মিনায় হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশি হাজিরা আছেন

বেনার নিউজ প্রতিবেদন
2015.09.24
BD-saudi মক্কায় হজ করতে গিয়ে মিনায় পদপৃষ্ট হয়ে ৭ শতাধিক হাজি নিহত হয়েছেন। ২৪ সেপ্টেম্বর,২০১৫
এএফপি

সৌদি আরবের মিনায় পদদলিত হয়ে এক বাংলাদেশি নারী হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।

নিহত ফিরোজা খানম জামালপুর শহরের হাটচন্দ্রা মোল্লাবাড়ি এলাকার খন্দকার সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। ফিরোজা হাটচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শেষে অবসরে ছিলেন বলে তার ছোট ছেলে খন্দকার ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার মা ও বড় ভাই খন্দকার মোজাহারুল ইসলাম শামীম হজে গিয়েছিলেন। আজ বিকালে ভাই ফোন করে মায়ের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন।”

দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে এখনও পর্যন্ত কেউ নিহত হওয়ার খবর তারা পায়নি। তবে ৮ হাজি আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে দূতাবাস।

সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বাংলানিউজকে বলেন, আহতদের মধ্যে ৮ বাংলাদেশি হাজিকে শনাক্ত করা হয়েছে।  

এদিকে জেদ্দা কনস্যুলেটের কনস্যুলার (হজ) মো. আসাদুজ্জামান জানান, নিহত ও আহতদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তাই এখনও সৌদি কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত তালিকা করেনি। তাই পূর্ণাঙ্গ তালিকা আমরা পাইনি। তবে হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশিরা আছেন। তিনি জানান, মক্কা ও মিনার হাসপাতালগুলোতে খবর নিচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দা মিশন।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ্ প্রথম আলোকে  বলেন, হজে পদদলিত হয়ে নিহতদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি আছেন কি না, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি আছেন কি না তার খোঁজ-খবর নিতে সৌদি দূতাবাসের প্রথম সচিবকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, দূতাবাস থেকে ঘটনাস্থল অনেক দূরে। সেখানকার হাসপাতালগুলোও অনেক দূরে দূরে। হাসপাতালসহ আশপাশের সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় তিনি খোঁজ-খবর নেবেন। বিস্তারিত জানতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে।

এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাঁর ফেসবুকের পাতায় বলেছেন, ‘মিনা হাসপাতালে অবস্থান করা আমাদের এক কর্মকর্তার মতে, মৃতদেহগুলো হাসপাতালে আনা হচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষ কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দেওয়া মাত্রই আমরা স্বজনদের তা জানাব। মিনাতে আমাদের হটলাইন নাম্বার হচ্ছে: +৯৬৬৫৩৭৩৭৫৮৫৯ এবং +৯৬৬৫০৯৩৬০০৮২।’

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে,  পদদলিত হয়ে ফিরোজা খানম  নামে জামালপুরের এক নারী হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে দূতাবাস কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এ ধরনের অনেক খবর আমাদের কাছে আসছে। তবে এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।  
পুরোপুরি তথ্য পাওয়ার পর বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।


নিহতের সংখ্যা ৭১৭

সৌদি আরবের মিনায় পবিত্র হজ পালনকালে আজ বৃহস্পতিবার পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৭১৭ জন হাজির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৮ শতাধিক। সৌদি আরবের সিভিল ডিফেন্সের পরিচালকের দপ্তর এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও আল জাজিরা

সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিচালকের দপ্তর জানিয়েছে, হজের শেষ পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতা মিনার বড় জামারাকে (বড় শয়তান) লক্ষ্য করে কঙ্কর মারতে যাওয়ার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। পদদলিত হয়ে ৭১৯ জন হাজি আহত হয়েছেন।

সিভিল ডিফেন্সের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আহতদের উদ্ধার করে মিনা অঞ্চলের চারটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এখনো উদ্ধার কাজ চলছে। উদ্ধারকাজে চার হাজারের মতো কর্মী অংশ নিচ্ছেন। ঘটনাস্থলে ২২০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদক মিনা থেকে জানিয়েছেন, শয়তানকে পাথর মারতে যাওয়ার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

মিনা থেকে প্রথম আলোর প্রতিবেদক ফেরদৌস ফয়সাল জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে মিনার ২০৪ নম্বর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তীব্র গরম ও হাজিদের তাড়াহুড়োর কারণে এমনটি ঘটেছে। ঘটনাস্থল দেখে তাঁর মনে হয়েছে, বয়স্ক ও নারী হাজিরা দুর্ঘটনায় বেশি হতাহত হয়েছেন। এই সড়কটি মূলত আরব ও আফ্রিকান হাজিরা ব্যবহার করে থাকেন। বাংলাদেশিরা সাধারণত এই সড়কে চলাচল করেন না।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাদেশি হাজির বরাত দিয়ে প্রতিবেদক জানান, এঁদের মধ্যে একজন ভিড়ের মধ্যে পড়ে সামান্য আহত হয়েছেন। তবে পরিবার দুশ্চিন্তা করবে বিবেচনায় তিনি তাঁর নাম প্রকাশ করতে চাননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, প্রায় পাঁচ-ছয় কিলোমিটার ধরে তাঁরা হাঁটছিলেন। তীব্র গরমে বয়স্ক ও নারীদের হাঁটার গতি কমে আসছিল। কিন্তু পেছনের অনেকেই স্বাভাবিক গতিতেই সামনে এগোচ্ছিলেন। এ সময় হুড়োহুড়িতে ওই সড়কের ৮/২০৪ থেকে ১২/২০৪ নম্বর তাঁবুর স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

আল-আরাবিয়া নিউজ চ্যানেলের প্রতিনিধি আবদুল রহমান আল-ওসামি মিনা থেকে জানিয়েছেন, ২০৪ নম্বর সড়কের কাছে জামারাত সেতুর প্রবেশমুখ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটেনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। সড়কে হতাহত হাজিরা পড়ে আছেন।

কেন্দ্রীয় হজ কমিটির প্রধান প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সাল এ দুর্ঘটনার জন্য ‘কিছু আফ্রিকান জাতীয়তার’ হাজিদের দায়ী করেছেন বলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আল-আরবিয়া টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এবার ২০ লাখের মতো মুসলমান হজ পালন করছেন। এর আগেও হজ পালন করতে গিয়ে নানা সময়ে পদদলিত হয়ে হাজিরা মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯০ সালে মক্কায় পদদলিত হয়ে ১ হাজার ৪২৬ জন হাজির মৃত্যু হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে মিনায় (বড় শয়তান) লক্ষ্য করে কঙ্কর ছুড়ে মারার সময় পদদলিত হয়ে ১৮০ জন হাজির মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে মিনায় পদদলিত হয়ে মারা যান ৩৫ জন। ২০০৬ সালে মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় দুর্ঘটনায় ৩৬০ জনের বেশি হাজির মৃত্যু হয়।

এ বছরের ১১ সেপ্টেম্বর হজ চলাকালে মক্কায় মসজিদুল হারামে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ক্রেন ভেঙে পড়ে ১১১ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও ৪০০ জন।





মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।