মাইক্রোবাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় দুইজন গ্রেফতার

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.05.27
BD-rape বৃহস্পতিবার রাতে মাইক্রোবাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় আটক দুই আসামীকে বুধবার এভাবেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি করে র্যাব। ২৭মে, ২০১৫
বেনার নিউজ

রাজধানী ঢাকায় মাইক্রোবাসে তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।  আশরাফ ওরফে তুষার (৩৫) ও জাহিদুল ইসলাম লাভলু নামে দুজনকে (২৬) কুয়াকাটা ও ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তারা ধর্ষণের ঘটনার পরিকল্পনাকারী। দুজনেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে বলে জানিয়ে নিশ্চিত করেছেন র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও জব্দ করা হয়েছে।

বুধবার মাহমুদ খান জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে তুষারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজধানীর গুলশান-১ এলাকা থেকে  গ্রেপ্তার করা হয় লাভলুকে।

গত বৃহস্পতিবার রাত নটার দিকে কাজ থেকে ফেরার পথে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষারত এক তরুণীকে জোর করে তুলে নিয়ে, অস্ত্রের মুখে চলন্ত মাইক্রোবাসে মেয়েটিকে দেড় ঘণ্টা ধরে গণধর্ষণ করে পাঁচ যুবক। পরদিন দুপুর পর্যন্ত তিন থানা ঘুরে শেষে ভাটারা থানায় মামলা করতে সক্ষম হয় ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবার।


চাকরির প্রলোভনে ধর্ষণ:

গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে গণমাধ্যমের সম্মুখেও আনা হয়। সেসময়  র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক জানান, গত ১৭ মে তুষার দুই আফ্রিকান ক্রেতাসহ যমুনা ফিউচার পার্কে টেক্সমার্ট ফ্যাশন হাউসে যান। সেখানে ওই তরুণী কাজ করেন। তুষারের সঙ্গে ওই তরুণীর কথা হয়। একপর্যায়ে তুষার তাকে চাকরির প্রলোভন দেখান। এভাবে তিন দিন ওই তরুণীর সঙ্গে কথা হয়।

ঘটনার দিন গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে নয়টার দিকে ওই তরুণীকে ফোন করেন তুষার। কাজ শেষ হওয়ায় তরুণী বেরিয়ে আসলে সড়কে মাইক্রোবাসের সামনে দাঁড়িয়ে তুষার ও লাভলু ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে তুষার ওই তরুণীর গন্তব্য উত্তরায় তাকে পৌঁছে দেওয়ার কথা বললে তিনি রাজি হননি। তখন জোর করে তরুণীকে মাইক্রোবাসে তোলেন তারা।

তুষার ও জাহিদুলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ খানের দেওয়া ভাষ্য, তরুণীকে গাড়িতে তুলেই লাভলু গাড়িটি চালাতে শুরু করেন। তখন তুষার প্রথমে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে তুষার গাড়ি চালান, লাভলু এসে ধর্ষণ করেন।

তুষারের ভাষ্য, তারা ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন ১৮ তারিখ। এ সময় ফিরোজ নামের আরেক গাড়িচালক তাদের সঙ্গে ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। তবে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালকের দাবি, তুষার এ ঘটনার পরিকল্পনা করেন। এ ঘটনার সঙ্গে তারা দুজনই যুক্ত।

আসামি গ্রেফতার হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এ ঘটনার প্রতিবাদকারীরা। তবে বাকিদেরও গ্রেফতারসহ দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার দাবি জানান তারা। এ ঘটনায় রিটকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. সালমা আলী বেনারকে বলেন, আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনাকে সাধুবাদ জানাই। এটি পজিটিভ দিক। তবে দ্রুত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাকি আসামিদেরও আটক করে উপযুক্ত শাস্তি বিধান করতে হবে। এ ধরনের আসামিদের জন্য এটি উদাহরণ হয়ে থাকে।

নারীপক্ষ, মহিলা পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ব্লাস্ট রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে বিলম্ব কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, অবহেলার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না এবং ধর্ষিতাকে কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। মামলা নিতে অবহেলার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা তিন সপ্তাহের মধ্যে জানাতে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন আদালত।


