জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ার আহ্বান বিশিষ্টজনদের

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.11.17
BD-protest ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে লেখক-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবিদের জঙ্গি বিরোধী প্রতিবাদ সভা। ১৭ নভেম্বর,২০১৫
বেনার নিউজ

জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে অশুভ শক্তি আখ্যা দিয়ে এর বিনাশে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা, যাঁদের অনেকেই সাম্প্রতিক সময়ে হুমকি পেয়েছেন বা স্বজন হারিয়েছেন। এই আহ্বানের পাশাপাশি তাঁরা হতাশা প্রকাশ করেছেন স্বাধীনতার চার দশক পর এই অপশক্তিকে নির্মূল করতে না পারায়।  

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক মানববন্ধনে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, “আসুন, ঐক্যবদ্ধ হই। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।” সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ নামে দুটি সংগঠন যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

কয়েক দিন আগেই জঙ্গিদের হুমকি পাওয়া ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “আমরা কখনো ভাবতে পারিনি যে স্বাধীন এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য বক্তব্য-বিবৃতি দিতে হবে, মুক্তমনাদের আত্মরক্ষার্থে পথ খুঁজতে হবে। কখনো ভাবিনি যে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে।”

“কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাধা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান যখন এ কথা বললেন, তখন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় এ বিষয়ে আদেশ দেবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

একই সঙ্গে ফাঁসির আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর করা আবেদনের শুনানিও আজ বুধবার নির্ধারণ করা হয়েছে।

আনিসুজ্জামান বলেছেন, “আমরা কখনো ভাবতে পারিনি যে স্বাধীন এই দেশে মুক্তমনাদের আত্মরক্ষার্থে পথ খুঁজতে হবে।”

বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের এক খবরে গতকাল মঙ্গলবার বলা হয়, এ বছর ১২ জন ব্লগার বা মুক্তমনা লেখক হুমকির মুখে দেশ ছেড়েছেন। আর হুমকি পেয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন বুদ্ধিজীবী।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও অজয় রায়ও এই হুমকি পেয়েছেন, যাঁরা পুলিশ পাহারায় গতকাল ওই মানববন্ধনে যোগ দেন।মানববন্ধন থেকে জঙ্গিবাদীদের ক্রমবর্ধমান সহিংস তৎপরতার বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানানো হয়।

“মৌলবাদীরা ধর্মের নাম ব্যবহার করে মুক্তমনাদের একের পর এক আঘাত করছে। এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ যে নিষ্ক্রিয়, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অভিজিৎকে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে হত্যা করাটা সে কথাই প্রমাণ করে,” জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অজয় রায়ের ছেলে ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নাগরিক অভিজিৎ রায়কে এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে টিএসসির ওই সমাবেশস্থলের কাছেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

“ফ্রান্সে হামলার পর আমরা দেখলাম, সে দেশের সরকার খুব দ্রুতই সন্দেহভাজন হিসেবে কয়েকজনকে ধরে ফেলল। অথচ বাংলাদেশে মুক্তমনাদের হত্যায় সরকার কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি,” বললেন অজয় রায়, যিনি পুত্র হত্যার বিচার দাবি করে যাচ্ছেন।

“যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য মুক্তমনাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। দলমত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে এদের প্রতিহত করতে হব,” জানান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সরোয়ার আলী।

ওই মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অনেকেই সাম্প্রতিক সময়ে দুই বিদেশিকে হত্যা, একজন প্রকাশককে হত্যা ও আরেকজনকে হত্যার চেষ্টা, দুই পুলিশকে হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনার কথা উল্লেখ করে এগুলো বন্ধ করতে না পারায় সরকারের সমালোচনা করেন।

“বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চার ওপর বারবার আঘাত এলেও এই অপশক্তিকে গ্রেপ্তারে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেই,” বলেন সাংবাদিক আবেদ খান। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

গত ৬ নভেম্বর ‘এ মানা যায় না, কিছুতেই না’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে আবেদ খান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে লিখেছেন, “হামলার ঘটনা যদি বিচ্ছিন্নই হয়, তাহলে তা সুপরিকল্পিত হবে কীভাবে? আর যদি সুপরিকল্পিতই হয়, তাহলে তা বিচ্ছিন্ন হল কী করে? এই সমন্বয়হীন পূর্বাপর অসঙ্গতিসম্পন্ন বক্তব্য প্রদান কিন্তু অস্থিরচিত্ততা ও বিচলিত হয়ে পড়ার লক্ষণ, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।”

“জঙ্গিবাদ শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়। প্যারিসে জঙ্গিদের হামলা প্রমাণ করে, এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। তাই জঙ্গিবাদীদের পরাজিত করতে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে,” জানান নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।