মাদারীপুরে দুই স্কুলছাত্রীকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে খুন

দেশে অব্যাহতভাবে ধর্ষণ ও হত্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবাদের ঝড় বইছে। প্রেসক্লাবের সামনে পরিবার পরিকল্পনা সমিতির মানববন্ধন। ৬ আগষ্ট, ২০১৫
দেশে অব্যাহতভাবে ধর্ষণ ও হত্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবাদের ঝড় বইছে। প্রেসক্লাবের সামনে পরিবার পরিকল্পনা সমিতির মানববন্ধন। ৬ আগষ্ট, ২০১৫ (বেনার নিউজ)

প্রাইভেট পড়তে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে ধর্ষিত, পরে খুন হয়েছে দুই স্কুলছাত্রী, যাঁদের বয়স ১৪ বছরের কাছাকাছি। মাদারীপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে এই পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে।

ওই দুই ছাত্রীর নাম সুমাইয়া আক্তার ও হ্যাপি আক্তার। তারা দুজনই মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং মোস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) বলছে, এ বছর ধর্ষণের পর কমপক্ষে ৪৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আর চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে (গতকাল পর্যন্ত) ধর্ষণের পর খুন হন কমপক্ষে ছয়জন। এদের চারজনই স্কুল পড়ুয়া শিশু।

মাদারিপুর সদর থানা-পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় তারা শিপন শিকদার (১৮) ও রফিক শিকদার (২১) নামের দুই যুবককে আটক করেছে।

“আটক দুই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে,” টেলিফোনে বেনারকে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল মোর্শেদ ।

“সুমাইয়ার শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন থাকলেও হ্যাপির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আজ শুক্রবার লাশ দুটোর ময়নাতদন্ত হবে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগে ধর্ষণের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না,” টেলিফোনে বেনারকে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম রাজীব।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুমাইয়া ও হ্যাপি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে প্রাইভেট পড়তে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়।

অন্যদিকে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, বিকাল চারটার দিকে চারজন যুবক তাঁদেরকে অচেতন অবস্থায় মাদারীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও কর্মচারীরা বলছেন, সুমাইয়া ও হ্যাপিকে নিয়ে যাওয়া যুবকেরা প্রথমে জানায় যে, তারা বিষ খেয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে হ্যাপি মারা যায়। এ সময় ওই চার যুবক হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।

এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে শিপন শিকদার (১৮) ও রফিক শিকদার (২১) নামের দুই যুবক উপস্থিত হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা তাঁদেরকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ওই দুজনকে আটক করে।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে সুমাইয়া মারা যাওয়ার পর দুই পরিবারের সদস্য, স্বজন ও প্রতিবেশীরা খবর পেয়ে হাসপাতালে যান।

সুমাইয়ার বাবা বিল্লাল শিকদার মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডে চা বিক্রির কাজ করেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সুমাইয়া সবার বড়।

“আটক দুই যুবক সুমাইয়াকে উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানিয়েছিলেন,” স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান বিল্লাল শিকদার।

বাবার অভিযোগ, ধর্ষণের পর মুখে বিষ ঢেলে সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়েছে।

“আটক হওয়া রফিক আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি তিনি ইউপি সদস্যকে জানিয়েছিলেন,” সাংবাদিকদের জানান হ্যাপির মা মুক্তা বেগম।

সুমাইয়া ও হ্যাপির মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রাত ৮টার পরে হাসপাতালের উপস্থিত হন ইউপি সদস্য মিন্টু শিকদার।

“দুই পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর আমি শিপনের বাবা কুদ্দুস শিকদার ও রফিকের বাবা কামাল শিকদারকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলাম। আর দুই মেয়ের অভিভাবকদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম,” হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান মিন্টু শিকদার।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানম বেনারকে জানান, “গড়ে প্রতিদিন দুজন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। আমি বলছি যেসব ঘটনা রেকর্ড হচ্ছে তার ভিত্তিতে। অনেক খবরই রেকর্ড হয় না”।

তিনি বলেন, যারা ধর্ষণ করছে তারা জানে টাকা পয়সা খরচ করলে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটালেই পার পাওয়া যায়।