পুলিশের হয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাফাই

র্যাবের হাতে আসামি আটক হলেও ঘটনার দিন মামলা করা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়ে আসছে। ধর্ষণের ঘটনার পর সেদিন রাত থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত তিনটি থানা ঘুরে মামলা করতে সক্ষম হয় সেই তরুণী ও তার পরিবার। এ বিষয়ে পুলিশের গাফিলতি কেন জানতে চাওয়া হলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের কোন গাফিলতি নয়, বরং মেয়েটির অজ্ঞতার কারণেই তাকে তিনটি থানা ঘুরে মামলা করতে হয়।

ধর্ষণের শিকার তরুণীর সঙ্গে সাক্ষাত শেষে এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য, মেয়েটি ঘুর্ণাক্ষরে বলেনি পুলিশ মামলা নিতে দেরী করেছে। একটু অসুবিধা হয়েছিল, মামল কোন থানায় হবে সে বিষয়টি নির্ধারণ করতে। কারণ, ঘটনা যেখানে ঘটে সেখানকার থানাতেই মামলা করতে হয়। কোন থানায় মামলা করতে যেতে হবে সে বিষয়ে মেয়েটার অজ্ঞতা ছিল। সে এবং তার স্বজনরা একটি-দুইটি থানা ঘুরে সঠিক থানাতেই গিয়েছেল। এতে একটু সময় লেগে যায়। কিন্তু তার পর কোন ধরনের গাফিলতি পুলিশ করেনি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী দাবি করেন, পুলিশ তাকে সহায়তা করেছে বলেই মেয়েটিকে স্বয়ং মন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
পুলিশ আগের পুলিশ নেই দাবি করেন তিনি।


দুঃখজনক মন্তব্য- বললেন সালমা আলী

অ্যাডভোকেট সালমা আলী বেনারকে বলেন, পুলিশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর এমন সাফাই দুঃখজনক। সরকার যখন এমন প্রতিক্রিয়াশীল কথা বলে তখন সাধারণ মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার ক্ষুন্ন হয়।

তিনি একটি পরিসংখ্যান টেনে বলেন, শতকরা ৮৬ ভাগ নারী থানায় যেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না। তারা সেখানে গিয়ে তারা ভিকটিমাইজ হন। তাছাড়া ভিকটিম কিভাবে জানবে কোন থানায় যেতে হয়। তার শাররিক এবং মানসিক অবস্থা মোটেই তখন স্বাভাবিক ছিলনা।
পুলিশ এর দায় এড়াতে পারে না। এর জবাবদিহিতা পুলিশকেই করতে হবে।

সেদিনের ধর্ষণের ঘটনায় উত্তরা থানাতেই (যেখানে ধর্ষণের পর মেয়েটিকে ফেলে যাওয়া হয়) মামলা নিতে পারত জানিয়ে সালমা আলী বলেন, উত্তরায় মেয়েকে নামানো হয়েছে। সেখানকার থানা মামলাটি নিতে পারত। তারা সেটা তো করেইনি, এমনকি তাকে নারী বান্ধব যে সাপোর্ট দেওয়া উচিত ছিল সেটাও দেয়নি। এর দায় পুলিশ কোনভাবেই এড়াতে পারে না। কৈফিয়ত তাদেরই দেওয়া উচিত।

ওই তরুণীকে প্রতিবাদী এবং সাহসী আখ্যায়িত করে সালমা আরো বলেন, ওই নির্মম ঘটনার পর শাররিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েও তিনি মামলার করার জন্য কয়েকটি থানা ঘুরেছেন। যেখানে অনেকেই এসব ঘটনা লুকাতে চান, সেখানে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন এই নারী।

এধরনের স্পর্শকাতর মামলা দ্রুত বিচার চেয়ে তিনি বেনারকে বলেন,আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে কোন আসামি যাতে ছাড়া না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া প্রত্যেক থানায় আলাদা নারী ডেস্ক চালু করতে হবে। যেখানে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশদের মাধ্যমে নারীদের সেবা নিশ্চিত হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।