সাধারণ ক্ষমা পাচ্ছেন ওমানের অবৈধ বাংলাদেশিরা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.04.16
BD-oman ওমানের মাস্কাটে একটি গাড়ির গ্যারেজে কাজের ফাকে অবসর কাটাচ্ছে কিছু অবৈধ পাকিস্তানি শ্রমিক। সেখানে অনেক বাংলাদেশিও অবৈধভাবে থাকছে। ছবিঃ ১৩ নভেম্বর, ২০০৩
এএফপি

অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমার সুযোগ দিয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ ওমান। এই সুযোগে দেশটিতে কর্মরত অবৈধ হাজার হাজার বাংলাদেশিরা দেশে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই সাধারণ ক্ষমতার সুযোগ বহাল থাকবে। ওমান ফেরত শ্রমিকরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর আবারও দেশটিতে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে।

ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সিকান্দার আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বেনার নিউজকে বলেন, “আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ওমান অবৈধ সকল শ্রমিকের জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা করেছে। ওমানে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিরাও এই সুযোগ নিয়ে দেশে ফিরতে পারবে।”

একই কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। সম্প্রতি ওমান সফর করা এই মন্ত্রী জানান, “ওমান সরকার দেশটিতে কর্মরত অবৈধ বাংলাদেশিদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে।”

প্রায় পাঁচ বছর পর সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা সুযোগ দিচ্ছে ওমান। এর আগে ওমান ২০০৯-১০ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল।

দেশে ফেরার জন্য ‘মুখিয়ে’ থাকা অবৈধ শ্রমিকদের জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই তারা অভিবাসীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া হালনাগাদ করা শুরু করেছে বলেও জানা যায়। ইতিমধ্যে দূতাবাসে শ্রমিকরা যোগাযোগও শুরু করেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওমানে অবৈধ বাংলাদেশিদের সংখ্যা ৪০ হাজারের ওপরে বলা হলেও মূলত এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর একেএম রবিউল ইসলাম বেনারকে বলেন, “অবৈধদের সঠিক সংখ্যা আমাদের জানা নেই। ওমান কর্তৃপক্ষও নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা জানায়নি। তবে ওমান সরকারের এই সাধারণ ক্ষমার ফলে কোন অবৈধ শ্রমিক বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবে না। তবে তারা বিনা দন্ড এবং জরিমানায় দেশে ফিরতে পারবেন। আশা করছি এবার ১৫ থেকে ২০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক এ সুযোগ নিয়ে দেশে যাবেন। এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। কমপক্ষে তিন বছর পরে তারা আবারও ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ওমানে ফিরতে পারবেন।”

এসব শ্রমিকদের দেশে ফেরার ফলে ওমান থেকে রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমান কমে আসবে না বলেও তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে সাত থেকে আট হাজার বাংলাদেশি ওমানে আসছে। দেশটির অর্থনীতির আকারও উল্লেখযোগ্য রকম ভাল। এখানে যথেষ্ঠ কাজের সুযোগও আছে। তাই কিছু শ্রমিক ফিরলেও রেমিটেন্সে এর প্রভাব পড়বে না।”

জানা যায়, দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে 'ট্র্যাভেল পাস' সংগ্রহের পরই তা নিয়ে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে দেশ ত্যাগের অনুমতি পাবেন অবৈধ অভিবাসীরা।

ওমানে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিক মো. ইকবাল বেনারকে বলেন, “দুই বছরের ভিসা নিয়ে এসেও ওমানে  সাত বছর পার করছি। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পাঁচ বছরই কাটিয়েছি অবৈধভাবে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে। অনেকবার দেশে ফিরতে চেয়েছি। কিন্তু জেল জরিমানার ভয়ে ফিরতে পারিনি। এবার দেশে ফিরতে চাই।”

সাতক্ষীরা জেলার এ বাসিন্দা বলেন, “দেশে ফিরেই সিদ্ধান্ত নেব আবার প্রবাস জীবনে ফিরব কিনা। নিতান্তই যদি ফিরতে হয় তবে তিন বছর পর আবারও ওমানেই আসার চেষ্টা করব।”

উপসাগরীয় দেশগুলো সাধারণত অবৈধ বিদেশি কর্মীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে কোনো জরিমানা ছাড়াই দেশ ছাড়ার অনুমতি দেয়। কিছুদিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতও দেশটিতে থাকা অবৈধ শ্রমিকদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেয়।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে,  সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওমানে অর্থনীতির আকার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। দেশটিতে ব্যাপক হারে গেছে বিদেশি শ্রমিক। এই সাধারণ ক্ষমা ওমানে দেশটির সরকার 'ওমানীকরণ' (ওমানের নাগরিকদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি) নীতির অংশ বলেও মনে করা হচ্ছে।

দেশটিতে বিদেশিদের বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি কর্মী কমাতে সাম্প্রতিক সময়ে এ ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ৩৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৩ শতাংশে নামানোর উদ্যোগ নেয় ওমান সরকার।

বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, এই মুহুর্তে ওমানে বিদেশি কর্মীদের সংখ্যা ১৪ থেকে ১৫ লাখ। অথচ দেশটিতে ওমানী আছে ৩৮ লাখ। জনশক্তি সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি।

এছাড়া ওমানে অবৈধ হয়ে পড়া শ্রমিকরা নানা অপরাধ মূলক কাজে জড়িত হয়ে পড়াও সাধারণ ক্ষমার ঘোষণার অন্যতম কারণ বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
দেশটিতে বিদেশি কর্মীদের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিক পাঠানোর দিক থেকে ওমান  বর্তমানে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক শ্রমবাজার।

কিছুদিন আগেও কুয়েত কিংবা কাতার থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের সঙ্গে ওমান থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের মধ্যে বিরাট পার্থক্য থাকলেও সাম্প্রতিককালে এ পার্থক্যও কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুমাসে কুয়েত থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমান ১৬৭.৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে ওমান থেকে আসা রেমিটেন্স ১৪৭. ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

১৯৭৬ সালে ১১৩ জন দিয়ে দেশটিতে শ্রমিক যাওয়া শুরু হলেও ২০১৪ সালে ওমানে গেছে এক লক্ষ পাঁচ হাজার সাতশ ৪৮ জন বাংলাদেশি শ্রমিক।
চলতি মাসে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ওমান সফরে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়মিত পরামর্শ বৈঠক (এফওসি) অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।  সফরে ওমানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন শাহরিয়ার আলম। একইসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আরো দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিক ও পেশাজীবীকে ওমানে পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।