যখন সকল নিপীড়িত দ্রুত আইনের সেবা পাবে, তখনই এদেশের বিচার বিভাগ অনুকরণীয় হয়ে উঠবে।”
সাঈদ হত্যা
মামলার নথি থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ১১ মার্চ অপহৃত হয় সিলেট নগরীর শাহ মীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আবু সাঈদ।
পরে অপহরণকারীরা তার পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর ১৪ মার্চ রাতে নগরীর ঝর্নার পাড় সুনাতলা এলাকার একটি বাসা থেকে সাঈদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পরদিন সাঈদের বাবা আব্দুল মতিন কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।
এরপ্রায় ছয়মাস পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এর মধ্যে তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। গত ১৯ নভেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে ২৬ নভেম্বর শেষ হয়। ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের জবানবন্দি শুনেছে আদালত।