উলফার শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াকে গোপনে ভারতের কাছে হস্তান্তর

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.11.11
BD-ulfa আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ফাইল ফটো

বাংলাদেশের কারাগারে গত দেড় যুগ ধরে বন্দী উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াকে অনেকটা গোপনে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে  ভারতের  গণমাধ্যম  গতকাল বুধবার  এ বিষয়ে  আগে  খবর প্রকাশ করে।

ওই  খবরের সূত্র  ধরে জানতে  চাইলে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান  প্রথমে সাংবাদিকদের  বলেছিলেন, “এ রকম কোনো খবর নেই।”

পরে তাঁর কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে; তখন তিনি বলেন, “হতে পারে।” এর দেড় ঘন্টা পর তিনি  বিষয়টি  স্বীকার  করেন।

“তাঁর (অনুপ চেটিয়া) সাজা ভোগ আগেই শেষ হয়েছে। তাঁর যাওয়ার বিষয়টির সঙ্গে নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত ছিল। তাই তাঁকে নিরাপদে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে,” বেনারকে জানান আসাদুজ্জামান খান।

তাঁকে ফেরত পাঠানোর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার কোনো সম্পর্ক আছে কি না—জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার সঙ্গে অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। মামলা শেষে ভারত যখন নূর হোসেনকে ফেরত দেবে, তখন তাঁকে আনা হবে।”

অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে বন্দী থাকা বাবুল শর্মা ও শক্তি প্রাসাদকেও ভারতে পাঠানো হয়েছে।  অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানান, বাংলাদেশের কারাগারে থাকা তাঁর দুই সহচর লক্ষ্মীপ্রসাদ গোস্বামী ও বাবুল শর্মাকে নিয়ে তিনি নিজ দেশে ফিরতে চান।

অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করা হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “উনি সীমান্ত পার হয়েছেন। এটুকুই জানি। তবে তিনি বিজিবি-বিএসএফের মাধ্যমেই গেছেন। এটাকে যদি হস্তান্তর বলেন, তাহলে হস্তান্তর হয়েছে।”

উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের  বাতা সংস্থা  প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) জানায়, অনুপ চেটিয়াকে গতকাল  বুধবার  সকালে ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরেও একই কথা জানানো হয়।


১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে অনুপ চেটিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান এবং অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা ও একটি স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়।


পরে তিনটি মামলায় তাঁকে যথাক্রমে তিন, চার ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বাংলাদেশের আদালত। ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজার মেয়াদ শেষ হয়। ২০১২ সাল থেকে তিনি কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন।

অতীতে বিভিন্ন সময়ে অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করার জন্য ওই দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে ২০০৩ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করেন এই উলফা নেতা।

এ কারণে তাঁকে হস্তান্তরে আইনি জটিলতা সৃষ্টি  হয়। দুই দেশের মধ্যে বন্দী প্রত্যার্পণ চুক্তি না থাকার কথাও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। পরে ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্দী প্র্ত্যার্পণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

 

শান্তি আলোচনা গতি পেতে পারে

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের স্বাধীনতার লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় উলফা। এরপর দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র তৎপরতা চালায় সংগঠনটি।

২০০৯ সালের শেষ দিকে উলফার চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাকে বাংলাদেশ থেকে ধরে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ২০১০ সাল থেকে দিল্লিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে উলফার শান্তি আলোচনা চলছে।

ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় বলা হচ্ছে, উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া ওরফে গোলাপ বড়ুয়াকে বাংলাদেশ ভারতের হাতে তুলে দেয়ায় আসামে শান্তি আলোচনা গতি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। উলফার আলোচনাপন্থি নেতারা ভারত সরকারের কাছে বার বার অনুপ চেটিয়াকে ভারতে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে পরেশ বড়ুয়া ও অরবিন্দ রাজখোয়ার পাশাপাশি অনুপও অন্যতম প্রভাবশালী নেতা বলে পরিচিত৷ পরেশ ও অনুপ পরস্পর আত্মীয়৷  এখনো আত্মগোপনে আছেন পরেশ বড়ুয়া৷

এর আগে গত বছরের  ১৪ মে অনুপ চেটিয়ার স্ত্রী মনিকা বড়ুয়া এবং ছেলে বুমনি আকা জুমন (২২) ও মেয়ে বুলবুলি (১৮) ঢাকা ছাড়েন৷ জন ডেভিড সোলায়মান নাম ধারণ করে অনুপ ঢাকার একটি বেসরকারি সংগঠনে (এনজিও) নির্বাহী হিসেবে কাজ করছিলেন৷

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।