বাংলাদেশে শিয়াদের উপর আক্রমন

ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী
2015.11.30
BD-shia দেশে শিয়াদের মসজিদগুলিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ছবিতে ঢাকার একটি শিয়া মসজিদ। ২৭ নভেম্বর, ২০১৫
এএফপি

বাংলাদেশে শিয়া ও সুন্নির মধ্যে বিরোধের কোনো নজির নেই। বরং শতাব্দিকাল ধরে শান্তিপূর্ণভাবে পাশাপাশি বসবাস করে আসছে।

কিন্তু গত সপ্তাহে বগুড়ার একটি শিয়া মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় গুলিবর্ষণ করে হতাহতের ঘটনায় বিচলিত হয়ে পড়েছে সবাই। বিশেষ করে মসজিদে পরিকল্পিত হামলা এর আগে কখনো ঘটেনি।  এটা ছিলো ৫ সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে শিয়াদের উপর দ্বিতীয় দফা হামলার ঘটনা। অনেকে সন্দেহ করছেন এতে বিদেশের কারো হাত আছে।

দক্ষিণ এশিয়ার শিয়া-সুন্নি নিয়ে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমা বেগম বেনার নিউজকে বলেন, “বগুড়ার আক্রমনে আমরা অত্যান্ত মর্মাহত। এদেশে শিয়া-সুন্নি সম্প্রদায় গত ৫০০ বছর ধরে শান্তিপূর্নভাবে বসবাস করে আসছে”।

তিনি আরো বলেন, “শিয়াদের উপর এই হামলা রাজনৈতিক, এতে আন্তর্জাতিক কোনো নেটওয়ার্ক জড়িত থাকতে পারে। বাংলাদেশের কোনো মানুষের মধ্যে এই ধরনের হামলার বিষয় কারো চিন্তার মধ্যে নেই। হয়তো স্থানীয় কোনো গ্রুপকে উস্কে দিয়েছে বিদেশি কোনো নেটওয়ার্ক”।

এসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, বগুড়ায় এই হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। নামাজ চলাকালে মসজিদের মোয়াজ্জিন মোয়াজ্জেম হোসেন গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং আরো তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

শিবগঞ্জের সুন্নি অধিবাসী মফিজুর রহমান বেনারকে বলেন, “স্থানীয় কোনো লোক এই আক্রমন করে নাই, এখানকার মানুষরা এই নৃশংসতায় দিশাহারা। ইসলাম এধরনের হত্যাকান্ড অনুমোদন করে না”।

তিনি বলেন, “আমরা স্থানীয়রা শিয়া ভাইদের পাশে থেকে তাদের রক্ষা করবো। এই সন্ত্রাসীদের যে কোনো মূল্যে থামাতে হবে”।

পুলিশ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে হামলায় অংশ নেয়া এই ৫ অস্ত্রধারীর সাথে কোনো বিদেশি গ্রুপ জড়িত কিনা।

পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বেনারকে সোমবার বলেন, “আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছি, আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ এই আক্রমনের পেছনে আছে কিনা। আমরা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন নই”।

পুলিশ জিজ্ঞাশাবাদের জন্য স্থানীয় ৩ জনকে আটক করেছে, বেনারকে জানান, শিবগঞ্জ থানার ওসি আহসান হাবিব।


চিন্তার বাইরে

ঢাকায় গত ২৪ অক্টোবর শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে যে হামলা হয়েছিলো যাতে নিহত হয়েছেন দুইজন, আইসিস সেই হামলারও দায় স্বীকার করেছে। এছাড়াও আইএস দুই বিদেশী নাগরিক হত্যারও দায় স্বীকার করেছিলো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বরাবরই বলে এসেছেন, দেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই।

শিয়াদের এক নেতা সিরাজুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “আমাদের চিন্তারও বাইরে বাংলাদেশে এই ধরনের হামলা হতে পারে, এর জন্য আমরা কারো দিকে আঙ্গুল তুলছি না”।

দেশে ৭টি শিয়া মসজিদে স্থানীয় বাসিন্দা সহ পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

সুন্নিদের তুলনায় বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ খুবই কম। এএফপি জানায়, ১৬ কোটি মানুষের দেশে শিয়াদের সংখ্যা আনুমানিক ২২ লাখের মতো।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।