ঢাকার যানজট নিরসনে পাতাল রেল নির্মাণে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক
2015.10.30
অসহনীয় যানজট কমাতে ঢাকায় মেট্রোরেলের পাশাপাশি পাতালরেল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার এবং এই প্রকল্পে অর্থায়ন করতে আগ্রহ দেখিয়েছে বিশ্বব্যাংক। পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর পর বিশ্বব্যাংক গত দুই বছরের মধ্যে বড় কোনো প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দিল।
বিশ্বব্যাংক এই প্রস্তাব দেওয়ার পর এ বিষয়ে সমীক্ষা চালানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
“বিশ্বব্যাংক পাতাল রেল প্রকল্পে অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে। খুব শিগগির সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি হবে,” গত বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে এ কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মতো এটিও একটি স্বপ্নের প্রকল্প হবে। এতে করে মূল শহরে বিদ্যমান যানজট একেবারেই কমে আসবে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরের তীব্র যানজটে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ছোটখাটো উদ্যোগ বা প্রকল্প নেওয়া হলেও যানজট পরিস্থিতির দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছে না।
“এটা নিঃসন্দেহে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। কলকাতায়ও পাতাল রেল আছে। ঢাকার মতো মেগাসিটিতে বেশ আগেই এমন রেল যোগাযোগ স্থাপন করা উচিত ছিল, বেনারকে জানান নুরুল আমিন (৪২) যিনি ঢাকার একটি বড় শিল্পগ্রুপের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন।
বিশ্বব্যাংক অর্থ দেবে
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে সভা করেন সফররত বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাইল পিটারস। সাক্ষাতের আগে দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে তিনি আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের অফিস থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পৌঁছান। এ সময় তিনি জানতে চান, এ অতিথি ভবনের অবস্থান রাজধানীর এক প্রান্তে কি না।
এর পরে পরিকল্পনা মন্ত্রীকে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন রেখে বলেন, “আমরা যেখানে (যমুনা) বৈঠক করছি এটা ঢাকার কোথায়? ঢাকা থেকে কি অনেক দূরে?”
পিটারের কথার জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “যমুনা ঢাকার বাইরে নয় এটি ঢাকার প্রাণ কেন্দ্রে। আগারগাঁও ও যমুনা দুটি স্থানই ঢাকার প্রাণ কেন্দ্রে”।
এর পরে কাইল পিটারস আবারও বলেন, “আমি তো জানি বিশ্বব্যাংকের আগারগাঁও অফিস ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে। তাহলে রাজধানীর এক প্রাণকেন্দ্র থেকে অপর প্রাণকেন্দ্রে আসতে কেন কয়েক ঘণ্টা লাগল?”
এর পরে পিটার কাইল বলেন, ‘ঢাকার যানজট দূর করতে হলে শুধু মেট্রোরেল দিয়ে হবে না পাতাল রেলও চালু করতে হবে।’
এর পরে পরিকল্পনা মন্ত্রী কাইলকে বলেন, আপনি যদি অর্থায়নে নিশ্চয়তা দিতে পারেন তবে ঢাকায় পাতালরেল প্রকল্প হাতে নিতে পারি!
পরিকল্পনা মন্ত্রীর কথার উত্তরে কাইল বলেন, হোয়াই নট! ওয়ার্ল্ড ব্যাংক উইল বি সাপোর্ট দিজ প্রজেক্ট!
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গল্পটি শোনার পরে প্রকল্প তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভার পর পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “নির্দেশনা অনুযায়ী, আমরা খুব শিগগিরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দিয়ে একটি সমীক্ষা চালাব। সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি করব।”
নির্মাণাধীন মেট্রো রেলসহ চলমান যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি পাতাল রেল প্রকল্পও চলবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে মেট্রো রেল চালুর জন্য বর্তমানে ভূতাত্ত্বিক জরিপ চলছে।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা লাগবে, যার ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা—জাইকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার জোগান দেবে সরকার।
ঢাকায় পাতাল রেল প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “পাতাল রেলের বিষয়ে আমরা ভারতের সহায়তা নেব। কারণ কলকাতায় পাতাল রেল আছে। কলকাতার সঙ্গে আমাদের ঢাকার মাটির অনেক মিল রয়েছে।”