রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে সচিবদের ব্যতিক্রমধর্মী চুক্তি সই

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.09.22
BD-pm সরকারের বার্ষিক কর্ম-পরিকল্পনার কর্মসূচি এগিয়ে নিতে সচিবরা চুক্তিপত্র তুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। ২০ সেপ্টেম্বর,২০১৫
বেনার নিউজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে গত রোববার একটি ব্যতিক্রমধর্মী চুক্তি সই করেছেন বাংলাদেশে বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা, যে চুক্তির মাধ্যমে তাঁরা আগামী এক বছরে যেসব কাজ সম্পাদন করবেন তার একটি সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করেছেন।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো একটি দক্ষ, কার্যকর ও গতিশীল প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীনে বাস্তবায়ন করতে ৪৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবেরা এতে সই করেন।

“৪০ জন সচিব এই চুক্তিতে সই করেছেন। বাকিরা বিদেশে আছেন বা হজ করতে গেছেন,” বেনারকে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।

তিনি বলেন, প্রতি ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করে  সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে প্রণীত পরিকল্পনার আওতায়  দ্বিতীয় বছর এ চুক্তি সই হলো।

“এ চুক্তির অধীনে সচিবেরা প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে গৃহীত উদ্যোগগুলো প্রক্রিয়াভিত্তিক থেকে ফলাফলভিত্তিক করে তুলবেন,” জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ।


বার্ষিক কৌশলগত লক্ষ্য

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সঙ্গে মন্ত্রীদের অঙ্গীকারের দলিল, ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’। বার্ষিক কৌশলগত লক্ষ্য ও মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনা-কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের সূচকও এটি।

“এটি মন্ত্রণালয়ের প্রকৃত কার্যক্রমের গুণগত ও মাত্রাগত মূল্যায়ন এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতা নিরূপণে ও কাজ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে,” বেনারকে জানান সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ।

তার মতে,  মন্ত্রণালয়ের পক্ষে একজন সচিব চুক্তিতে সই করার ভিন্ন গুরুত্ব আছে।

চুক্তি অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি না হলে শাস্তির ব্যবস্থা আছে কিনা, জানতে চাইলে মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন,  মন্ত্রী বা সচিব যদি কাজের অগ্রগতি দেখাতে না পারেন, তাতে প্রধানমন্ত্রী যদি বিরক্ত হন, সেটাই তো বড় শাস্তি।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা জানায়,  চুক্তি সাক্ষরের ওই অনুষ্ঠানে প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে আরও সক্রিয় এবং আন্তরিক হতে মন্ত্রী ও সচিবদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,  “আপনাদের বাজেট বরাদ্দের কার্যকর ফলাফল দেখাতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে আমরা যদি ব্যর্থ হই, তবে আমাদের রাজনীতির কোনো তাৎপর্য নেই। সে কারণে গ্রামীণ এলাকায় উন্নয়ন কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে হবে।”

বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে সবাইকে শপথগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-সচিবদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “চলতি মেয়াদে আমাদের হাতে মাত্র তিন বছর সময় আছে। আমরা দেশকে এমন অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই, যেখানে জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।”


অগ্রাধিকার ঠিক করে কাজ করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের প্রকল্পগুলোর দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “এপিএ স্বাক্ষরের পর মন্ত্রীদের বসে থাকলে চলবে না। আপনাদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে এখন কাজ শুরু করতে হবে।”

তিনি বলেন, “অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সাফল্য সত্ত্বেও আমাদের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। আমাদের উন্নয়নের গতি জোরালো এবং আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।”

বিগত বছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুসারে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় সরকারি কর্মকর্তাদের তৎপরতার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তাঁরা  এ বছরও  অনুরূপ দক্ষতার স্বাক্ষর রাখবেন।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “বাস্তবমুখী ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কারণেই বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়নসহ অধিকাংশ উন্নয়ন সূচকে আমাদের সক্ষমতায় দেশ এখন সম্মানের আসনে আসীন হয়েছে।”

“সরকারের এই উদ্যোগের ফলে প্রশাসনে একদিকে জবাবদিহি বাড়বে, আরেকদিকে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কাজের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে, ” বেনারকে জানান   মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সংস্কার ও সমন্বয়) নজরুল ইসলাম, যিনি এই চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রগতি  দেখভালকারীদের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।  

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।