দুই যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.10.01
BD-warcrimes দুই যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ১ অক্টোবর,২০১৫
বেনার নিউজ

সাবেক দুই মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার যুদ্ধাপরাধের দণ্ড কার্যকরের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়।

ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক পরোয়ানায় সই করার পর জ্যেষ্ঠ আইন গবেষণা কর্মকর্তা পারভেজ আহমেদের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকজন কর্মী মাইক্রোবাসে করে তা পৌঁছে দেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারের কাছে। লাল সালুতে মুড়ে তা পৌঁছে দেওয়া হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস সাকা চৌধুরী গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দী আছেন। ৬৬ বছর বয়সী এই আলোচিত–সমালোচিত রাজনীতিকের মৃত্যু পরোয়ানা সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে একাত্তরের বদরপ্রধান ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন, যাঁর বয়স এখন ৬৭।

“মুজাহিদকে তাঁর মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে। পরবর্তী প্রক্রিয়া এই কারাগারে সম্পন্ন হবে,” বেনারকে জানান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ (জেলার) নেছার আলম।

আপিল মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক তাদের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন । কারাগার ছাড়াও এই পরোয়ানার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে।

“গত বুধবার রাত ৮টার দিকে আমরা সুপ্রিম কোর্ট থেকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় দুটি পাই। আজ (বৃহস্পতিবার) রায় দুটি ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতি মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন,” জানান ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক ।

তিনি বলেন, “আমাদের দায়িত্ব ছিল আপিল বিভাগের রায় পাওয়ার পর ডেথ ওয়ারেন্টের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। ট্রাইব্যুনালের আদেশে আমরা তা করেছি। ডেথ ওয়ারেন্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছে; তিনিই পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।”

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। আর মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একই বছরের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। তাঁরা দুজনেই ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন।

পরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গত ১৬ জুন মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। একই বেঞ্চ গত ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।

গত বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় দুটি প্রকাশিত হয়।

এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের  মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাঁরা দুজনই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিলেন।

আর জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে জামায়াতের আরেক শীর্ষ নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশিত না হওয়ায় কোনো পক্ষই তা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারেনি।


রিভিউর আবেদনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন ১৫ দিনের মধ্যে। আসামিপক্ষের রায়ের কপি পাওয়া অথবা আসামিকে রায় শোনানোর মধ্যে যেটি আগে হবে, তখন থেকেই শুরু হবে এই দিন গণনা।

নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যু পরোয়ানার ভিত্তিতেই সরকারের তত্ত্বাবধানে কারা কর্তৃপক্ষ সাজা কার্যকরের প্রস্তুতি নেবে। তবে রিভিউ আবেদন হলে তার নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।

রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে পাঠানো হবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করবে।  

“পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি গ্রহণ অথবা পূর্ণাঙ্গ রায়ের সংবাদ পাওয়া, যেটি আগে হবে, তখন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আসামিকে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে হবে,” সাংবাদিকদের জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, এখন যদি মৃত্যু পরোয়ানা আসামিদের পড়ে শোনানো হয়, তাহলে তখন থেকে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার দিনগণনা শুরু হয়ে যাবে। তবে পুনর্বিবেচনার আবেদন গৃহীত হলে মৃত্যু পরোয়ানা ও দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। তবে প্রাণভিক্ষার এই সময় নির্দিষ্ট না করে বলা হয়েছে গ্রহণযোগ্য সময়ের মধ্যে তা হতে হবে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতে এখন ছুটি চলছে। ছুটির মধ্যে রিভিউ আবেদনের শুনানি নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অক্টোবর মাস পার হয়ে যেতে পারে। আবার নভেম্বরের শুরুতে ছুটিতে যাবেন প্রধান বিচারপতি।

এই হিসাব–নিকাশ কষে কারও কারও ধারণা বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে গিয়ে কুখ্যাত এই দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর হতে পারে। তবে বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর।  


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।